ঠাকুর পরিবার

ঠাকুর পরিবার  এর ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু আঠার শতকে বাংলায় ইউরোপিয় বনিকদের বানিয়া হিসেবে। আঠারো শতকের শেষ পাদেই এই পরিবারের সাফল্যগাঁথা পাওয়া যায়। উনিশ শতকের শুরু থেকে এই পরিবারের সার্বিক জয়যাত্রা শুরু। উনিশ শতকের প্রথম পাদে দেখা যায় জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রে এই পরিবারের বিস্ময়কর সাফল্য শতকের শুরুতে ব্যবসা উদ্যোক্তা, জমিদার, ধর্মীয় নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাহিত্যিক, আইন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজেদেরকে গৌরবোজ্জ্বলভাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। লৌকিক কাহিনী মতে, বাংলায় আগত আদি পাঁচ ঘর ব্রাহ্মণদের প্রধান ভট্টনারায়ণ থেকে ঠাকুর পরিবারের যাত্রা শুরু। গবেষকদের ধারণা, ঠাকুরদের আদিবাস যশোর জেলায়। কোনো এক সময় ঠাকুর পরিবারের কয়েকজন সদস্য কোনো সুফী সাধকের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ইসলাম ভাবাপন্ন হন বা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তখন থেকে এই পরিবার হিন্দু সমাজে জাত হারায় এবং পীরালি ব্রাহ্মণ হিসেবে সামাজিক পদবী লাভ করে। এ পরিবারের প্রথম ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব জয়রাম ঠাকুর (মৃ. ১৭৬২)। জয়রাম ঠাকুর প্রথম চন্দন নগরে ফরাসিদের বানিয়া ছিলেন এবং পরে তিনি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বানিয়া হিসেবে যোগদান করেন। নবাব মীর জাফর ১৭৫৭ সালে ২৪-পরগণা রবার্ট ক্লাইভকে জায়গীর হিসেবে দান করেন। এ জায়গীর ব্যবস্থাপনার জন্য ক্লাইভ জয়রামকে আমিন হিসেবে নিয়োগ করেন। জয়রাম স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন ইস্ট ইন্ডিয়া কর্তৃক সদ্য প্রতিষ্ঠিত কলকাতা নগরীর গোবিন্দপুরে। জয়রাম ঠাকুর থেকে কলকাতার ঠাকুর পরিবারের গৌরবান্বিত ইতিহাস শুরু হয়। ইংরেজরা ঠাকুর শব্দটির উচ্চারণ করতো টেগোর। দীর্ঘকাল ইংরেজদের সঙ্গে মেলামেশার ফলে ‘টেগোর’ উচ্চারণটি স্থায়ী রূপ লাভ করলো। যাহোক, বিশ শতকে এসে সব ‘টেগোরই’ ইংরেজি বাংলা উভয় ভাষায়ই ‘ঠাকুর’ হলেন। ব্যতিক্রম শুধু রবীন্দ্রনাথ। তিনি বাংলা ভাষায় ঠাকুর কিন্তু ইংরেজি ভাষায় এখনো ‘টেগোর’। ঠাকুর পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা জয়রাম থেকে প্রথম দুই পুরুষের সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নরূপ:

কলকাতার পাথুরিয়াঘাটায় দর্পনারায়ণ ঠাকুর (মৃ. ১৭৯১) বসতি স্থাপন করেন। তাঁর বংশ দ্বারাই গঠিত হয় ঠাকুর পরিবারের সিনিয়র শাখা। দর্পনারায়ণের ভাই নীলমনি ঠাকুর চট্টগ্রামের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেরেস্তাদার ছিলেন। তিনি কলকাতার মেছুয়াবাজারে বসবাস করতেন পরবর্তীতে ওই জায়গাটি জোড়াসাঁকো নামে পরিচিতি পায়। আর তাঁর বংশের দ্বারাই গঠিত হয় ঠাকুর পরিবারের জুনিয়র শাখা। ইংরেজদের বানিয়া হিসেবে কাজ করে দুই ভাই রাতারাতি তাদের ভাগ্য গড়ে তুলেছে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অধীন সৃষ্ট নতুন ভূমি ব্যবস্থায় তারা বাংলার বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক জমি ক্রয় করে। ঠাকুর পরিবারের ইতিহাস থেকে বলা যায়, উনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত কলকাতা সোসাইটিতে (Culcatta Society) এ পরিবার দুটি শাখায় বিভক্ত ছিল; পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুর পরিবার- সিনিয়র শাখা এবং জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার- জুনিয়র শাখা।

পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুর পরিবার-সিনিয়র শাখা  ঠাকুর পরিবারের প্রথম প্রসিদ্ধ ব্যক্তি  গোপীমোহন ঠাকুর (১৭৬০-১৮১৮) ইংরেজ ও ফ্রান্সদের বানিয়া হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তিনি বাংলার সর্বত্রই ব্যাপক জমি ক্রয় করেন এবং কলকাতার প্রতিনিধিত্বকারী একজন ভদ্রলোক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কোম্পানির সব বানিয়াই মূলত ইউরোপিয়ান কর্মকর্তাদের দোভাষি হিসেবে কাজ করতো কিন্তু গোপীমোহন ছিলেন তাদের থেকে ব্যতিক্রম। তিনি বহু ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন যেমন, ইংলিশ, ফ্রেঞ্চ, ডাচ, পর্তুগীজ, সংস্কৃত, পার্সি ও উর্দু। তাছাড়া তিনি হিন্দু কলেজের (১৮১৬) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং প্রধান অর্থকর্তা ছিলেন। গোপীমোহনের পুত্র  প্রসন্নকুমার ঠাকুর (১৮০১-১৮৬৮) তাঁদের জমিদারির পারিবারিক ব্যবসা এবং জমিদারির তদারকি ছেড়ে সদর দেওয়ানি আদালতের একজন আইন ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। উক্ত ব্যবসার আয় থেকে তিনি বিপুল সম্পত্তি ক্রয় করেন। তৎকালীন জমিদার সমাজকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তাঁর ভুমিকা রয়েছে। তিনি ভারতীয় জাতীয় মহাসভার অগ্রদূত  ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন এর প্রতিষ্ঠিাতা সদস্য ছিলেন। ‘টেগোর ল লেকচার’ শিরোনামে বার্ষিক বক্তৃতা প্রবর্তন করার জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে মোটা অংকের অর্থ প্রদান করেন, এটি এখনো চালু আছে। প্রসন্নকুমার ঠাকুর কলকাতার  হিন্দু নাট্যশালার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৮৬১ সালে প্রথম ভারতীয় আইনসভা প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি প্রথম এর ভারতীয় সদস্য হন। তাঁর পুত্র  জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুর (১৮২৬-১৮৯০) ব্যারিস্টারি পড়তে ইংল্যান্ড গমন করেন এবং তিনি প্রথম ভারতীয় ব্যারিস্টার হন। তিনি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন এবং কৃষ্ণ মোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা কমলমনিকে বিয়ে করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে তিনি উত্তরাধিকারবঞ্চিত হন। এটা ঠাকুর পরিবারের দ্বিতীয় ধর্মান্তর ঘটনা। এ পরিবারের পূর্ববর্তী ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনাটি ঘটে তাদের গ্রামের বাড়িতে কয়েক প্রজন্ম পূর্বে তিনজন সদস্যর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে। ফলে তারা ব্রাহ্মণ শ্রেণীর মর্যাদা থেকে পদচ্যূত হয়ে একজন মুসলিম পীরের অনুসারী ‘পীরালি ব্রাহ্মণ’ মর্যাদায় পর্যবসিত হয়।

যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর (১৮৩১-১৯০৮) একজন বিশিষ্ট অভিনেতা ছিলেন। কলকাতা নাট্যশালা উন্নয়নে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তিনি ১৮৬৫ সালে পাথুরিয়াঘাটায়  বঙ্গ নাট্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। মাইকেল  মধুসূদন দত্তের একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তিনি পরিচিত। তাছাড়া তিনি অনেক সঙ্গীতশিল্পীর ওস্তাদ ছিলেন। ভারতীয় সঙ্গীতে অর্কেস্ট্রাকে পরিচিত করে তুলতে তিনি ক্ষেত্রমোহন গোস্বামীকে পৃষ্ঠপোষণ দান করেন। যতীন্দ্রমোহন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং ‘রয়াল ফটোগ্রাফিক সোসাইটি’র প্রথম ভারতীয় সদস্য ছিলেন। রমানাথ ঠাকুর (মৃ. ১৮৭৭) ও যতীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলায় ইউরোপীয়ান শিল্পর্চ্চার প্রধান কর্ণধার ছিলেন। সঙ্গত কারণেই পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুর ভবন ছিল ইউরোপীয়ান চিত্রকর্মের প্রধান সংগ্রহশালা। শৌতীন্দ্রমোহন ঠাকুর (মৃ. ১৮৯৮) ছিলেন রয়াল একাডেমীর প্রথম দিকের ভারতীয়দের মধ্যে অন্যতম একজন সদস্য। তিনি শিল্পকর্ম বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন।  শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর (মৃ. ১৯১৪) প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সঙ্গীতের তুলনামূলক পাঠ তৈরি করেন। ১৮৭৫ সালে তিনি ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সঙ্গীতে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তাছাড়া ১৮৯৬ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরো একটি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৭১ সালে তিনি ‘বঙ্গ সঙ্গীত বিদ্যালয়’ এবং ১৮৮১ সালে ‘বেঙ্গল একাডেমি অব মিউজিক’ নামে সঙ্গীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ইরানের শাহ তাঁকে ‘নবাব শাহজাদা’ সম্মাননা প্রদান করেন এবং ব্রিটিশ সরকার ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার-জুনিয়র শাখা  ঠাকুর পরিবারের জুনিয়র শাখার প্রথম ব্যক্তিত্ব  দ্বারকানাথ ঠাকুর (১৭৯৪-১৮৪৬)। তিনি নীলমনি ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র রমনী ঠাকুরের পুত্র ছিলেন। নীলমনির প্রথম পুত্র রামলোচন ঠাকুর নিঃসন্তান ছিলেন একারণে তিনি দ্বারকানাথকে দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। দ্বারকানাথ কলকাতার ইংরেজি সেমিনারী স্কুল থেকে শিক্ষা লাভ করেন। সরকারের রাজস্ব বিভাগে সেরেস্তাদার হিসেবে তাঁর পেশাজীবন শুরু হয়। কিন্তু অতি শীঘ্রই তিনি চাকরি পেশা ছেড়ে ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং ১৮২০ সালে বাংলার একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনি ব্যাংকিং, ল্যান্ডহোল্ডিং এবং ইউরোপীয়ান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্লানটেশন, শিপিং, মাইনিংসহ অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দ্বারকানাথ রাজা রামমোহন রায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও তাঁর মতো সংস্কার মনের ছিলেন না। ব্যক্তিগতভাবে তিনি বিষ্ণুভক্ত ছিলেন এবং বাংলায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্রিটিশ তত্ত্বাবধানে দ্রুত পাশ্চাত্তীকরণে নিহিত এই বোধে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ব্রিটেন ভ্রমণ করেন এবং সেখানে তাঁর জাঁকজমকপূর্ণ চালচলন দেখে ব্রিটিশ বন্ধুরা তাঁকে ‘প্রিন্স’ উপাধি দেন। কিন্তু তাঁর ভাগ্য বেশিদিন সুপ্রসন্ন হয়নি। ১৮৩০ সালের মহা মন্দায় ইউরোপের ও বাংলার বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ধ্বস নামলে তিনি এর শিকার হন। এরূপ পরিস্থিতিতে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর তাঁর প্রায় সমুদয় সম্পত্তি হারান। ফলে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নিকট তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাঁকে ঋণমুক্ত করেন তাঁর পুত্র  দেবেন্দ্রেনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫)। তিনি সূর্যাস্ত আইনের অধীন রাজস্বঋণ পরিশোধের ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে কিছু সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করেন। গোটা পরিবারকে ঋণমুক্ত করতে তাঁর সারাজীবন কেটে যায়। দ্বারকানাথের অপর দুই পুত্র গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮২০-১৮৫৪) ও নগেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮২৯-১৮৫৮)। গিরীন্দ্রনাথের পুত্র  গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪১-১৮৬৯) প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। সঙ্গীত, নাট্য এবং জাতীয়তাবাদী চেতনার ক্ষেত্রে অবদানের জন্যই তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।

১৮৪০ সাল হতে ঠাকুর পরিবারের ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক পেশাতে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এবছর থেকেই তাঁরা জমিদারি, সরকারি চাকরি এবং সৃষ্টিশীল কাজে আত্মনিয়োগ করেন। দেবেন্দ্রনাথের পুত্র  সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪২-১৯২৩) প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান। তিনি ১৮৬৪ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের সদস্য হন। ১৮৫৭ সালে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর ভাই  জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রথম ছাত্র। জ্ঞানেন্দ্রনাথ প্রথম আধুনিক জাতীয়তাবাদী সঙ্গীত রচয়িতার কৃতিত্বের দাবীদার। তিনি বেশ সংখ্যক গান লিখেছেন তাঁর সেসব গানের অনেকগুলো এখনও বেশ জনপ্রিয়। তিনি তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন এবং হিন্দুমেলা সংঘটনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।  যতীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪৯-১৯২৫) ছিলেন একাধারে লেখক, শিল্পী, সুরকার, গীতিকার এবং নাট্য ব্যক্তিত্ব। তিনি অসংখ্য নাটক লিখেছেন, পরিচালনা করেছেন এবং অনেকগুলোতে তিনি অভিনয় করেছেন। সব পরিচয়কে ছাপিয়ে তিনি মূলত একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে সমধিক পরিচিত। ১৯১৪ সালে লন্ডনে তাঁর নির্বাচিত চিত্রকর্মের একটি প্রদর্শনী হয়।  জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪৯-১৯২৫) নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, সুরকার, সম্পাদক ও চিত্রকর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা। তিনি ১৯০২-০৩ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ দীর্ঘকাল আদি ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক (১৮৬৯-৮৮) এবং ব্রাহ্মধর্মবোধিনী সভার সম্পাদক ছিলেন। তিনি ব্রহ্মসঙ্গীতের প্রসারের জন্য ‘আদি ব্রাহ্মসমাজ সঙ্গীতবিদ্যালয়’ স্থাপন করেন এবং নিজে অনেক বহ্মসঙ্গীত রচনা করেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) এশীয় মহাদেশে সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান এবং নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তি বাংলা ভাষাকে উন্নয়নের একটি নতুন মানদন্ডে পৌঁছে দিয়েছে। তাঁর লেখা দুটি গান ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে পরিবেশন করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৫৭ সালে মোহনদাস কর্মচাঁদ গান্ধীকে ‘মহাত্মা’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬৭-১৯৩৮),  অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১) ও সুনয়নী ঠাকুর চিত্রকলায় সমধিক প্রসিদ্ধ লাভ করেছেন। চিত্রকলার বিভিন্ন শাখার সমৃদ্ধিতে তাঁদের অগ্রগণ্য ভূমিকা রয়েছে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিত্রকলা বিষয়ের আধুনিক বাংলা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।  দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৪০-১৯২৬) দ্বিতীয় পুত্র  সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬৯-১৯২৯) ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ লেখক। তাঁর পুত্র  সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯০১-৭৪) নেতৃস্থানীয় বামরাজনীতিক ছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশ স্বাধীনতাযুদ্ধের স্বপক্ষে কাজ করেছেন। শর্মিলা ঠাকুর এ পরিবারের সাম্প্রতিককালের ভারতীয় চলচ্চিত্রাঙ্গণের একজন জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী। [সিরাজুল ইসলাম]