ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল) নেদারল্যান্ডস্ ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স কোম্পানি (এফএমও) এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তাগণের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি ব্যাংক। ১৯৯৬ সালের ৩ জুন এটি বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৮ সালে ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ছিল ১০০০ মিলিয়ন টাকা। প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যমানের শেয়ারের বিপরীতে ৩.৯৪৭১৯টি বোনাস শেয়ার ইস্যু করার ফলে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৭৯৮ মিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৮ সালে দাঁড়ায় ১০০০ মিলিয়ন টাকায়। বিধিবদ্ধ মূলধন ২০০৭ সালের ৮৪২ মিলিয়ন টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৮ সালে দাঁড়ায় ১১৯৮ মিলিয়ন টাকায়। বর্তমানে একজন বিদেশি পরিচালকসহ মোট ৬ জন পরিচালকের সমন্বয়ে গঠিত একটি পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকটির সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকিসহ নীতি ও কৌশল অনুমোদন করে। উক্ত পর্ষদ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যাংকটির জন্য ১ জন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করে। ৩ জন ডি এমডি ও ২৪ জন ঊর্ধ্বতন নির্বাহীসহ প্রায় ১২০০ জন কর্মকর্তাকর্মচারী রয়েছে ব্যাংকটিতে। ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির শাখার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৬।

মৌল তথ্য ও পরিসংখ্যান  (মিলিয়ন টাকায়)।

বিবরণ ২০০৪ ২০০৫ ২০০৬ ২০০৭ ২০০৮ ২০০৯
অনুমোদিত মূলধন ৪০০ ৪০০ ৪০০ ৪০০ ১০০০ ৪০০০
পরিশোধিত মূলধন ২০০ ২০২ ২০২ ২০২ ১০০০ ১৫০০
রিজার্ভ ৭৭৬ ৪৯০ ৬৩৮ ৮৪২ ১১৯৭ ২০০০
আমানত ২১০৬৭ ২৭২৪১ ৪০১১২ ৪২১১০ ৫১৫৭৬ ৬৭৭৮৯
(ক) তলবি আমানত ২৯৪৪ ৪১৭৭ ১৪২৩১ ৮২৩২ ৯৯৯৫ ১৪৪৫৪
(খ) মেয়াদি আমানত ১৮১২৩ ২৩০৬৪ ২৫৮৮১ ৩৩৮৭৮ ৪১৫৮১ ৫৩৩৩৫
ঋণ ও অগ্রিম ১৪৯৭৬ ২০৩৪৯ ২৮৩২৫ ২৯৪০৩ ৪১৬৯৮ ৪৯৫৭১
বিনিয়োগ ২০৩৫ ৩৪৪০ ৫৮৭৭ ৫৯০৯ ৫৯৫৫ ৯৬৭০
মোট পরিসম্পদ ২৪৫৬১ ৩২২৭৯ ৪৫৪৯৩ ৪৯৩৭১ ৬০৬৮২ ৮১৪৮১
মোট আয় ২৩৬৭ ৩৪৩৫ ৫১৮৮ ৬৩৬৭ ৭২৭৬ ৮৯১৪
মোট ব্যয় ১৭৩৫ ২৪৯৫ ৪১০১ ৪৯২৯ ৫৩৪০ ৬২১৯
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসা পরিচালনা ৪০৬৭৪ ৪৯০১১ ৬৬৯৬৯ ৭৪৬১১ ৮৯২৫৪ ১০১০১২
(ক) রপ্তানি ১৩৫৮২ ১৪৪ ৩৩৩৪৫ ৩৪০৬০ ৪০০৮৩ ৪১১৬৩
(খ) আমদানি ২৫৯৭৪ ২৬০২৯ ৩২০৬৮ ৩৫৬৬৭ ৪৩৯৯৯ ৫৩০৮৯
(গ) রেমিট্যান্স ১১১৮ ৮৩৮ ১৫৫৬ ৪৮৮৪ ৫১৭২ ৬৭৬০
মোট জনশক্তি (সংখ্যায়) ৪৩১ ১০৯৩ ১৩৬৮ ১৫৭৮ ২৪৫৮ ১৭৮৫
(ক) কর্মকর্তা ৪৩১ ৫৪৮ ৬৮৪ ৭৮৯ ১২২৯ ১৭৮৫
(খ) কর্মচারী - ৫৪৮ ৬৮৪ ৭৮৯ ১২২৯ -
বিদেশি প্রতিসংগী ব্যাংক (সংখ্যায়) ১০০ ৮২ ৮২ ৮২ ১৯৪ ৪৪২
শাখা (সংখ্যায়) ১৯ ৫৬ ৭৮ ৯৮ ১২৮ ৭৯
(ক) দেশে ১৯ ২৮ ৩৯ ৪৯ ৬৪ ৭৯
(খ) বিদেশে - ২৮ ৩৯ ৪৯ ৬৪ -
কৃষিখাতে
ক) ঋণ বিতরণ ৫৩১ ৩৬২ ১১৬ ৩৯১ ২২০ ৩০০
খ) আদায় ৬০২ ১৬১ ১৯৯ ২৮২ ২১৫ ১৯৪
শিল্প খাতে
ক) ঋণ বিতরণ ৯৮৫৪ ১৪৫৫০ ২০০৬২ ১৫৩২৮ ২২৪৭৫ ২৪৬৫০
খ) আদায় ৮৮৪৯ ১১৬২৬ ১৮৬১৭ ১৫৪৩৭ ১৭৭৮৫ ২১১১৩
খাতভিত্তিক ঋণের স্থিতি
ক) কৃষি ও মৎস্য ২৩৫ ৪২৬ ১১৪ ৩৪৭ ৬৬৩ ৭৪৫
খ) শিল্প ৩২৮৬ ৪৪৯৭ ৪৫৮৬ ৮০১৫ ৯৫৬০ ১৪৩০৯
গ) ব্যবসাবাণিজ্য ২৭৭৬ ৪২৩৭ ৪৮২৬ ৩০৮৬ ৯৯৪০ ১০৩৩৫
ঘ) দারিদ্র্য বিমোচন - ৫০ ৮৮ ৫৮ ৩৩

উৎস  অর্থবিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলী, ২০০৪-০৫ থেকে ২০০৯-১০।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক স্থানীয় ও বৈদেশিক রেমিট্যান্স সম্পর্কিত গ্রাহকসেবাসহ সর্বপ্রকার বাণিজ্যিক ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করলেও এর প্রধান ব্যবসা হচ্ছে ট্রেড ফিন্যান্সিং। এটি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে সীমিত আকারে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ঋণ প্রদান করে। ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকার ঋণ এবং আমানত স্কীম গ্রাহকদের নিকট সমাদৃত হয়েছে। এসবের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্কিম হচ্ছে মানি প্লান্ট, মাসিক মেয়াদি আমানত, দোকানিদের জন্য  ক্ষুদ্রঋণ, ট্যাক্সি ক্যাব ক্রয়ের জন্য ঋণ, পরিবহণ ঋণ এবং ভোক্তা ঋণ।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ২০০৩ সাল থেকে মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছাত্রছাত্রীদেরকে এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ে বৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি এমফিল/পিএইচডি/পোস্ট ডক্টরাল স্তরে গবেষণার জন্য ফেলোশিপ প্রদান করে আসছে। ডিবিবিএল ২০০৩ সাল থেকে বিভিন্ন জেলায় ৪২০০ জনেরও বেশি দরিদ্র ঠোঁটকাটা ছেলেমেয়েদের প্লাস্টিক সার্জারি তথা ‘মধুর হাসি’ কার্যক্রমের মাধ্যমে মুখে হাসি ফিরিয়ে এনেছে। ডিবিবিএল ফাউন্ডেশন ৮০০ জন তালাকপ্রাপ্ত ও ৪৫১ জন এসিড আক্রান্ত মহিলাকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করে তুলেছে এবং ৫০ জন এইডস আক্রান্ত রোগীকে ARV ঔষধ ও পুষ্টিকর খাবার প্রদান করেছে। এছাড়া ডিবিবিএল মানসিক প্রতিবন্ধী ও বিকলাঙ্গ শিশুদের পুনর্বাসন এবং ভবঘুরে শিশুকিশোরদের অবস্থার উন্নতিসহ বিভিন্ন জনহিতকর কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে।সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ‘সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আর্টস অ্যান্ড সোসাল সাইন্সসেস’ নামক একটি আধুনিক রিসার্চ সেন্টার নির্মাণের জন্য  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৯৭.৩ মিলিয়ন এবং বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের ছয়তলা অলিম্পিক ভবন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে ৩০ মিলিয়ন টাকা অনুদান দিয়েছে। ২০০৮ সালে সেন্টার ফর ডিসঅ্যাবল্ড কনসার্ন, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ডিসঅ্যাবল্ড, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর এডুকেশন অব দি ইন্টিলেকচুয়ালি ডিসঅ্যাবল্ড, খুলনা প্রতিবন্ধী সংস্থা, ঢাকা আহসানিয়া মহিলা মিশন, পল্লীবন্ধু কল্যাণ সংস্থা, নারীকণ্ঠ ফাউন্ডেশন,  বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ মহিলা সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছে। ডিবিবিএল ঢাকা ক্লিন ফুয়েল প্রজেক্ট-এর আওতায় রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের পুনঃঅর্থায়নের জন্য ১৩টি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন ও ৬০টি পাবলিক ট্রান্সপোর্টেকে অর্থ দিয়েছে। এছাড়া ওয়াস্ট রিসাইকলিংভিত্তিক ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম প্রজেক্ট-এর আওতায় শহরের ময়লাআবর্জনা দিয়ে সার প্রস্ত্তত করার জন্য ২ মিলিয়ন ইউরো’র সমপরিমাণ টাকা প্রদান করেছে ডিবিবিএল।  [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]