ডিনাইট্রিফিকেশন

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:০৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ডিনাইট্রিফিকেশন (Denitrification)  বিশ্বব্যাপী নাইট্রোজেন চক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিভাস। এ প্রক্রিয়ায় নাইট্রেট বা নাইট্রাইট প্রাণরাসায়নিক বিজারণের মাধ্যমে আণবিক নাইট্রোজেন বা নাইট্রোজেনের অক্সাইড (N2O) হিসেবে গ্যাসীয় নাইট্রোজেনে পরিণত হয়। ডিনাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ায় বিজাড়িত জীবগুলো আংশিক অবায়ুজীবী। ডিনাইট্রিফিকেশনের জন্য দায়ী অতি পরিচিত পরভোজী জীব Pseudomonas, Micrococcus, BacillusAlkaligenes গণে অন্তর্ভুক্ত। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বভোজী ব্যাকটেরিয়া Thiobacillus denitrificans সালফার জারণের সময় নাইট্রেট বিজারিত করে।

ডিনাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশের জলমগ্ন মৃত্তিকার একটি সাধারণ প্রতিভাস। পললভূমি মৃত্তিকা, যথা- চুনহীন পলল, চুনযুক্ত পলল, চুনহীন পললভূমি, চুনযুক্ত ধূসর পললভূমি, ধূসর পাদদেশীয় মৃত্তিকা, চুনহীন গাঢ় ধূসর পললভূমি, চুনযুক্ত গাঢ় ধূসর পললভূমি, চুনহীন বাদামি পললভূমি, চুনযুক্ত বাদামি পললভূমি, এসিড বেসিন এঁটেল এবং কালো তেরাই মৃত্তিকা দিয়ে সমগ্র কৃষিভূমির ৬৫% গঠিত। এসব মৃত্তিকা মৌসুমমাফিক প্লাবিত হয় এবং নিচুভূমির ধান চাষে ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়। সোপান মৃত্তিকার একটি যথাযথ অংশ, যথা- গভীর লাল বাদামি, অগভীর লাল বাদামি, বাদামি কর্বুরিত (mottled), গভীর ধূসর, অগভীর ধূসর সোপান মৃত্তিকা এবং ধূসর উপত্যকা মৃত্তিকা সেচের আওতাধীন বা বর্ষাকালে মৌসুমমাফিক প্লাবিত হয় এবং এসব মৃত্তিকা ধান চাষে সহায়ক। বাংলাদেশের সব মৃত্তিকাতে নাইট্রোজেনের অভাব পূরণের জন্য ইউরিয়া সার ছিটিয়ে প্রয়োগ করা হয়। মৃত্তিকাতে প্রয়োগ করা ইউরিয়া সারের পানি-বিশ্লেষণ বা নাইট্রোজেন সংবলিত জৈব যৌগের বিয়োজনের ফলে উৎপন্ন অ্যামোনিয়া ধানের জমির জারিত স্তরে দ্রুত জারিত হয়ে নাইট্রাইট ও নাইট্রেটে পরিণত হয়। যেহেতু এ দুই আকারের নাইট্রোজেন মৃত্তিকাতে পরিশোষণ প্রবণ নয় সেহেতু এ নাইট্রোজেন ব্যাপন বা অনুস্রাবিত পানির সঙ্গে নিচের দিকে নেমে যেতে চায়। এ দুই আকারের নাইট্রোজেন দুটি স্তরের সীমানা অতিক্রম করে যাওয়ার পর বিজারিত স্তরে অণুজীবের ক্রিয়াকলাপে ডিনাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়া দ্বারা পরিবর্তিত হয় এবং একটি ক্ষুদ্র অংশ রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় গ্যাসীয় নাইট্রোজেনে পরিণত হয়। এটা দেখা গিয়েছে যে বাংলাদেশের তিনটি মৃত্তিকায় জলমগ্ন অবস্থায় ইনকিউবেশনের ছয় সপ্তাহ সময়ে ডিনাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োগকৃত নাইট্রোজেন অপচয়ের বিস্তৃতি ৮৪ থেকে ৯০%। এভাবে প্রয়োগকৃত নাইট্রোজেনের একটি বিরাট অংশ ডিনাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপচয় হয়ে বায়ুমন্ডলে পৌঁছায়। [রামেশ্বর মন্ডল এবং সিরাজুল হক]