জাতীয় টিকা দিবস

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:৫৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

জাতীয় টিকা দিবস (National Immunisation Day/NID)  পোলিও রোগ নির্মূলে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচির অংশবিশেষ। মুখ্যত  পোলিও শিশুদের একটি মারাত্মক রোগ। এর জীবাণু এন্টারোভাইরাস (enterovirus)। ভাইরাসটির সংক্রমণে প্রধান স্নায়ুরজ্জুর (spinal cord) মোটর স্নায়ুকোষ (motor neurons) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে শিথিল পক্ষাঘাতের (flaccid paralysis) সৃষ্টি হয়। যেহেতু ভাইরাস অন্ত্রে প্রবিষ্ট হয় তাই ধারণা করা হতো যে, রোগের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা উদ্দীপনে মুখে খাওয়ানো টিকা (vaccine) কার্যকর হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, লঘুকৃত (attenuated) ভাইরাস সম্বলিত মুখে খাওয়ানোর টিকা রক্ষণমূলক অনাক্রম্যতা প্রদানে অধিকমাত্রায় কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি ব্যবহূত তিন ধরনের পোলিও ভাইরাস দ্বারা তৈরী ত্রিযোজী (trivalent) পোলিও টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি খুবই সুবিধাজনক ঔষধ। কারণ, এটিকে ৪ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় এবং সাধারণ বরফের বাক্সে ভরে টিকাটিকে মাঠ পর্যায়ে শিশুদেহে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়।

টিকা ব্যবহার করে পোলিওমুক্ত বহু দেশের মতো বাংলাদেশও ১৯৯৫ সালে প্রতিটি শিশুকে মুখে খাওয়ানোর পোলিও টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে পোলিও নির্মূলকরণ নীতি গ্রহণ করে। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে, প্রতিবছর এক বছর বয়সের নিচের লক্ষ লক্ষ শিশুকে দুই ফোঁটা মুখে খাওয়ানোর টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে জাতীয় টিকা দিবস পালিত হয়ে আসছে। মুখে খাওয়ানোর পোলিও টিকার তিন মাত্রার মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় মাত্রা এক মাসের ব্যবধানে প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে সচরাচর সরকারের নিয়মিত নির্মূলকরণ এক কর্মসূচির মাধ্যমে তৃতীয় মাত্রার টিকা প্রয়োগ করা হয়, যা বর্তমানে  সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (Extended Programme on Immunisation) নামে পরিচিত। এতে ছয়টি টিকা যেমন, ডিফথেরিয়া, পার্টুসিস, টিট্যানাস (DPT), মুখে খাওয়ানোর পোলিও টিকা (OPV),  হাম (measles) ও বিসিজি (BCG) ব্যবহূত হয়।

মুখে খাওয়ানোর পোলিও টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে তা জাতীয় টিকা দিবস পালনেরই অবদান। এ দিনে সামাজিক স্বাস্থ্যপরিচর্যা কেন্দ্রগুলির ব্যাপক কর্মকান্ড ও বিপুলসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে টিকা প্রয়োগ করার জন্য দেশজুড়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। জাতীয় টিকা দিবস পালনের কয়েক সপ্তাহ পূর্বে থেকে এ দিনটিকে বিশেষভাবে পরিচিত ও পোলিও সম্পর্কে সচেতন করানোর লক্ষ্যে রেডিও, টেলিভিশনসহ নানা মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয় এবং নির্দিষ্ট দিনে মায়েদেরকে বাচ্চা নিয়ে নিকটতম টিকাদান কেন্দ্রে হাজির হওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রতিটি জাতীয় টিকা দিবসে লক্ষ লক্ষ শিশু টিকা সেবনের মাধ্যমে অনাক্রম্যতা অর্জন করছে।

প্রথম মাত্রা টিকা খাওয়ানোর জন্য প্রথম জাতীয় টিকা দিবস পালিত হয় ১৯৯৫ সালের ১৬ মার্চ এবং দ্বিতীয় মাত্রা খাওয়ানো হয় একই বছরের ১৬ এপ্রিল। পরবর্তী সময়ে পালিত জাতীয় টিকা দিবসগুলি হলো দ্বিতীয় জাতীয় টিকা দিবস ১৬ এপ্রিল ও ১৬ মে ১৯৯৬, তৃতীয় জাতীয় টিকা দিবস ৮ ডিসেম্বর ১৯৯৬ ও ৮ জানুয়ারি ১৯৯৭, চতুর্থ জাতীয় টিকা দিবস ৭ ডিসেম্বর ১৯৯৭ ও ১৮ জানুয়ারি ১৯৯৮ এবং পঞ্চম জাতীয় টিকা দিবস ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৮ ও ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ শিশুকে টিকা খাওয়ানো হয়। যেমন, পঞ্চম জাতীয় টিকা দিবসে দুই কোটি শিশুকে টিকা খাওয়ানো হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার শতকরা এক শত ভাগেরও বেশি প্রতিনিধিত্ব করে। প্রতি জাতীয় টিকা দিবসে ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতিপূরণের লক্ষ্যে শিশুদেরকে এক মাত্রা ভিটামিন ‘এ’ (১০০,০০০ ইউনিট) খাওয়ানো হয়। উদ্দেশ্য, শিশুদের  রাতকানা রোগের আক্রমণ হ্রাস করা। ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়।

বাংলাদেশে প্রাথমিকভাবে পোলিও নির্মূলকরণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল ২০০০ সালে, কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় ২০০৫ সালে পুনঃনির্ধারিত হয়েছে।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]

আরও দেখুন পোলিও, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি