টঙ্ক আন্দোলন

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:১১, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

টঙ্ক আন্দোলন ১৯৪৬-৫০ সালে উত্তর ময়মনসিংহে কৃষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি আন্দোলন। স্থানীয় ভাষায় টঙ্ক শব্দটি জমিতে উৎপাদিত পণ্যের আকারে প্রদেয় খাজনাকে বোঝায়। কেন এটাকে টঙ্ক বলা হয় তা স্পষ্ট নয়। টঙ্ক দক্ষিণ বাংলার ধান করারির (ধানে পরিশোধ্য খাজনা) মতো। টঙ্ক মূলত মুদ্রা-পূর্বকালের প্রথা। কৃষকরা ধানে তাদের খাজনা পরিশোধ করত। প্রথাগতভাবে টঙ্ক রায়তরা প্রতি ১.২৫ একর জমির জন্য ১০ থেকে ১৫ মন ধান খাজনা দিত। টাকার হিসাবে এটি নগদ খাজনা হারের দ্বিগুণেরও বেশি। এ জন্য টঙ্ক এলাকার রায়তরা অন্য রায়তদের টাকায় প্রদত্ত খাজনার সঙ্গে ধানে পরিশোধ্য খাজনার ন্যায্য সমন্বয় সাধনের জন্য চাপ দিচ্ছিল।

কিন্তু জমিদাররা টঙ্ক রায়তদের সাধারণ রায়ত হিসেবে মেনে নিতে ছিল অনিচ্ছুক। তাদের যুক্তি ছিল, টঙ্ক রায়তরা ভূমিদাস নয় বটে, তবে সেজন্য তারা রায়তি অধিকার ও কৃষিপণ্যের বদলে নগদ টাকায় খাজনা দেওয়ার অধিকার পেতে পারে না।

বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভা তেভাগা, নানকার, নাচোল কৃষক আন্দোলনসহ অনেকগুলি কৃষক আন্দোলন পরিচালনা করেছিল (১৯৪৬)। কৃষক সভার ময়মনসিংহ জেলার সাম্যবাদী নেতা মণি সিংহ টঙ্ক আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন। উত্তর ময়মনসিংহ জেলায় বিশেষ করে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ি ও শ্রীবর্দি থানাগুলিতে টঙ্ক ভোগদখল সবচেয়ে বেশি ছিল। এ জায়গাগুলিতে প্রধানত গারো ও হাজং গোষ্ঠীর রায়তরা চাষাবাদ করত। সুসং দুর্গাপুরের জমিদার কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে টঙ্ক কৃষকরা ছয়দফা দাবিনামা প্রস্ত্তত করে। তাদের দাবিগুলি ছিল টঙ্ক প্রথার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি, টঙ্ক কৃষকদের ভূমির অধিকারের স্বীকৃতি, পরগনায় নগদ টাকায় দেয় হারের নিরীখে খাজনা নির্ধারণ, টঙ্ক খাজনার বকেয়া দাবি না করা, জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি এবং সাম্রাজ্যবাদের উচ্ছেদ। আন্দোলনকারীদের গ্রামগুলোতে পুলিশ চড়াও হলে গ্রামের মানুষ ও কম্যুনিস্ট স্বেচ্ছাসেবীরা একজোট হয়ে তাদের প্রতিরোধ করে। পুলিশ অনেককে গ্রেফতার করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর কিছুকালের জন্য কৃষকদের আন্দোলন স্তিমিত থাকে। কিন্তু ১৯৪৮ সালের টঙ্ক আন্দোলন আবার জোরদার হয়ে উঠে এবং ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। পূর্ববঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০-বলে সকল টঙ্ক কৃষককে তাদের দখলীয় জমির স্বাভাবিক মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।  [সিরাজুল ইসলাম]