জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:০০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর  পাকিস্তান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৯৬৫ সালের ২৬ এপ্রিল তারিখে উপস্থাপিত একটি প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৬৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৯৬৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ঢাকা পাবলিক লাইব্রেরি ভবনে কাজ শুরু করে। ঢাকা জাদুঘরের কিউরেটর ছিলেন এর প্রথম ভারপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা। ১৯৭০ সালের এপ্রিলে এটি চামেলিবাগে এবং পরে ১৯৭১ সালের মে মাসে ধানমন্ডির ১নং সড়কে স্থানান্তর করা হয়। এটিকে আবার ১৯৭৯ সালে ধানমন্ডির ৬নং সড়কে এবং পরের বছর কাকরাইল মসজিদের সামনে একটি স্থানে স্থানান্তর করা হয়। জাদুঘরের একটি নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য সরকার আগারগাঁও, শেরে বাংলা নগরে ৫ একরের একখন্ড জমি বরাদ্দ করে, এবং সেখানে ১৯৮১ সালে এর নিজস্ব ভবন তৈরি হয়। ১৯৭২ সালে একে জাতীয় জাদুঘরের মর্যাদা প্রদান করা হয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা, জাদুঘর ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে এর একটি পরিচালনা পরিষদ রয়েছে।

জাদুঘরের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ হচ্ছে স্থানীয় বিজ্ঞানীদের সৃষ্টিশীল কাজ ও প্রদর্শনযোগ্য প্রাকৃতিক সামগ্রী সংরক্ষণ এবং উদ্ভাবনমূলক কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে তরুণ বিজ্ঞানীদের উৎসাহিতকরণ, মানবসমাজের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির নিদর্শন সামগ্রী প্রদর্শন এবং একটি বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষিত নাগরিক সমাজ গড়ে তোলা।

জাদুঘরের কার্যক্রমসমূহের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর চাহিদা, আগ্রহ ও পর্যায়ের ভিত্তিতে সংগঠিত করা হয়, এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থী, স্কুল বর্হিভূত শিশু, তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি, নিরক্ষর মানুষ, কর্মরত ব্যক্তি, গণমাধ্যমের সাথে জড়িত ব্যক্তি, স্বপ্রণোদিত বিজ্ঞানী এবং জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে আগ্রহী সাধারণ জনগণ। জাদুঘর গ্যালারিতে রাখা প্রকৃতির স্থির ও সচল প্রদর্শনী সামগ্রী, চার্ট, ডায়াগ্রাম, পোস্টার ইত্যাদির মাধ্যমে দর্শনার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষা প্রদান করে থাকে। এতে প্রযুক্তি, ভৌতবিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞান বিষয়ে একটি করে মোট তিনটি বিভাগ রয়েছে। প্রদর্শনী সামগ্রীগুলি বিদ্যুৎ, তাপ, আলো, চুম্বকশক্তি, শব্দ, যোগাযোগ, গতিশক্তি ও জ্বালানির মতো ক্ষেত্রে পরীক্ষানিরীক্ষা ও আবিষ্কারের তথ্য সরবরাহ করে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাথর ও খনিজ পদার্থ, মানুষের মহাশূন্য ভ্রমণের সচিত্র রেকর্ড, একটি ডাইনোসরের ত্রিমাত্রিক নমুনা এবং সাগরের গভীরে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণির চিত্র। পাট, কাঠ, উল,  কচুরিপানা এবং বিভিন্ন ধরনের লতাগুল্মের সমন্বয়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি সামগ্রী প্রদর্শনেরও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জাদুঘরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির বিজ্ঞানের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত কোনো উপযুক্ত বিষয়ের ওপর বিভিন্ন স্কুল এবং কলেজের ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে প্রদর্শনভিত্তিক বক্তৃতা প্রদান করা হয়। এটি নিয়মিতভাবে জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ে বক্তৃতা, চলচ্চিত্র, বিজ্ঞান ক্লাব ও বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারসমূহের প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে।

জাদুঘরের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে দেশের বিজ্ঞান ক্লাবসমূহের কার্যকলাপকে উৎসাহিত করা। এটি সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রায় পাঁচশত বিজ্ঞান ক্লাবকে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও কর্মশালার সুবিধা প্রদান করে থাকে। প্রতিসরণকারী দুরবিনের মাধ্যমে গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্রগ্রহণ, সৌরজগৎ ও গ্রহণ দেখার নিয়মিত কর্মসূচি রয়েছে। জাদুঘরে স্থাপিত একটি ক্ষুদে প্ল্যানেটোরিয়ামে একই সময় কুড়িজন দর্শনার্থীর স্থান সংকুলান হতে পারে।

শৌখিন বিজ্ঞানীদের জন্য জাদুঘরে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জার্নাল ও গ্রন্থসমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। এটি নিয়মিতভাবে বৈজ্ঞানিক পুস্তিকা ও ম্যাগাজিন প্রকাশ করে থাকে। একটি জনপ্রিয় প্রকাশনা হচ্ছে নবীন বিজ্ঞানী নামে ত্রৈমাসিক বিজ্ঞান ম্যাগাজিন। এটি বিভিন্ন উপলক্ষে বিজ্ঞানের ওপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মশালা ও সেমিনারেরও আয়োজন করে থাকে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জাতীয় বিজ্ঞান সপ্তাহের আয়োজনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিজ্ঞান সপ্তাহে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিজ্ঞান ক্লাব থেকে আগত দর্শককে দলগত উদ্ভাবকরা বিভিন্ন নির্বাচিত মডেল ও প্রকল্পের প্রদর্শন করে থাকে। বিজ্ঞান সপ্তাহের কার্যক্রমসমূহ জেলা এবং কেন্দ্রীয় এ দু পর্যায়ে আয়োজন করা হয়। জেলা পর্যায়ের কার্যক্রমে সকল বিষয়ে কেবল প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্তরা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে থাকে। বিজ্ঞান সপ্তাহে প্রদর্শিত বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী ও প্রকল্পসমূহের নাম হচ্ছে: কাঠের তৈরি সাইক্লোস্টাইল মেশিন, স্থানীয়ভাবে প্রস্ত্তত গ্রিজ, বায়ুচক্র, উভচর সাইকেল, স্প্রে যন্ত্র, স্বল্প ব্যয়ে রান্নার যন্ত্র, বায়োগ্যাস, সৌর হিটার, সৌর সেল, সৌর পাম্প, পেপার কনডেন্সার, হস্তচালিত সেচ পাম্প, বাঁশনির্মিত থার্মোফ্লাস্ক, প্রতিফলনকারী দুরবিন, মাইক্রোস্কোপ, জমাটবাঁধা পাখি, কঙ্কাল, ভ্রূণ এবং নৌকা, বিমান, তেল শোধণাগার, ইস্পাত কারখানা, কাগজ কারখানা, প্রজেক্টর ইত্যাদির মডেল।  [মোবারক আলী আকন্দ]