ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা (ঠাকুরগাঁও জেলা)  আয়তন: ৬৮৩.৪৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪০´ থেকে ২৫°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°১৫´ থেকে ৮৮°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে আটোয়ারী ও বোদা উপজেলা, দক্ষিণে পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) ও বীরগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে বোদা, দেবীগঞ্জ ও বীরগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে বালিয়াডাঙ্গি ও রানীশংকাইল উপজেলা।

জনসংখ্যা ৫০৪৪২৮; পুরুষ ২৬০৫১৫, মহিলা ২৪৩৯১৩। মুসলিম ৩৬৯৪৮৬, হিন্দু ১২৯৭৯৪, বৌদ্ধ ৩৬১৪, খ্রিস্টান ৩৮ এবং অন্যান্য ১৪৯৬। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা, মুসহোর, রাজবংশী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: টাংগন, নাগর, কুলীক, পাথরাই, তিরনাই; উলির বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ঠাকুরগাঁও থানা গঠিত হয় ১৮০০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৯ ১৯৪ ১৯৭ ৫১৭৮৫ ৪৫২৬৪৩ ৭৩৮ ৬৬.০ ৪৫.১
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.৭০ ২৩ ৪১৮৫৪ ৩৯১২ ৬৯.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.৫৫ ৯৯৩১ ৯৪১ ৫১.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আউলিয়াপুর ১৫ ৯১৮৩ ১২১৭৩ ১১৬৩১ ৪৫.১৩
আকচা ১১ ৯৪৭৯ ১১৩৩০ ১০৬০০ ৪০.৯০
আখানগর ১৩ ৯০৪৮ ১১১৫৭ ১০৭৯২ ৪০.৩০
গড়েয়া ৪২ ৯৩৩৭ ১৫১৩২ ১৪৩৩৩ ৪৮.৫৭
চিলারং ৩১ ৮৫৬৮ ১০৯৭৬ ১০৪২৪ ৪২.৫৫
জগন্নাথপুর ৪৭ ৯৬৩৭ ১৭২৫৪ ১৬১৪৩ ৪২.৫৫
জামালপুর ৫২ ৮১৯৫ ১২৭০৯ ১১৯৮৭ ৫০.৬৩
দেবীপুর ৩৬ ৯৩২৮ ১১২৬৯ ১০৫০৬ ৪৬.২৮
নরগুন ৬৩ ৬৫৩৮ ১০৫০৫ ৯৭৭৮ ৪১.৫১
বড়গাঁও ২৬ ৭৬৫২ ১০২৭৯ ৯৫৮২ ৪৫.২৬
বালিয়া ২১ ৯০৮৭ ১২১৫৭ ১১৮১৫ ৩৬.৪০
বেগুনবাড়ি ১৭ ৮৯৭৪ ১০২৪৬ ৯৫৯৭ ৪৩.৫১
মোহাম্মদপুর ৫৮ ৬৪৯৯ ১২১১১ ১১২৯২ ৪৯.৬৮
রহিমনপুর ৬৮ ৮৫৫১ ১৪৩১৬ ১৩০৮৫ ৪৮.২৫
রাজাগাঁও ৭৯ ৮৮৩৪ ১০৫৩৭ ৯৮৩৮ ৪৫.৭২
রায়পুর ৭৩ ৯৩৩১ ১১৯২৪ ১১০৬৬ ৪০.৬৬
রুহিয়া ৮৪ ৯৫২৪ ১৭৬৬৬ ১৬৭০৯ ৭৮.৫৯
শুখানপুকুরী ৯৪ ৮৭৭১ ১১০৯৮ ১০৬২৬ ৬০.০৫
সালন্দর ৮৯ ৯৬৪৪ ১৫৫৮৫ ১৪৩৪৬ ৪১.৮৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ গোবিন্দনগর মন্দির, জামালপুর জামে মসজিদ, কোরমখান গড়, বৃষমুর্তি (নরগুন কহরপাড়া), দেবীপুরের খুররম খাঁ পুকুর, গোবিন্দ জিউ মন্দির (অষ্টাদশ শতাব্দী), শাপলা ও পেয়ালা দীঘি।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি তেভাগা আন্দোলন দমনের জন্য কৃষকদের এক বিশাল মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে ৩৫ জন কৃষক নিহত এবং বহুলোক আহত হয়। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ভুল্লি, গড়েয়া ও সালন্দরে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে বহুলোক নিহত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি: সবদল ডাঙ্গা, বিডিআর ক্যাম্প; গণকবর: শুকান পুখুরী, ঝাটিডাঙ্গা, হাটের ব্রিজ, ফাড়াবাড়ি, ঠাকুরগাঁও শহরের টাংগন নদীর তীরে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬৫৫, মন্দির ১২০, গির্জা ১৯।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৪৭.৪%; পুরুষ ৫৩.৫%, মহিলা ৪০.৯%। কলেজ ৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১১২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৩৭, শিক্ষক কেন্দ্র ১, বি এড কলেজ ১, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, ভোকেশনাল টেকা্রটাইল  ইনস্টিটিউট ১, কারিগরি কলেজ ১, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ (১৯৫৭), ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল (১৯০৪), ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৪), রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৯), মাদারগঞ্জ এম বি হাইস্কুল (১৯৪৫), সালন্দর ট্রিপল কামিল মাদ্রাসা (১৯৪৮)।

দৈনিক পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  অবলুপ্ত দৈনিক: ঠাকুরগাঁও দর্পণ, সংগ্রামী বাংলা, গ্রামবাংলা, দৈনিক বাংলাদেশ, জনরব। অবলুপ্ত সাহিত্য পত্রিকা: এসো চেয়ে দেখি পৃথিবী, উষসী, চালচিত্র।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১০, ক্লাব ৬৮, টাউন হল ১, সিনেমা হল ১০, নাট্যদল ৭, নাট্যমঞ্চ ১, খেলার মাঠ ৪৩ শিল্পকলা একাডেমি ১।

গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা  টিভি রিলে কেন্দ্র ১, বেতার কেন্দ্র ১

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৫.০৭%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৭৫%, শিল্প ০.৪৯%, ব্যবসা ১১.৯৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৮৭%, চাকরি ৬.৯৭%, নির্মাণ ১.৩২%, ধর্মীয় সেবা ০.১৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২২% এবং অন্যান্য ৫.২৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.১৬%, ভূমিহীন ৪২.৮৪%। শহরে ৪৩.৯০%  এবং গ্রামে ৫৮.৫৮% পরিবারের  কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, আখ, পাট, ডাল, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশ ধান, যব, পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, তরমুজ।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৮০৫ কিমি; রেলপথ ৩৩ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা সুগারমিল, স‘মিল, রাইসমিল, ফ্লাওয়ারমিল, অয়েলমিল, টেক্সটাইল মিল, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, পাইপ ফ্যাক্টরি, কেমিক্যাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, কোল্ডস্টোরেজ, রেশম শিল্প।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, পাট জাত দ্রব্য, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪৫, মেলা ৬। গড়েয়া হাট, ভুল্লি হাট, শিবগঞ্জ হাট, রামনাথ হাট, খোচাবাড়ি হাট, ফাড়াবাড়ি হাট ও চৌধুরী হাট এবং বড়ধাম মেলা, রুহিয়া মেলা ও মুক্তার মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  চাল, ডাল, আলু, আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, চিনি ও শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবকটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৩.৫৯% পরিবারের  বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৮৬%, পুকুর ০.৩৫%, ট্যাপ ০.৬৮% এবং অন্যান্য ৭.১১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলায় ১৮.২০% (গ্রামে ১৪% এবং শহরে ৫৭.৪৩%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩০.২৩% (গ্রামে ৩০.৪৩% এবং শহরে ২৮.২৪%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫১.৫৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৯, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র ১, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ১, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, সিডিএ, আরডিপি।  [আবু মো. ইকবাল রুমী শাহ]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।