জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:৫৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র  গ্রন্থের উন্নয়ন, প্রকাশনা ও পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬০ সালের ২৯ জুলাই ‘ন্যাশনাল বুক সেন্টার অব পাকিস্তান’ বা ‘জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে এটি ছিল একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। করাচিতে ছিল এর প্রধান কার্যালয়। এ ছাড়া লাহোর ও ঢাকায় ছিল এর দুটি শাখা অফিস।

পাকিস্তান আমলেই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের ঢাকা শাখা থেকে গ্রন্থজগতের নানা খবর নিয়ে বই নামে একটি মাসিক বাংলা পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। গত ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ১৯৬৫ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে ঢাকায় তৎকালীন কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শিশুতোষ গ্রন্থের এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ষাটের দশকে প্রায়শ খ্যাতিমান লেখকদের বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হতো জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র কার্যালয়ে।

স্বাধীনতার পর ইংরেজি ‘ন্যাশনাল বুক সেন্টার’-এর পাশাপাশি বাংলায় ‘জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র’ নামটি বিশেষ পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ উপলক্ষে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে বইমেলার আয়োজন করা হয়। এ বইমেলায় দেশের বিশিষ্ট প্রকাশকদের সাথে ভারতের ‘বুকট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া’ এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বুলগেরিয়াসহ কয়েকটি বিদেশি দূতাবাস অংশ নেয়।

১৯৭৯ সালে বইপড়াকে আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র সারাদেশে ‘জাতীয় গ্রন্থ সপ্তাহ’ পালনের প্রস্তাব দেয়। তদনুযায়ী সরকার ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ‘জাতীয় গ্রন্থ সপ্তাহ’ পালনের কথা ঘোষণা করে। এ ছাড়া একই বছরে গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন জেলাশহরে বাংলা মুদ্রণের দ্বিশতবর্ষ পালন করা হয়। ১৯৮১ সাল থেকে নববইয়ের দশকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত গ্রন্থকেন্দ্রের সহায়তা ও উৎসাহে সারাদেশে গড়ে উঠেছিল প্রায় দুই হাজার গ্রন্থসুহূদ সমিতি বা ক্ষুদে পাঠাগার। নানা বয়সের পাঠক-পাঠিকা ছিল এসব সমিতির সদস্য। এসব সমিতি দেশে পাঠাগার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে ‘ঢাকা বইমেলা’ ও জেলাপর্যায়ে বইমেলার আয়োজন বর্তমানে একটি নিয়মিত কর্মসূচির রূপ নিয়েছে।

দেশে প্রকাশনার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রন্থকেন্দ্র নিয়মিতভাবে গ্রন্থ রূপায়ন ও চিত্রণ, রচনা সম্পাদনা ও অনুবাদ, পুস্তক মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবস্থাপনা, পুস্তক বিক্রয় ও প্রুফ সংশোধনের উপর প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বইমেলায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র নিয়মিত অংশ নিচ্ছে এবং সেখানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ভারতের বুকট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার সাথে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার ভারতীয় বইয়ের প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করেছিল। একইভাবে ভারতের কলকাতা ও দিল্লিতে বাংলাদেশি বইয়ের প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করা হয়েছিল।

একসময় ইউনেস্কোর সহায়তায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র একটি ট্রাক ভাড়া করে দেশে ভ্রাম্যমাণ বইমেলা চালু করে। পরে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মিনিবাসের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ বইমেলা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়। নানা ধরনের প্রতিকূলতার কারণে ভ্রাম্যমাণ মেলা কিছুকাল বন্ধ ছিল। তবে ২০০৮ সালে তা পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রন্থকেন্দ্রের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন পাঠাগারে অনুদান ও বই দেওয়া হয়।

গ্রন্থকেন্দ্রের রয়েছে একটি বিক্রয়কেন্দ্র। দেশের নামকরা প্রকাশকের নানা ধরনের বই এখানে বিক্রি হয়। এখানে ব্যক্তিগতভাবে অথবা কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে বই কেনার সুযোগ রয়েছে। ‘মহানগর পাঠাগার’ নামে গ্রন্থকেন্দ্রের রয়েছে একটি নিজস্ব সমৃদ্ধ পাঠাগার।

বই উপহার দেওয়ার বিষয়টিকে একটি সামাজিক রীতিতে পরিণত করার মতো গ্রন্থকেন্দ্রের রয়েছে ‘প্রিয়জনকে বই উপহার দিন’ কর্মসূচি। এ উপলক্ষে স্টিকার ও পোস্টার প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের মধ্যে বই-পাঠকে উৎসাহিত করতে গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে ‘আমার প্রিয় বই’ শিরোনামে বই পড়া ও নানা ধরনের রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে বইয়ের পাঠক সংখ্যা অনেক বেড়েছে এবং আগের তুলনায় মানসম্পন্ন প্রকাশনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পেছনে রয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য তৎপরতা ও অবদান।  [ইকবাল আজিজ]