জলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:১০, ২ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

জলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী (Aquatic Mammal)  তিন ধরনের স্তন্যপায়ী জলচর জীবন যাপন করে। এরা হচ্ছে মাংসাশী বর্গের সীল ও ওয়ালরাস, Sirenia বর্গের ডুগং ও ম্যানেটি এবং Cetacea বর্গের তিমি ও  ডলফিন। এদের মধ্যে প্রথমোক্ত গোষ্ঠীর সীল ও ওয়ালরাস মেরু ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের শীতল সমুদ্রের বাসিন্দা হওয়ায় বাংলাদেশে এদের উপস্থিতি নেই। অন্য দুই বর্গের জলজ প্রাণীরা গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত উষ্ণ পানিতে জীবনযাপন করে এবং এদের মধ্যে কয়েকটি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলেও দেখা যায়।

ডলফিন

বঙ্গোপসাগরে তিমি দেখা গেলেও বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মধ্যে খুব একটা দেখা যায় না। তবে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে জোয়ারের টানে বেশ কয়েকবার তিমি এসে অল্প পানিতে আটকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রাপ্ততথ্য অনুযায়ী এভাবে সর্বপ্রথম তিমি আটকে পড়ার ঘটনা ঘটেছিল চট্টগ্রামের কাছে ১৮৪২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর।

তখন এ তিমিটিকে Balaenoptera indica বলে শনাক্ত করা হয়েছিল। এর এক শতক পর ১৯৪৩ সাল থেকে শুরু করে বিশ শতকের শেষ পর্যন্ত সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহের, বিশেষ করে কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ ও মহেশখালির উপকূলে তিমি আটকে পড়ার কয়েকটি ঘটনা ঘটে। এসব আটকে পড়া তিমি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার ভিতর এসে খারাপ আবহাওয়ার সময় ঢেউয়ের ধাক্কায় উপকূলে আছড়ে পড়ে বলে ধারণা করা হয়। এ তিমিদের Megaptera novaeangliae নামে শনাক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র Cetacean-দের বেশ কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে একটি স্বাদুপানি অঞ্চলে এবং অন্যরা নদীর খাড়িতে বা সমুদ্রে বিচরণ করে। নদীর স্বাদুপানিতে বসবাসকারী ডলফিনটি Platanista gangetica, আর অন্যগুলি ইরাবতি ডলফিন Orcaella brevirostris, ফিনলেস পর্পয়েস Neophocaena phocaenoides, শর্ট বীকড কমন ডলফিন Delphinus delphis, ইন্দো-প্যাসিফিক হাম্পব্যাকড ডলফিন Sousa chinensis, এবং বটলনোজ ডলফিন Tursiops trunkatus বলে শনাক্ত করা হয়েছে। ইরাবতি ডলফিন, ফিনলেস পর্পয়েস এবং হাম্পব্যাকড ডলফিন উপকূলীয় বাসিন্দা হলেও মাঝে মাঝে খাদ্যের সন্ধানে নদীর মোহনা থেকে উজানে নদীতে উঠে আসে।

Sirenia বর্গের কোনো প্রাণী বাংলাদেশে আছে বলে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ১৯০৮ সালে প্রকাশিত চট্টগ্রামের জেলা গেজেটিয়ারে এ মর্মে উল্লেখ আছে যে, ১৮৮৮ সালের দিকে মহেশখালী দ্বীপের কাছে একবার ডুগং ধরা পড়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে মাতামুহুরী নদীর মোহনায়ও কয়েকবার এ প্রাণী দেখা গেছে। ১৯৭৬ সালে কক্সবাজারের নিকটবর্তী মহেশখালী চ্যানেলে একটি সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যুর বিভিন্ন তথ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মহেশখালী চ্যানেল ও আশেপাশের উপকূলীয় অঞ্চলে ডুগং হয়তবা থাকতেও পারে।

মাংসাশী বর্গের আরেকটি প্রাণীর নাম  ভোঁদড় বা উদবিড়াল। ভোঁদড় Mustelidae বর্গের অন্তর্গত। এরা পানি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে এবং দিনের অধিকাংশ সময় শক্তিশালী পা এবং লেজের সাহায্যে পানিতে সাঁতার কেটে কাটায়। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির ভোঁদড় রয়েছে। এরা হচেছ, এশিয়ান স্মল-ক্লড অটার (Asian Small-clawed Otter, Aonyx cinerea), ইউরেশিয়ান অটার (Eurasian Otter, Lutra lutra) এবং স্মুথ-কোটেড অটার (Smooth Coated Otter, Lutra perspicillata)।

শুশুককে মাছের প্রাপ্যতার ব্যাপারে মানুষের প্রতিযোগী মনে হতে পারে। অথচ জলাশয়ের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবং মৎস্যসম্পদের ব্যবস্থাপনায় এদের অবদানের তুলনায় মাছ খেয়ে যে ক্ষতি করে বলে ধারণা করা হয়, তা অতি নগণ্য। উদাহরণস্বরূপ, শুশুক চলাফেরায় এবং খাদ্য সংগ্রহের সময় যে ঘোড়ার মতো করে মাথা ও লেজ উপরে নিচে দুলিয়ে এবং পার্শ্ব-সাঁতারের সময় বা নদীর তলদেশ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করার সময় পানিতে দ্রবীভূত বিভিন্ন গ্যাস ও পুষ্টি উপাদান মিশ্রিত করে এবং নদীর তলদেশ ‘চষে’, ‘মই’ দিয়ে সেখানে আবদ্ধ বিষাক্ত গ্যাস দূর করে নদীর পানির এবং নদীর তলদেশের উৎপাদন শক্তি বৃদ্ধি করে।

মানুষের আর শুশুকের শারীরস্থান ও শারীরবৃত্ত বিষয়ক (anatomical and physiological) বিশেষত্বের মধ্যে নিকট সম্পর্ক থাকায় শ্বসন ও হূদরোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণায় শুশুক ও অন্যান্য ডলফিন সম্পর্কিত জ্ঞান যথেষ্ট কাজে আসে।

বিভিন্ন ডলফিন মেরিন পার্কে (marine park) রেখে গবেষণা, শিক্ষা ও বিনোদনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা চলে। এদের স্বাভাবিক বিচরণসীমার মধ্যে উপযুক্ত স্থানে ইকো-ট্যুরিজম (eco-tourism)-এর উদ্যোগ নিলে দেশের  পর্যটন শিল্পে পরিবর্তন আনা সম্ভব। এ ছাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ ধরা এক উপভোগ্য দৃশ্য। উপযুক্তভাবে সংগঠিত করা হলে প্রশিক্ষিত ভোঁদড় দেশের পর্যটন শিল্প উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে।  [এ.কে.এম আমিনুল হক]