জলবায়ু অঞ্চল

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:৫৭, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

জলবায়ু অঞ্চল  তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুচাপ ও আর্দ্রতার বিশ্লেষণ জলবায়ুর তারতম্যের উপর ভিত্তি করে ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত বাংলাদেশের জলবায়ুকে যে কতকগুলি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারে সেগুলি হচ্ছেঃ (১) ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় শুষ্কপ্রায় (ট্রপিক্যাল-সাবট্রপিক্যাল সেমিঅ্যারিড); (২) ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় আর্দ্রপ্রায় (ট্রপিক্যাল-সাবট্রপিক্যাল সাবহিউমিড); (৩) ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় আর্দ্র (ট্রপিক্যাল-সাবট্রপিক্যাল হিউমিড); (৪) ক্রান্তীয় সামুদ্রিক (ট্রপিক্যার ম্যারিটাইম); (৫) ক্রান্তীয় বৃষ্টিবহুল (ট্রপিক্যাল ওয়েট); এবং (৬) উপক্রান্তীয় বৃষ্টিবহুল (সাবট্রপিক্যার ওয়েট)।

খুলনার পশ্চিম-উত্তরস্থ কিছু এলাকা, যশোর-কুষ্টিয়ার পশ্চিমভাগের সঙ্কীর্ণাংশ, রাজশাহী ও দিনাজপুরের পশ্চিমাংশের বেশকিছু এলাকা ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় শুষ্কপ্রায় জলবায়ুর অন্তর্গত। বাংলাদেশের এ অঞ্চল সর্বাপেক্ষা উষ্ণ এবং শুষ্ক। কোনো কোনো সময় মে মাসের তাপমাত্রা ৪৩° সেলসিয়াস অতিক্রম করে যায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সাধারণভাবে ১৪০০ মিলিমিটারের কম। স্বাভাবিক উদ্ভিজ্জ হিসেবে বাবলা ও অন্যান্য কাঁটাগাছ চোখে পড়ার মতো।

সুন্দরবন এলাকা ব্যতিত খুলনা, বরিশালের পশ্চিমাংশ, পশ্চিম ও পূর্বদিকের কিছু অংশ বাদে যশোর, শুষ্কপ্রায় এলাকা ব্যতীত কুষ্টিয়া-রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া এবং দিনাজপুরের পশ্চিম-দক্ষিণস্থ উল্লেখযোগ্য অংশকে ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় আর্দ্রপ্রায় জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এ অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা ক্রান্তীয় অংশে ২৫.৮৮° এবং উপক্রান্তীয় অংশে ২৪.৪২° সেলসিয়াস। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৫০০ থেকে ১৭০০ মিলিমিটারের মধ্যে, তবে পূর্বাংশে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত সাধারণত ১৮০০ মিলিমিটার সমবর্ষণরেখা অতিক্রম করে না।

বাংলাদেশে ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় আর্দ্র জলবায়ু জলবায়ু অঞ্চলের বিস্তৃতি সর্বাধিক। ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় আর্দ্রপ্রায় জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত অংশটুকু বাদে বরিশাল, নোয়াখালীর উত্তর-পশ্চিমাংশ, কুমিল্লা, ঢাকা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, উত্তর-পূর্বাংশ ব্যতিত ময়মনসিংহ, জামালপুর, রংপুর এবং দিনাজপুরের পূর্বাংশ ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় আর্দ্র জলবায়ুর অন্তর্গত। এ অঞ্চলে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা প্রায় ২৫° সেলসিয়াস এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৮০০ থেকে ২২০০ মিলিমিটার। পূর্বাংশের কোনো কোনো স্থান ২৮০০ মিলিমিটার সমবর্ষণরেখা স্পর্শ করে।

বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চল ক্রান্তীয় সামুদ্রিক জলবায়ুর অন্তর্গত। তাপমাত্রায় ব্যবধান অধিক নয়। খুব কম ক্ষেত্রেই বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩২° সেলসিয়াস ওঠে এবং সর্বনিম্ন ১৩° সেলসিয়াস। চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী এলাকা ব্যতীত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০০ থেকে ৩২০০ মিলিমিটার। চট্টগ্রাম উপকূলে ৩২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়।

উপকূলবর্তী এলাকা ব্যতিত চট্টগ্রাম এবং পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জেলা ক্রান্তীয় বৃষ্টিবহুল জলবায়ুর অন্তর্গত। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩৮° সেলসিয়াস। বৃষ্টিপাত গড়ে ২৬০০ মিলিমিটার। দক্ষিণ দিকে ৩০৪৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়।

দিনাজপুরের রূহীয়া-তেঁতুলিয়া, ময়মনসিংহের উত্তরপুর্বাংশ এবং সিলেট উপক্রান্তীয় বৃষ্টিবহুল জলবায়ুর অঞ্চল। খুব কম ক্ষেত্রেই বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ৩০° সেলসিয়াসের ওপরে উঠে। কোনো কোনো সময় ১০° সেলসিয়াসের নীচেও নেমে যায়। বাংলাদেশের মধ্যে এ অঞ্চলই সর্বাপেক্ষা বৃষ্টিবহুল। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৩৪০০ থেকে ৪৬০০ মিলিমিটার। সিলেটের উত্তর পূর্বাংশে বৃষ্টিপাত ৫৮০০ মিলিমিটার সমবর্ষণরেখা অতিক্রম  করে যায়।  [মাসুদ হাসান চৌধুরী]