জৈন্তাপুর উপজেলা

জৈন্তাপুর উপজেলা (সিলেট জেলা)  আয়তন: ২৮০.২৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫৯´ থেকে ২৫°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৩´ থেকে ৯২°১৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে কানাইঘাট ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে কানাইঘাট উপজেলা, পশ্চিমে গোয়াইনঘাট ও সিলেট সদর উপজেলা। উপজেলার উত্তর-পূর্ব দিকে জাফলং পাহাড় শ্রেনী অবস্থিত।

জনসংখ্যা ১২১৪৫৮; পুরুষ ৬৩২৫৪, মহিলা ৫৮২০৪। মুসলিম ১০৯১২৩, হিন্দু ১২০৬৬, বৌদ্ধ ৯২, খ্রিস্টান ১৭ এবং অন্যান্য ১৬০। এ উপজেলায় খাসিয়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: শাড়ী-গোয়াইন। কাকই বিল, পিঠা বিল, ধুপানি বিল, স্যাট বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯০৩ সালে এবং থানা উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৬০ ১৭৭ ৫৯৬৩ ১১৫৪৯৫ ৪৩৩ ৫৯.১৮ ৩৩.৭৮
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২.২৭ ৫৯৬৩ ২৬২৭ ৫৯.১৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
চরিকাটা ২৭ ১২৫৫৩ ৬৮৪৮ ৬৩৮৪ ২৪.৫৯
চিকনাগুল ৮২২৬ ৮৮৭০ ৮২২০ -
জৈন্তাপুর ৫২ ১১৬২৯ ১১১৭৮ ১০২৮৪ ৩৩.০৫
দরবস্ত ৩১ ১৮৩৯৬ ১৬৩৪৫ ১৪৮৪৯ ৩৪.৬৮
নিজপট ৬৩ ৪০৬৩ ১১৩২১ ১০৪১২ ৪৩.৮৪
ফতেহপুর ৪৫ ১৪৫৩৬ ১৭৫৬২ ১৬২৭৫ ৩৫.১৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মেগালিথ সৌধ, জৈন্তেশ্বরী মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, জৈন্তা রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ, সারীঘাট মন্দির।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, গণহত্যা ও লুটপাট করে। ১৭ এপ্রিল হেমো গ্রামে পাকবাহিনী জঙ্গিবিমান হামলা চালিয়ে অনেক নিরীহ লোককে হত্যা করে। এছাড়া পাকবাহিনী খান চা বাগানে শ্রমিকসহ প্রায় ৩০ জন লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ১ (চিকনাগুল); স্মৃতিস্তম্ভ ১ (তামাবিল চেকপেষ্ট)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২২৭, মন্দির ৭, গির্জা ২, মাযার ৪।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৩৫.১১%; পুরুষ ৩৯.৫১%, মহিলা ৩০.৩৪%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৩, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১১, কিন্ডার গার্টেন ৫, মাদ্রাসা ২৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: জৈন্তাপুর তৈয়ব আলী ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৫), সেন্ট্রাল জৈন্তাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৫), হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৭)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী   জৈন্তাবার্তা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১৭, খেলার মাঠ ৩।

দর্শনীয় স্থান জৈন্তাপুর রাজবাড়ি, শ্রীপুর চাবাগান।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৩.৩৮%, অকৃষি শ্রমিক ১০.৩২%, শিল্প ০.৭০%, ব্যবসা ১২.৬০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৭৯%, চাকরি ৪.৭১%, নির্মাণ ০.৭৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৬৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৫% এবং অন্যান্য ১৪.৯২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৮.৯৫%, ভূমিহীন ৫১.০৫%। শহরে ৫২.৫৩% এবং গ্রামে ৪৯.৮৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল চা, ধান, আলু, তেজপাতা, পান, সুপারি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক।

প্রধান ফল-ফলাদি  কাঁঠাল, আনারস।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২২৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৯ কিমি। কালভার্ট ৯৯, ব্রিজ ২৫।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৭, মেলা ৩। জৈন্তাপুর বাজার, দরবস্ত বাজার, হরিপুর বাজার, চিকনাগুল বাজার, শুক্রবারী বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য প্রাকৃতিক গ্যাস, নুড়িপাথর, চুনাপাথর, চা, তেজপাতা, পান, সুপারি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১২.৯৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ  প্রাকৃতিক গ্যাস, নুড়িপাথর, চুনাপাথর।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৫৭.০৮%, পুকুর ২৮.৮১%, ট্যাপ ১.৮১% এবং অন্যান্য ১২.৩০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৬.৯২% (শহরে ২৪.০৪% এবং গ্রামে ৭৮.০০%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৭.৫৪% (শহরে ৪৯.২৮% এবং গ্রামে ১৬.৬৪%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৫.৫৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৯।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [জয়ন্ত সিংহ রায়]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; জৈন্তাপুর উপজেলার মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০০৭।