জনসংখ্যা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:০৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

জনসংখ্যা  ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনুমান করা হয় প্রায় ১৫৮ মিলিয়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় ১.৫৬৬%। এর আগে ১৯৯১ সালের আদমশুমারিতে এই জনসংখ্যা ছিল ১১১.৫ মিলিয়ন যা ২০০১ সালে দাঁড়ায় ১৩০.৫ মিলিয়নে।

সারণি ১  বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (১৮০১-২০০১)।

শুমারি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার
১৮০১ ১৪.৫ -
১৮৫১ ২০.৩ -
১৯০১ ২৮.৯ -
১৯১১ ৩১.৬ ০.৯৪
১৯২১ ৩৩.৩ ০.৬০
১৯৩১ ২৫.৬ ০.৭৪
১৯৪১ ৪২.০ ১.৭০
১৯৫১ ৪৪.২ ০.৫০
১৯৬১ ৫৫.২ ২.২৬
১৯৭৪ ৭৬.৪ ২.৪৮
১৯৮১ ৮৯.৯ ২.৩৫
১৯৯১ ১১১.৫ ২.১৭
২০০১ ১৩০.৫ ১.৫৯

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৮।

২০০৮ সালে বিশ্বব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬০ মিলিয়ন এবং ২০১০ সালে World Population Reference এর ভাষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬৪ মিলিয়ন। কিন্তু The Population and Housing Census Preliminary results 2011 এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৪২ মিলিয়ন। সুতরাং বাংলাদেশের জনসংখ্যা সম্পর্কে নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রদান খুবই দুরূহ।

বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির অন্যতম। ২০৫০ সালে দেশের জনসংখ্যা ২০০১ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হবে বলে অনুমান করা হয়। ২০০১ সালে দেশে পরিবারের সংখ্যা ছিল ২৫.৩১ মিলিয়ন, যার মধ্যে ১৯.৪৫ মিলিয়ন গ্রামীণ এলাকায় এবং ৫.৮৬ মিলিয়ন ছিল নগর এলাকায়। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল গড়ে ৪.৯ জন। এ সময় পুরুষ-মহিলার অনুপাত ছিল ১০৬.৬, শিশু-নারী অনুপাত ছিল ৫২৬ এবং পোষ্যতার অনুপাত ছিল ৮৩। জনসংখ্যার ক্ষেত্রে পাঁচ বছর বা তারচেয়ে বেশি বয়সীদের স্বাক্ষরতার হার ২০০১-এ ছিল ৪২.৫%, এর মধ্যে পুরুষ স্বাক্ষরতার হার ৪৭.৫% ও নারীর হার ৩৮.৩%। এ সময় ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে স্বাক্ষরতার হার ছিল ৪৭.৫ %। অর্থনৈতিক সক্রিয়তার হার ২০০১ ও ১৯৯১ সালে যথাক্রমে ছিল ৩৭.৬ ও ৪৩.১। ২০০১ সালে পরিবারের আয়ের চারটি প্রধান উৎস ছিল কৃষি/বনভূমি/পশুপালন (২৯.২%), কৃষি শ্রম (২০.৬%), ব্যবসা (১৪.৭%) এবং বেতন/মজুরি (১০.৯%)।

অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা স্থিতিশীল ছিল। কারণ তখন জন্ম-মৃত্যুহার ছিল প্রায় সমান। ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিক থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাত ধীরগতিতে বাড়তে থাকে। এই সময়ে দুর্ভিক্ষ ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়সহ নানা ধরনের দুর্যোগের প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের উচ্চ বিস্তারকে এর কারণ বলে মনে করা হয়। ১৯২১ সালের পর থেকে মৃত্যুহার হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি প্রজনন হার বেড়ে যাওয়ায় জনসংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি থেকে প্রজনন হার কমতে শুরু করলেও তা রয়ে গেছে উচ্চ পর্যায়েই। প্রজননের উচ্চ হার এবং জনসংখ্যার বিপুল অংশ যুবাবয়স্ক হওয়ার ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে এমনকি আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে প্রতিস্থাপনযোগ্য প্রজনন হার অর্জিত হলেও আগামী পঞ্চাশ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী (৯৮%) বাঙ্গালি বাকিরা (২%) আদিবাসী ও অবাঙ্গালি মুসলিম।

আদিবাসী জনসংখ্যা ২০০১ সালে আদিবাসী জনসংখ্যা ছিল ১.৪ মিলিয়ন, যা সর্বমোট জনসংখ্যার প্রায় ১.১৩%। ১৯৯১ সালের পরিসংখ্যানে মোট আদিবাসী জনসংখ্যা ছিল ১.২ মিলিয়ন। এ সময়ের প্রধান প্রধান আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলির মধ্যে ছিল চাকমা ২৫২,২৫৮ জন, মারমা ১৫৭,৩০১, ত্রিপুরা ৭৯,৭৭২, মণিপুরী ২৪,৮৮২, সাঁওতাল ২০২,১৬২, গারো ৬৪,২৮০, মুরং ২২, ১৭৮, তঞ্চঙ্গ্যা ২১, ৬৩৯ এবং রাখাইন ১৬, ৯৩২। ২০০১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে দেশে আদিবাসী জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি (মোট জনসংখ্যার ১৮.৫২ শতাংশ), খাগড়াছড়ি (১৩.৯০ শতাংশ) এবং বান্দরবান জেলায় (৯.১৫ শতাংশ)। উক্ত তিনটি জেলায় বসবাসকারী প্রধান আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে- চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মুরং, তঞ্চঙ্গ্যা। অধিকাংশ মণিপুরীরা সিলেটে বসবাস করে, পক্ষান্তরে গারো ও হাজংরা প্রধানত বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকায়। সাঁওতালরা বসবাস করে বৃহত্তর রাজশাহী জেলায়। ২০০১ সালে ২৮৯,৯২৮ পরিবারে মোট ১.৪ মিলিয়ন আদিবাসী বাস করে। ২০০১ সালে বিভাগ অনুযায়ী আদিবাসী জনসংখ্যার বিভাজন থেকে দেখা যায় যে, ৩.২৯ শতাংশ বসবাস করে বরিশালে, ৪৯.৮২ শতাংশ চট্টগ্রামে, ১০.১১ শতাংশ ঢাকায়, ২.২৮ শতাংশ খুলনায়, ২৫.৭৭ শতাংশ রাজশাহী এবং ৭.৭৪ শতাংশ সিলেটে বসবাস করে ।

সারণি ২ ধর্মানুসারে উপজাতীয় জনসংখ্যার বিভাজন, ১৯৯১।

ধর্ম জনসংখ্যা গ্রামীণ
উভয় লিঙ্গ পুরুষ নারী উভয় লিঙ্গ পুরুষ নারী
মোট ১২০৫, ৯৭৮ ৭৯,৬৯৩ ৭৮,৫০৭ ৯৮৮,৩৫৪ ৭৪,৮০৭ ৭৩,৬৩৯
% ১০০.০ ১০০.০ ১০০.০ ১০০.০ ১০০.০ ১০০.০
মুসলমান ১৮.০ ১৮.৪ ১৭.৬ ১৪.৪ ১৪.৫ ১৪.৩
হিন্দু ২১.২ ২১.০ ২১.৩ ২২.৫ ২২.৪ ২২.৭
বৌদ্ধ ৩৬.৭ ৩৬.৯ ৩৬.৫ ৩৫.৮ ৩৬.২ ৩৫.৫
খ্রিস্টান ১১.০ ১০.৮ ১১.২ ১২.২ ১২.১ ১২.৪
অন্যান্য ১৩.১ ১২.৯ ১৩.৩ ১৫.১ ১৪.৯ ১৫.২

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ১৯৯১।

ধর্মীয় বিভাজন ২০০১ এর আদমশুমারি অনুসারে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৮৯.৭ শতাংশ মুসলিম এবং ৯.২ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মালম্বীরা মোট জনসংখ্যার ১.২ শতাংশ। ১৯০১ সাল থেকে মুসলমান জনগোষ্ঠীর অনুপাত নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯০১ সালে মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ (৬৬.১ শতাংশ) ছিল মুসলিম, ২০০১ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯.৭ শতাংশে।

সারণি ৩   ধর্ম অনুসারে জনসংখ্যার অনুপাত (শতকরায়), ১৯০১-২০০১।

শুমারি বছর মোট মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান অন্যান্য
১৯০১ ১০০.০ ৬৬.১ ৩৩.০ - - ০.৯
১৯১১ ১০০.০ ৬৭.২ ৩১.৫ - - ১.৩
১৯২১ ১০০.০ ৬৮.১ ৩০.৬ - - ১.৩
১৯৩১ ১০০.০ ৬৯.৫ ২৯.৪ - ০.২ ১.০
১৯৪১ ১০০.০ ৭০.৩ ২৮.০ - ০.১ ১.৬
১৯৫১ ১০০.০ ৭৬.৯ ২২.০ ০.৭ ০.৩ ০.১
১৯৬১ ১০০.০ ৮০.৪ ১৮.৫ ০.৭ ০.৩ ০.১
১৯৭৪ ১০০.০ ৮৫.৪ ১৩.৫ ০.৬ ০.৩ ০.৩
১৯৮১ ১০০.০ ৮৬.৭ ১২.১ ০.৬ ০.৩ ০.৩
১৯৯১ ১০০.০ ৮৮.৩ ১০.৫ ০.৬ ০.৩ ০.৩
২০০১ ১০০.০ ৮৯.৭ ৯.২ ০.৭ ০.৩ ০.২

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩।

১৯৪৭-১৯৫১ ও ১৯৬১-১৯৭১ সালের মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যার অনুপাত কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পেয়েছিল মুসলিম জনসংখ্যা। এর কারণ, ওই সময় দেশ বিভাজন এবং তারপর পাকিস্তানি সরকারের নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা এবং বিশেষ করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার কারণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনেকে ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মুসলমানদের মধ্যে তুলনামূলক উচ্চ প্রজনন হারও মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি  ১৮০১ সাল থেকে পরবর্তী ১০০ বছরে এ অঞ্চলের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ১৯০১ সালে ২৮.৯ মিলিয়নে উপনীত হয়। এ সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৬৭ শতাংশে স্থির ছিল। ১৯৩১ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মন্থর (১ শতাংশেরও কম) ছিল। সে বছর জনসংখ্যা ৩৫.৩ মিলিয়নে পৌঁছে। তবে পরবর্তী  ৪০ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। রেকর্ডপত্রে দেখা যায় যে, ১৯৪১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মীয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গণনায় প্রকৃত সংখ্যা অপেক্ষা অধিক দেখানোর কারণেই এরূপ ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়। তথাকথিত দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পর পাকিস্তান থেকে বিপুলসংখ্যক লোকের দেশত্যাগের ফলে ১৯৪১ থেকে ১৯৫১ এই সময়ের মধ্যে জনসংখ্যার ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিও পরিলক্ষিত হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৯৫১ সাল থেকেই ছিল খুব বেশি এবং এ বৃদ্ধির হার ১৯৫১-১৯৬১ সময়ে ছিল ১.৯৩%, ১৯৬১-১৯৭৪ সালে ২.৪৮%, ১৯৭৪-১৯৮১ সালে ২.৩৫%, ১৯৮১-১৯৯১ সালে ২.১৭% এবং ১৯৯১-২০০১ সালে ছিল ১.৫৯ শতাংশ।

জনসংখ্যার ভয়াবহ চাপ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ধারাকে স্থবির করে তুলেছে যদিও বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমছে। ১৯৭৪ সালে এ হার ২.৪৮ শতাংশ ছিল, ২০০১ সালে তা কমে প্রায় ১.৫৯ শতাংশ হয় এবং ২০০৬ সালে দাঁড়ায় ১.৪১ শতাংশে। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখনও অনেক বেশি। এমনকি শীঘ্রই যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতিস্থাপনযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছায়, অর্থাৎ জন্মহার ও মৃত্যুহার সমান হয়, তবুও বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ আগামী ৫০ বছর এ দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে বহাল থাকবে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান দুটি উপাদান হলো প্রজনন বা গর্ভধারণ হার ও মৃত্যুহার। ১৯৭০ এর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে স্থূল জন্ম হার ছিল অনেক বেশি, প্রতি হাজারে ৫০। তবে এরপর এ হার হ্রাস পেয়ে ১৯৯৪ সালে দাঁড়ায় প্রতি হাজারে ২৭.৮। স্থূল মৃত্যু হার হ্রাস পাওয়া শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। প্রাক্কলিত স্থুল মৃত্যু হার ছিল প্রতি হাজারে ৪০-এরও বেশি এবং ১৯৩১-১৯৪১ সালের মধ্যে তা প্রথমবারের মতো ৪০-এর নিচে নেমে আসে। সর্বোচ্চ স্থূল মৃত্যুর হার ছিল ১৯১১ থেকে ১৯২১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে প্রতি হাজারে প্রায় ৪৭.৩। এর একটা অন্যতম কারণ ছিল ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর কারণে ১৯১৮ সালে প্রায় ৪ লাখ লোকের মৃত্যু। ২০১১ সালে মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় প্রতি হাজারে প্রায় ৫.৭৫।

১৯২১ সালের পূর্ববর্তী সময়ে যেসব কারণে সর্বোচ্চ হারে মৃত্যু ঘটেছে, সেগুলি হচ্ছে (১) ঘন ঘন মহামারীর প্রাদুর্ভাব, (২) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা, (৩) ঘন ঘন দুর্ভিক্ষের ঘটনা এবং (৪) খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের অভাব। ১৯৪১-১৯৫১ সময়ে স্থূল মৃত্যুহারের সামান্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের বিভাজন সম্পৃক্ত ঘটনাবলীকে চিহ্নিত করা যেতে পারে। পরবর্তীকালে ১৯৫১-১৯৬১ এবং ১৯৬১-১৯৭৪ সময়কালে স্থূল মৃত্যুহার দ্রুত কমতে থাকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম অনুসারে প্রাক্কলিত স্থূল মৃত্যুহার ১৯৯৫ সালে প্রতি হাজারে ৮.৭ এবং ২০০৭ সালে ৫.৬ ছিল। অন্য দিকে স্থূল জন্ম হার ১৯৯৫ সালের প্রতি হাজারে ২৬.৫ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০০৭ সালে হয়েছে ২০.৪। উল্লেখ্য যে, স্থূল জন্ম হার ১৯৬১ সাল পর্যন্ত প্রতি হাজারে ৫০-এর বেশি অথবা সত্তরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৫০-এর কাছাকাছি ছিল, তার পর থেকে এ হার কমতে শুরু করেছে।

জনসংখ্যার ঘনত্ব  ২০১১ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৯৬৪ জন যা ২০০১ সালে ছিল ৮৩৯ জন। ১৯০১ সালে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৯৬ জন এবং নিয়মিতভাবে এ হার বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৫১ সালে ২৯৯, ১৯৮১ সালে ৬০৯ এবং ২০০১ সালে ৮৩৯ জনে উপনীত হয়।

সারণি ৪  প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব, ১৯০১-২০০১।

শুমারি বছর ঘনত্ব পরিবর্তনের হার %
১৯০১ ১৯৬ -
১৯১১ ২১৪ ৯.১৮
১৯২১ ২২৫ ৫.১৪
১৯৩১ ২৪১ ৭.১১
১৯৪১ ২৮৫ ১৮.২৬
১৯৫১ ২৯৯ ৪.৯১
১৯৬১ ৩৭৪ ২৫.০৮
১৯৭৪ ৫১৮ ৩৮.৫০
১৯৮১ ৬০৯ ১৭.৫৭
১৯৯১ ৭৫৫ ২৩.৯৭
২০০১ ৮৮১ ১৬.৬৯

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩।

জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধির এ পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, সাম্প্রতিক দশকগুলিতে ঘনত্ব বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেলেও মোট জনসংখ্যা প্রতি দশকে বিপুল হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৮১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত সময়ে প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গড়ে অতিরিক্ত ২৭২ জন লোক বসবাস শুরু করে, যা ১৯৩১ থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত সময়ের মোট জনসংখ্যা ঘনত্বের প্রায় সমান। জনসংখ্যা ঘনত্ব বৃদ্ধির হার ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত সময়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১১৯ জন ছিল। প্রতি বছর বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বয়স-লিঙ্গ বিভাজন  ২০০১ সালে বাংলাদেশে ৫ বছরের কমবয়সী পুরুষ ও মহিলা ছিল যথাক্রমে ১৩.১% এবং ১২.৯%। ১৯৯১ সালে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৬.১ শতাংশ ও ১৬.৮ শতাংশ। এ সময় ১৫ বছরের কমবয়সী লোকসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের সামান্য কিছু কম, যা ২০০১ সালে কমে দাঁড়ায় ৩৯.৩ শতাংশে। সূচকটি দেশের জনসংখ্যার যুবাবয়সী জনসংখ্যার আধিক্য নির্দেশক।

সারণি ৫  লিঙ্গ বয়স অনুসারে জনসংখ্যার বিভাজন: ১৯৮১-২০০১।

বয়স ২০০১ ১৯৯১ ১৯৮১
উভয় লিঙ্গ পুরুষ নারী উভয় লিঙ্গ পুরুষ নারী উভয় লিঙ্গ পুরুষ নারী
মোট ১০০.০ ১০০.০ ১০০.০ ১০০.০ ১০০.০ ১০০.০ ১০০.০ ১০০.০ ১০০.০
০-৪ ১৩.০ ১৩.১ ১২.৯ ১৬.৫ ১৬.১ ১৬.৮ ১৭.০ ১৬.৬ ১৭.৪
৫-৯ ১৩.৬ ১৩.৮ ১৩.৩ ১৬.৬ ১৬.৬ ১৬.৫ ১৬.৩ ১৬.০ ১৬.৫
১০-১৪ ১২.৮ ১৩.২ ১২.৪ ১২.২ ১২.৬ ১১.৭ ১৩.৪ ১৩.৯ ১২.৯
১৫-১৯ ৯.৭ ৯.৯ ৯.৫ ৮.৪ ৮.৩ ৮.৫ ৯.৪ ৯.২ ৯.৫
২০-২৪ ৮.৮ ৭.৬ ১০.১ ৮.৩ ৭.৫ ৯.২ ৭.৮ ৭.২ ৮.৪
২৫-২৯ ৮.৭ ৭.৭ ৯.৮ ৮.৫ ৭.৯ ৯.২ ৭.৪ ৭.২ ৭.৫
৩০-৩৪ ৭.১ ৬.৮ ৭.৪ ৬.২ ৬.২ ৬.৩ ৫.৭ ৫.৫ ৫.৯
৩৫-৩৯ ৬.৫ ৬.৬ ৬.৩ ৫.৬ ৬.০ ৫.৩ ৫.১ ৫.৩ ৪.৯
৪০-৪৪ ৫.০ ৫.৪ ৪.৬ ৪.৩ ৪.৫ ৪.২ ৪.২ ৪.৩ ৪.২
৪৫-৪৯ ৩.৭ ৪.১ ৩.৩ ৩.৪ ৩.৫ ৩.১ ৩.৩ ৩.৫ ৩.০
৫০-৫৪ ৩.২ ৩.৪ ৩.১ ২.৯ ৩.০ ২.৮ ৩.১ ৩.২ ৩.০
৫৫-৫৯ ১.৯ ২.১ ১.৮ ১.৮ ২.০ ১.৭ ১.৯ ২.১ ১.৭
৬০-৬৪ ২.৩ ২.৪ ২.২ ২.১ ২.২ ২.০ ২.২ ২.৩ ২.১
৬৫-৬৯ ১.২ ১.৩ ১.১ ১.০ ১.২ ০.৯ ১.০ ১.২ ০.৯
৭০+ ২.৭ ২.৯ ২.৪ ২.২ ২.৫ ১.৯ ২.৪ ২.৬ ২.১

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩।

দেশের জনসংখ্যার আর একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রজননক্ষম মহিলাদের আধিক্য। ১৯৯১ সালের ৪২.৩% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০১ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৫১ শতাংশে। ৬০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের জনসংখ্যার অনুপাত অবশ্য এখনও তুলনামূলকভাবে কম। ১৯৯১ সালের ৫.৪% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০১ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৬.১ শতাংশ। তবে অদূর ভবিষ্যতে এ অনুপাত জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিধারার সাথে সঙ্গতি রেখে অতিদ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হয়।

নির্ভরশীলতার অনুপাত  নির্ভরশীলতার অনুপাত (১৫-৫৯ বছর বয়সী জনসংখ্যা এবং ০-১৪ বছর এবং ৬০ বছর ও এরচেয়ে বেশি বয়সী জনসংখ্যা) থেকে দেখা যায় যে, ১৯১১ থেকে ১৯৫১ পর্যন্ত সময়ে উক্ত অনুপাত ৮১ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৮৮ হয়েছে। এরপর ১৯৬১-১৯৯১ পর্যন্ত সময়ে এ অনুপাত ১০০’রও (১০২ থেকে ১১৬) বেশি ছিল। নির্ভরশীলতার সর্বোচ্চ অনুপাত (১১৬) দেখা যায় ১৯৭৪ সালে, এরপর থেকে তা কমতে শুরু করে। ১৯৯১ সালে তা হ্রাস পেয়ে ১০২ এবং ২০০১ সালে ৮৩ হয়। বর্তমানে এ অনুপাত হ্রাস পাবার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে এবং আশা করা যায় পরবর্তী কয়েক দশকে ১৫-৫৯ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধির কারণে এটা আরও হ্রাস পাবে। পরবর্তী কয়েক দশকে নির্ভরশীলতার অনুপাত দ্রুত হ্রাস পাওয়ার দরুণ অর্থনৈতিক সুবিধা বিবেচনায় জনসংখ্যা দেশের অনুকুলে থাকবে। যদি জনসংখ্যা নীতিতে উক্ত বর্ধিত শ্রম শক্তিকে যথাযথ জনশক্তি পরিকল্পনার মাধ্যমে বিবেচনায় নেওয়া হয় তাহলে দেশ অতি দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। অন্য কথায়, মানব মূলধন একত্রীকরণ পরিকল্পনার মাধ্যমে উক্ত জনসংখ্যাতাত্ত্বিক সুবিধাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

সারণি ৫  বিস্তৃত বয়সের গ্রুপ অনুসারে জনসংখ্যা এবং নির্ভরশীলতার অনুপাত, শতকরা হিসেবে, ১৯১১-২০০১।

শুমারি বছর মোট ০-১৪ ১৫-৫৯ ৬০+ পোষ্যতার অনুপাত
১৯১১ ১০০.০ ৪২.৩ ৫৩.৩ ৪.৪ ৮৮
১৯২১ ১০০.০ ৪২.৩ ৫৩.৬ ৪.১ ৮৭
১৯৩১ ১০০.০ ৪১.৯ ৫৪.৯ ৩.২ ৮২
১৯৪১ ১০০.০ ৪১.৪ ৫৫.১ ৩.৫ ৮১
১৯৫১ ১০০.০ ৪২.১ ৫৩.৫ ৪.৪ ৮৭
১৯৬১ ১০০.০ ৪৬.০ ৪৮.৮ ৫.২ ১০৫
১৯৭৪ ১০০.০ ৪৮.০ ৪৬.৩ ৫.৭ ১১৬
১৯৮১ ১০০.০ ৪৬.৭ ৪৭.৮ ৫.৫ ১০৯
১৯৯১ ১০০.০ ৪৫.১ ৪৯.৫ ৫.৪ ১০২
২০০১ ১০০.০ ৩৯.৩ ৫৪.৬ ৬.১ ৮৩

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩।

বৈবাহিক অবস্থা  ১৯৯১ সালে বৈবাহিক অবস্থার ভিত্তিতে জনসংখ্যার বিভাজন থেকে দেখা যায় যে, ১০ ও তদূর্ধ্ব বয়সের সকল পুরুষদের মধ্যে কখনও বিয়ে করেনি, সম্প্রতি বিয়ে করেছে এবং মৃতদার, তালাকপ্রাপ্ত অথবা বিচ্ছেদপ্রাপ্ত ছিল যথাক্রমে ৪২.১ %, ৫৭.২% এবং ০.৭%। নারীদের ক্ষেত্রে এ অনুপাত ছিল যথাক্রমে ২৫.২%, ৬৪.৮% ও ১০.০%। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত সময়ে অবিবাহিত পুরুষের সংখ্যা ৪২.১% থেকে সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩.৬% হয়। একইভাবে নারীদের ক্ষেত্রেও তা ১৯৯১ সালের ২৫.২% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০১ সালে হয়েছে ২৮.৭%। সাম্প্রতিক সময়ে বিবাহিত পুরুষের সংখ্যা ১৯৯১-এর ৫৭.২% থেকে হ্রাস পেয়ে ২০০১ সালে হয় ৫৫.৮%। নারীদের এ হার ১৯৯১-এর ৬৪.৮% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০১ সালে ৬৩.৩% হয়। বৈধব্য অথবা বিচ্ছেদের মুখোমুখি হওয়া জনসংখ্যা ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত পুরুষের ক্ষেত্রে ০.৭% থেকে ০.৬% এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১০% থেকে ৮% হ্রাস পায়। পরিসংখ্যান অনুসারে ৩০ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী পুরুষদের মধ্যে প্রায় সবাই বিবাহিত, নারীদের ক্ষেত্রে এ বয়সসীমা ২৫ বছর। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের বিবাহের হারও ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে কমেছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে তা ৫% থেকে ৩.৯% এ হ্রাস পেয়েছে।

সারণি ৭   বৈবাহিক অবস্থা অনুসারে ১০ বছর ও এর বেশি বয়সী পুরুষের সংখ্যা, বয়স  শতকরায়, ১৯৭৪-২০০১।

বয়স ২০০১ ১৯৯১ ১৯৮১ ১৯৭৪
কখনো বিয়ে করেনি সাম্প্রতিক বিবাহিত বৈধ্যব্য বা তালাক প্রাপ্ত কখনো বিয়ে করেনি সাম্প্রতিক বিবাহিত বৈধ্যব্য বা তালাক প্রাপ্ত কখনো বিয়ে করেনি সাম্প্রতিক বিবাহিত বৈধ্যব্য বা তালাক প্রাপ্ত কখনো বিয়ে করেনি সাম্প্রতিক বিবাহিত বৈধ্যব্য বা তালাক প্রাপ্ত
মোট ৪৩.৬ ৫৫.৮ ০.৬ ৪২.১ ৫৭.২ ০.৭ ৪২.৮ ৫৫.৯ ১.৩ ৪৩.৩ ৫৩.৯ ২.৮
১০-১৪ ৯৮.৮ ১.২ ০.০ ৯৯.৫ ০.৫ - ৯৯.০ ১.০ - ৯৯.৩ ০.৭ -
১৫-১৯ ৯৬.০ ৩.৯ ০.১ ৯৫.০ ৪.৯ ০.১ ৯৯.৩ ৬.৬ ০.১ ৯২.৩ ৭.৫ ০.২
২০-২৪ ৬৯.৩ ৩০.৫ ০.২ ৬৮.৪ ৩১.৪ ০.২ ৫৯.৭ ৩৯.৯ ০.৪ ৬০.১ ৩৯.১ ০.৮
২৫-২৯ ৩১.৭ ৬৮.০ ০.৩ ২৬.৪ ৭৩.৩ ০.৩ ২১.২ ৭৮.৩ ০.৫ ২২.৪ ৭৬.৩ ১.২
৩০-৩৪ ১১.৬ ৮৮.১ ০.৩ ৭.২ ৯২.৫ ০.২ ৬.৩ ৯৩.১ ০.৬ ৫.৭ ৯৩.০ ১.৩
৩৫-৩৯ ৪.৪ ৯৫.৩ ০.৩ ২.১ ৯৭.৬ ০.৩ ২.৩ ৯৭.০ ০.৭ ২.২ ৯৬.৬ ১.২
৪০-৪৪ ২.৯ ৯৬.৬ ০.৪ ১.১ ৯৮.৪ ০.৫ ১.৯ ৯৭.১ ১.০ ১.৫ ৯৬.৮ ২.১
৪৫-৪৯ ২.১ ৯৭.৪ ০.৫ ০.৬ ৯৮.৭ ০.৭ ১.২ ৯৭.৫ ১.৩ ১.১ ৯৬.৮ ২.১
৫০-৫৪ ২.৭ ৯৬.৩ ১.০ ০.৭ ৯৮.১ ১.২ ১.৭ ৯৬.৩ ২.০ ০.৮ ৯৫.৮ ৩.২
৫৫-৫৯ ২.৪ ৯৬.৩ ১.৩ ০.৪ ৯৮.০ ১.৬ ১.২ ৯৬.২ ২.৬ ০.৮ ৯৫.৪ ৩.৮
৬০+ ৪.০ ৯২.১ ৩.৯ ০.৬ ৯৫.১ ৪.৩ ০.৭ ৯০.৭ ৮.৬ ০.৮ ৯০.২ ৯.০

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩।

অবশ্য ২০ বছরের কম বয়সী নারীদের মধ্যে সাম্প্রতিক বিবাহিতদের অনুপাত অনেক বেশি। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ১০-১৪ বছর বয়সী নারীদের ৩% এবং ১৫-১৯ বছর বয়সী নারীদের প্রায় ৫০% ছিল সাম্প্রতিক বিবাহিত। যদিও এটা ২০০১ সালে ৩৬.৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। এটি বাংলাদেশে নারীদের বাল্য বিবাহের ব্যাপকতা নির্দেশ করে। বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত অথবা বিচ্ছেদ হওয়া নারীদের অনুপাত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। ১৯৯১ সালে ১০-১৪ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এ অনুপাত ছিল ০.২%, আর ৬০ বছর ও এর বেশি বয়সী গ্রুপের ক্ষেত্রে ৫৬.৩%। অন্যদিকে ২০০১ সালে এ অনুপাত ১০-১৪ বছর বয়সী গ্রুপের ক্ষেত্রে ০.৪% এবং ৬০ ও এর বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে ৪৬.৫% ছিল। দেখা যাচ্ছে যে ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত সময়ে বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত অথবা বিচ্ছেদ হওয়া নারীদের শতকরা হার হ্রাস পেয়েছে।

সারণি ৮ বৈবাহিক অবস্থা অনুসারে ১০ বছর ও এর বেশি বয়সী নারীর সংখ্যা, বয়স শতকরায়, ১৯৭৪-২০০১।

বয়স ২০০১ ১৯৯১ ১৯৮১ ১৯৭৪
কখনো বিয়ে করেনি সাম্প্রতিক বিবাহিত বৈধ্যব্য বা তালাক প্রাপ্ত কখনো বিয়ে করেনি সাম্প্রতিক বিবাহিত বৈধ্যব্য বা তালাক প্রাপ্ত কখনো বিয়ে করেনি সাম্প্রতিক বিবাহিত বৈধ্যব্য বা তালাক প্রাপ্ত কখনো বিয়ে করেনি সাম্প্রতিক বিবাহিত বৈধ্যব্য বা তালাক প্রাপ্ত
মোট ২৮.৭ ৬৩.৩ ৮.০ ২৫.২ ৬৪.৮ ১০.০ ২৩.৭ ৬৩.৪ ১২.৯ ২৪.৪ ৬১.২ ১৪.৪
১০-১৪ ৯৬.৪ ৩.২ ০.৪ ৯৬.৮ ৩.০ ০.২ ৯৮.০ ৭০.০ - ৯০.৫ ৮.৮ ০.৭
১৫-১৯ ৬২.৫ ৩৬.৪ ১.১ ৪৮.৭ ৪৯.৬ ১.৭ ৩১.৩ ৬৫.৪ ৩.৩ ২৪.৫ ৭১.৮ ৩.৭
২০-২৪ ১৬.৯ ৮১.২ ১.৯ ১০.৫ ৮৬.৬ ২.৯ ৫.১ ৯০.৯ ৪.০ ৩.২ ৯২.৯ ৩.৯
২৫-২৯ ৬.১ ৯১.৩ ২.৫ ২.৪ ৯৪.০ ৩.৬ ১.৩ ৯৪.৪ ৪.৩ ০.৯ ৯৫.২ ৩.৯
৩০-৩৪ ৩.৪ ৯২.৫ ৪.১ ১.১ ৯৩.৮ ৫.১ ১.০ ৯২.৯ ৬.১ ০.৬ ৯৩.৪ ৬.০
৩৫-৩৯ ২.২ ৯১.৮ ৬.০ ০.৬ ৯২.১ ৭.৩ ০.৪ ৮৯.৮ ৯.৬ ০.৪ ৮৯.৮ ৯.৮
৪০-৪৪ ২.২ ৮৭.২ ১০.৫ ০.৬ ৮৬.৯ ১২.৫ ০.৭ ৮১.৯ ১৭.৪ ০.৫ ৮১.৪ ১৮.১
৪৫-৪৯ ২.০ ৮৩.৯ ১৪.১ ০.৪ ৮১.৭ ১৭.৯ ০.৩ ৭৪.৫ ২৫.২ ০.৩ ৭৫.১ ২৪.৬
৫০-৫৪ ২.৮ ৭৫.৫ ২১.১ ০.৫ ৭০.৬ ২৮.৯ ১.৪ ৬২.৩ ৩৬.৩ ০.৩ ৬০.৩ ৩৯.৪
৫৫-৫৯ ২.৮ ৭২.১ ২৫.১ ০.৪ ৬৪.৩ ৩৫.২ ০.৭ ৫৪.৪ ৪৪.৯ ০.৪ ৫২.৯ ৪৬.৭
৬০+ ৫.৬ ৪৭.৯ ৪৬.৫ ০.৮ ৪২.৯ ৫৬.৩ ০.৫ ৩২.৯ ৬৬.৬ ০.৪ ২৭.৩ ৭২.৩

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩।

১৯৩১ সালে পুরুষের জন্য বিয়ের প্রকৃত বয়স ছিল ১৯ বছর, যা ঐ সময়ে নারীদের ক্ষেত্রে ছিল ১২.৬ বছর। পুরুষ ও নারীদের বিয়ের বয়সের মধ্যে পার্থক্য ছিল ৬.৪ বছর। আদমশুমারি অনুসারে ১৯৯১ সালে বিয়ের প্রকৃত বয়স পুরুষদের ক্ষেত্রে ২৪.২ এ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১৮.১ এ বৃদ্ধি পায়। ২০০১ সালে তা আরো বৃদ্ধি পেয়ে পুরুষদের ক্ষেত্রে ২৫.২ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১৯ বছর হয়। তবে ১৯৩১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত সময়ে পুরুষ ও নারীর বিয়ের প্রকৃত বয়সের পার্থক্য ৬ বছরই রয়ে গেছে।

সারণি ৯  লিঙ্গ ও স্থানভিত্তিক  বিবাহের গড় বয়স, ১৯৭৪-২০০১।

স্থান ১৯৭৪ ১৯৮১ ১৯৮২ ১৯৯১ ২০০১
পুরুষ নারী পুরুষ নারী পুরুষ নারী পুরুষ নারী পুরুষ নারী
বাংলাদেশ ২৪.০ ১৫.৯ ২৫.৮ ১৭.৮ ২৫.৬ ১৭.৭ ২৪.৯ ১৮.০ ২৫.৩ ১৯.০
শহর ২৫.৬ ১৭.৮ ২৭.৮ ১৯.১ ২৭.১ ১৮.৭ ২৬.৩ ১৯.১ ২৬.৮ ২০.০
পল্লী ২৩.৭ ১৬.৩ ২৫.৪ ১৭.৬ ২৫.৭ ১৭.৫ ২৪.৪ ১৭.৬ ২৪.৮ ১৮.৬

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩।

নগরায়ণ  ১৯৬১ সাল থেকে বাংলাদেশে নগরায়ণের প্রক্রিয়া দ্রুততর হতে থাকে। ১৯০১ সালের আদমশুমারির পরিসংখ্যানে শহর এলাকায় ০.৭ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করে বলে রেকর্ড করা হয়, তবে তা ধীরগতিতে বেড়ে গিয়ে ১৯৬১ সালে দাঁড়ায় ২.৬ মিলিয়নে। নগরবাসী জনসংখ্যা ১৯০১ সালের ২.৪% থেকে বেড়ে গিয়ে ১৯৬১ সালে ৫.২% দাঁড়ায়। তবে ১৯৬১ সাল থেকে শহরের জনসংখ্যার শতকরা হার দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে শহরের জনসংখ্যা ছিল ৬.২৭ মিলিয়ন এবং পরে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে তা বেড়ে গিয়ে যথাক্রমে ২০.৮৭ ও ২৮.৬০ মিলিয়নে দাঁড়ায়। ১৯০১ সালে শহরের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ২.৪৩% ছিল এবং ২০০১ সালে তা দ্রুত বেড়ে গিয়ে ২৩.১ % দাঁড়ায়। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ শহরাঞ্চলে বসবাস করে। ১৯৯১-২০০১ দশকে শহুরে জনসংখ্যার বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ৩.১৫ %। যা ২০০৫-২০১০ সালের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩.৫%।

সারণি ১০  শহুরে জনসংখ্যার অগ্রগতি, ১৯০১-২০০১।

শুমারি বছর শহুরে জনসংখ্যা বার্ষিক বৃদ্ধির হার (সূচক)
সংখ্যা শতকরা  হার
১৯০১ ৭০২০৩৫ ২.৪৩ -
১৯১১ ৮০৭০২৪ ২.৫৫ ১.৩৯
১৯২১ ৮৭৮৪৮০ ২.৬৪ ০.৮৫
১৯৩১ ১০৭৩৪৮৯ ৩.০২ ২.০০
১৯৪১ ১৫৩৭২৪৪ ৩.৬৬ ৩.৫৯
১৯৫১ ১৮১৯৭৭৩ ৪.৩৩ ১.৬৯
১৯৬১ ২৬৪০৭২৬ ৫.১৯ ৩.৭২
১৯৭৪ ৬২৭৩৬০২ ৮.৭৮ ৬.৬৬
১৯৮১ ১৩২২৮১৬৩ ১৫.১৮ ১০.৬৬
১৯৯১ ২০৮৭২২০৪ ১৯.৬৩ ৪.৫৬
২০০১ ২৮৬০৫২০০ ২৩.১ ৩.১৫

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩।

২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশের চারটি সর্বাধিক জনবহুল নগরী ছিল ঢাকা (১০.৭১ মিলিয়ন), চট্টগ্রাম (৩.৩৮ মিলিয়ন), খুলনা (১.৩৪ মিলিয়ন) এবং রাজশাহী (০.৭০ মিলিয়ন)। বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের তুলনায় শহুরে জনসংখ্যা অনেক দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সারণি ১১  মেট্রোপলিটন এলাকায়  ১৯৯১-২০০১ দশকে জনসংখ্যার পরিসংখ্যান।

এসএমএ ২০০১ ১৯৯১ দশক বৃদ্ধির  হার
উভয় লিঙ্গ পুরুষ মহিলা উভয় লিঙ্গ পুরুষ মহিলা
ঢাকা ১০৭১২২০৬ ৫৯৭৮৪৮২ ৪৭৩৩৭২৪ ৬৮৪৪১৩১ ৩৮৩৩০৪১ ৩০১১০৯০ ৫৬.৫
চট্টগ্রাম ৩৩৮৫৮০০ ১৮৪৩২৩০ ১৫৪২৫৭০ ২৩৪৮৪২৮ ১৩৪২২৬৯ ১০০৬১৫৯ ৪৪.২
খুলনা ১৩৪০৮২৬ ৭১১৮৪৫ ৬২৮৯৮১ ১০০১৮২৫ ৫৪৪৮৬০ ৪৫৬৯৬৫ ৩৩.৮
রাজশাহী ৭০০১৪০ ৩৭২৮৯৫ ৩২৭২৪৫ ৫৪৪৬৪৯ ২৮৫০৯৯ ২৫৯৫৫০ ২৮.৫

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩।

শহুরে জনসংখ্যা ১৯৪১ সালে থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ের তুলনায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়। বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে চট্টগ্রাম ৪৪.২%, খুলনা ৩৩.৮% এবং রাজশাহী বিভাগের ২৮.৫%-এর তুলনায় ঢাকায় সর্বোচ্চ ৫৬.৫% ছিল। একই সময়কালে ১০০,০০০ অধিক জনসংখ্যার শহরগুলির মধ্যে সিলেটে সর্বাধিক ১৭২.৮%, যশোরে ৩৭.৬%, বগুড়ায় ৩৪.৯%, বরিশালে ৩২% এবং রংপুরে ৩১.৬% জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

সারণি ১২  ১৯৯১-২০০১ দশকে ১০০,০০০ অধিক জনসংখ্যার শহর।

শহর জনসংখ্যা দশক বৃদ্ধির হার
২০০১ ১৯৯১
সিলেট ৩২০২৮০ ১১৭৩৯৮ ১৭২.৮
রংপুর ২৫১৮৪০ ১৯১৩৯৮ ৩১.৬
বরিশাল ২৫৪৬৬০ ১৭০২৩২ ৩২.০
ময়মনসিংহ ২০৯৬৬০ ১৮৮৭১৩ ১১.১
যশোর ১৯২২৪০ ১৩৯৭১০ ৩৭.৬
নবাবগঞ্জ ১৬৩৪০০ ১৩০৫৭৭ ২৫.১
বগুড়া ১৬২১৪০ ১২০১৭০ ৩৪.৯
কুমিল্লা ১৬০৯২০ ১৩৫৩১৩ ১৮.৯
দিনাজপুর ১৫৬৩০০ ১২৭৮১৫ ২২.৩
সিরাজগঞ্জ ১২৯৭২০ ১০৭৯০২ ২০.২
জামালপুর ১২৮০৬০ ১০৩৫৫৬ ২৩.৭
মাধবদী ১২২৭৮০ - -
টাঙ্গাইল ১১৯০৬০ ১০৬০০৪ ১২.৩
পাবনা ১১২৪৬০ ১০৩২৭৭ ৮.৯
নওগাঁ ১০৭১৬০ ১০১২৬৬ ৫.৮
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১০৪১২০ ১০৯০৩২ -৪.৫
সৈয়দপুর ১০০২৪০ ১০৪৭৭১ -৪.৩

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩।

সাক্ষরতা যিনি লিখতে পড়তে পারেন এমন ব্যক্তিকে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন বিবেচনা করে ২০০১ সালে ৭ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার ছিল ৪৫.৩২ শতাংশ। পুরুষের মধ্যে এ হার ৫০% এবং নারীদের ক্ষেত্রে ছিল ৪১%। ১৯৯১ সালে স্বাক্ষরতার হার ছিল ৩২.৪% যেখানে পুরুষ ও নারীদের স্বাক্ষরতার হার ছিল যথাক্রমে ৩৮.৯% ও ২৫.৫%। ১৯৮১ সালে স্বাক্ষরতার হার ছিল ২৬.০% যাতে পুরুষ ও নারীদের স্বাক্ষরতার হার ছিল একাধারে ৩৩.৮% ও ১৭.৫%। ১৯৮১-১৯৯১ দশকে নারীদের ক্ষেত্রে স্বাক্ষরতার বার্ষিক বৃদ্ধির হার (৩.৮৪%) পুরুষদের  তুলনায় (১.৪২%) অধিক ছিল। ১৯৯১-২০০১ সময়কালেও একই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।

সারণি ১৩  লিঙ্গ অনুসারে ৭ বছর ও  তদুর্ধ্ব বয়সের স্বাক্ষরতার হার, ১৯৭৪-২০০১।

বছর উভয় লিঙ্গ পুরুষ মহিলা
১৯৭৪ ২৬.৮৩ ৩৬.৬২ ১৬.৪৩
১৯৮১ ২৫.৯৯ ৩৩.৮৪ ১৭.৫২
১৯৯১ ৩২.৪০ ৩৮.৯০ ২৫.৪৫
২০০১ ৪৫.৩২ ৪৯.৫৬ ৪০.৮৩

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩।

গর্ভধারণ ও গর্ভরোধ  গর্ভধারণ বা প্রজনন হার হ্রাসে কার্যকর তিনটি প্রধান বিষয় হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে জন্ম নিরোধ ব্যবস্থার ব্যবহার, বাল্যবিয়ের হার কিছুটা হ্রাস, ২০ বছরের নীচের বয়সী নারীদের বিয়ের প্রবণতা কিছুটা কমে যাওয়া এবং নগরায়ণের গতি। বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক অবস্থার কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের কারণে গর্ভধারণ হারে হ্রাস ঘটে নি। সরকার প্রচলিতভাবে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার প্রদান করে আসছে। এরই ফলস্বরূপ প্রজননক্ষম ব্যক্তিদের জন্মনিয়ন্ত্রণে অনুপ্রাণিত করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়, সেবামূলক কার্যাবলি সবার দ্বারে দ্বারে পৌঁছানো হয় এবং পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মতো স্থায়ী কেন্দ্রসমূহেও সেবা প্রদান করা হয়।

সারণি ১৪   বয়স ভিত্তিক গর্ভধারণ হার (প্রতি ১০০০ মহিলা) এবং মোট গর্ভধারণ হার, বাংলাদেশ, ১৯৭৫-২০০৭।

বয়স ১৯৭৫ বিএফএস ১৯৮৯ বিএফএস ১৯৯১ সিপিএস ১৯৯৩-৯৪ বিডিএইচএস ১৯৯৬-৯৭ বিডিএইচএস ১৯৯৯-২০০০ বিডিএইচএস ২০০৪ বিডিএইচএস ২০০৭ বিডিএইচএস
১৫-১৯ ১০৯ ১৮২ ১৭৯ ১৪০ ১৪৭ ১৪৪ ১৩৫ ১২৬
২০-২৪ ২৮৯ ২৬০ ২৩০ ১৯৬ ১৯২ ১৮৮ ১৯২ ১৭৩
২৫-২৯ ২৯১ ২২৫ ১৮৮ ১৫৮ ১৫০ ১৬৫ ১৩৫ ১২৭
৩০-৩৪ ২৫০ ১৬৯ ১২৯ ১০৫ ৯৬ ৯৯ ৮৩ ৭০
৩৫-৩৯ ১৮৫ ১১৪ ৭৮ ৫৬ ৪৪ ৪৪ ৪১ ৩৪
৪০-৪৪ ১০৭ ৫৬ ৩৬ ১৯ ১৮ ১৮ ১৬ ১০
৪৫-৪৯ ৩৫ ১৮ ১৩ ১৪
মোট উর্বরতার হার ৬.৩ ৫.১ ৪.৩ ৩.৪ ৩.৩ ৩.৩ ৩.০ ২.৭

নোট  ১৯৭৫ ও ১৯৮৯ বিএফএস এর জন্য হার জরিপের ৫ বছর পূর্বের হবে; অন্য জরিপের জন্য হার জরিপের ৩ বছর পূর্বের হবে। সূত্র ২০০৭ বিডিএইচএস (নিপোর্ট, ২০০৯: ৫০)।

প্রাথমিকভাবে পরিবার পবিকল্পনা কর্মীরা দীর্ঘমেয়াদী উপকরণ যেমন বন্ধ্যাকরণ এবং আইইউডি বা জরায়ূর অভ্যন্তরে স্থাপনযোগ্য পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য উদ্ধুদ্ধ করতেন, তবে ১৯৯০ দশকের শুরু থেকে পদ্ধতি ব্যবহারে এক ধরনের পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারকারী খাবার বড়ি এবং ইনজেকশন জাতীয় স্বল্পমেয়াদী প্রত্যাহারযোগ্য পদ্ধতি পছন্দ করেন। পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের পরিপূরক হিসেবে তরুণী মেয়েদের মধ্যে বয়সের পূর্বে বিয়ে না করার প্রবণতা বৃদ্ধি, স্বাক্ষরতার হার ও বিদ্যালয়ে অবস্থানকাল বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ণ প্রভৃতি উপাদান গর্ভধারণ হ্রাসে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে মোট গর্ভধারণ হার ছিল ৬.৩, যা ১৯৯৯-২০০০ সালে এ হার হ্রাস পেয়ে ৩.৩ এবং ২০০৭ সালে ২.৭ হয়। এ নিয়ন্ত্রিত গর্ভধারণ হার হ্রাস নির্দেশ করে যে, বিগত ২৫ বছরে সন্তান জন্মদানে সক্ষম প্রত্যেক মহিলা গড়ে তিনটির অধিক সন্তান জন্মদান এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। গর্ভনিরোধক দ্রব্যাদির লভ্যতা ১৯৭৫ সালে ৭.৭% থেকে ১৯৯৯-২০০০ সালে ৫৪% এবং ২০০৭ সালে ৫৫.৮% বৃদ্ধিকে গর্ভধারণ হার হ্রাসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গর্ভনিরোধক দ্রব্যাদির লভ্যতা বৃদ্ধি মানব উন্নয়ন অবস্থার কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছাড়াই ঘটেছে। এখানে গর্ভধারণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বেশ জোরালো কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে গর্ভনিরোধক দ্রব্যাদির চাহিদা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ২০০৭ সালে  ৪৭.৪৫ শতাংশ বিবাহিত নারী যেকোনো আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করছে। সর্বাধিক জনপ্রিয় পদ্ধতি ছিল খাবার বড়ি (২৮.৫%), ইনজেকশন জাতীয় সামগ্রী (৭%) এবং মহিলাদের স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ (৫%)। এর পাশাপশি স্বল্প পরিসরে পুরুষদের ভ্যাসেকটমিও চালু আছে।

অবিবাহিতের অনুপাত  বস্ত্তত বিবাহের গড় বয়স বিভিন্ন বয়সে নারী ও পুরুষের বিবাহের বয়সের খুব ভাল পরিমাপক নয়। ১৫-১৯ বছর বয়সের অবিবাহিত নারীর অনুপাত ১৯৮১ সালে ৩১.৩% এবং ১৯৯১ সালে ৪৮.৭% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০১ সালে ৬২.৫% হয়। অবিবাহিতের অনুপাত বৃদ্ধি কম বয়সীদের বিয়ের হারে পরিবর্তন চিহ্নিত করছে। একইভাবে অবিবাহিতের অনুপাত ১৯৯১ সালের ১০.৫% থেকে ২০০১ সালে বেড়ে ২০-২৪ বছর বয়স শ্রেণির জন্য ১৬.৯% এ দাঁড়িয়েছে।

মৃত্যুহার হ্রাস  স্থূল মৃত্যুহার হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে নবজাতক/শিশু মৃত্যুহার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় এখনো আশঙ্কাজনক। ৫০ বছরেরও আগে মৃত্যুহার  হ্রাস পেতে শুরু করে এবং স্থুল মৃত্যুহার এ সময়কালে প্রতি হাজারে ৪১ থেকে ৫.৬  হ্রাস পায়। শিশু মৃত্যুহার ১৯৯১-২০০৩ সময়কালে ছিল হাজারে ৬৫ তা ২০০২-২০০৬ সময়কালে কমে প্রতি হাজারে ৫২ তে দাঁড়িয়েছে। জন্মকালীন সময়ে এবং জন্মের অব্যবহিতকাল পরের সময়ে শিশু মৃত্যুহার থেকে দেখা যায় শিশু মৃত্যুহার রোধে এখনো কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। অবশ্য ১৯৮৯-৯৩ সালে যেখানে সদ্যোজাত প্রতিহাজার শিশুর মধ্যে ৮৭ জনের মৃত্যু হতো, সেখানে ১৯৯৫-৯৯ সালে এ সংখ্যা প্রতি হাজারে ৬৬ জনে হ্রাস পেয়েছে। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, শিশুমৃত্যুর হার যথেষ্ট কমেছে।

সারণি ১৫  ১৯৮৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নবজাতক ও শিশু  মৃত্যুর প্রকৃতি।

মৃত্যু ১৯৮৯-৯৩ বিডিএইচএস ১৯৯২-৯৬ বিডিএইচএস ১৯৯৫-৯৯ বিডিএইচএস ১৯৯৯-২০০৩ বিডিএইচএস ২০০২-২০০৬ বিডিএইচএস
নবজাতক ৮৭ ৮২ ৬৬ ৬৫ ৫২
শিশু ৫০ ৩৭ ৩০ ২৪ ১৪
৫ বছরের কম বয়সী ১৩৩ ১১৬ ৯৪ ৮৮ ৬৫

সূত্র ২০০৭ বিডিএইচএস (নিপোর্ট, ২০০৯: ১০২)।

বাংলাদেশ সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির সফল কার্যক্রমের কারণে তা সম্ভব হতে পারে। একই সময়কালে নারী শিশু মৃত্যুহার ধারাবাহিকভাবে পুরুষের তুলনায় কম ছিল। আবার শহরাঞ্চলের তুলনায় পল্লী অঞ্চলে তা উর্ধ্বমুখী ছিল। জন্মের সময়ে এবং জন্মের অব্যবহিতকাল পরে শিশু মৃত্যুহার থেকে দেখা যায় যে, নারী শিশুর ক্ষেত্রে জন্মকালীন মৃত্যুহার কম হলেও জন্মের অব্যবহিতকাল পরে শিশু মৃত্যুহার নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে প্রায় একই ছিল।

১৯৯০ সালে প্রতি হাজার জীবিত ছেলে নবজাতকের মধ্যে মৃত্যুহার ছিল ৭১ জন এবং এ হার অতিদ্রুত হা্রস পেয়ে ১৯৯৫ সালে প্রতিহাজারে দাঁড়ায় ৫০ জন। অপরদিকে, মেয়ে নবজাতকদের বেলায় প্রতিহাজার জীবন্ত শিশুর মধ্যে ১৯৯০ সালে মৃত্যুবরণ করে ৬২ জন এবং ১৯৯৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৯৯৩-৯৪ সালের তথ্যানুযায়ী গর্ভাবস্থায় দুই-তৃতীয়াংশ মহিলা কমপক্ষে এক ডোজ টিকা এবং ৫০% মহিলা দুই বা অধিক টিকা গ্রহণ করেছেন। শিশুমৃত্যুর হার আরও কমাতে হলে বাংলাদেশের জনসংখ্যার আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন দরকার হবে।

জন্ম ও মৃত্যুর উৎস-নিবন্ধিত উপাত্ত থেকে দেখা যায় যে, জন্মকালে জীবন প্রত্যাশা ১৯৯১ সালে উভয় লিঙ্গের জন্য ৫৬.১ বছর থেকে ১৯৯৮ সালে ৬০.৮ বছরে বৃদ্ধি পায়। ২০১১ সালে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৯.৭৫ বছরে। জন্মের সময় জীবন প্রত্যাশার এ তথ্য নির্দেশ করে যে, যারা পল্লী এলাকায় বসবাস করে তাদের চেয়ে শহর এলাকায় লোকদের আয়ুষ্কাল দীর্ঘতর। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীদের জীবন প্রত্যাশায় উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য নেই।

আজীবন অভিবাসন এবং বিভাগওয়ারী জনসংখ্যা বৃুদ্ধির পরিবর্তন  আদমশুমারির সাধারণ হিসেব থেকে দেখা যায় যে, ১৯৫১ সালে বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগসমূহে পূর্বের তুলনায় আজীবন অভিবাসন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগে তা কমেছে। ১৯৬১ সাল থেকে বরিশাল বিভাগে বহির্গামী অভিবাসনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে জনসংখ্যা কমতে শুরু করে। একইভাবে, চট্টগ্রাম বিভাগে বহির্গামী অধিবাসীদের সংখ্যা ছিল আগমনকারী অভিবাসীদের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। আবার, ১৯৫১-১৯৬১ সময়ে ঢাকা বিভাগে আগমনকারী অভিবাসীদের সংখ্যার চেয়ে বহির্গামী অভিবাসীদের সংখ্যা ছিল অধিক। ১৯৭২ সাল থেকে ঢাকায় অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৫১-১৯৭৪ সময়ে খুলনাতেও অভিবাসী বেড়েছিল, কিন্তু ঐ বিভাগে আগমনকারী অভিবাসীদের চেয়ে বহির্গামী অভিবাসীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মোট জনসংখ্যা কমে যায়। একমাত্র রাজশাহী বিভাগেই ১৯৫১ সাল থেকে পরবর্তী সকল সময়ে নিট অভিবাসী বৃদ্ধি পায়। অভিবাসনের ফলে ঢাকা বিভাগে জনসংখ্যার নিট বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ০.৬৪ মিলিয়ন এবং রাজশাহী বিভাগে ছিল ০.৪২ মিলিয়ন। বরিশাল বিভাগের জন্য এ অঙ্ক ছিল ০.৪৮ মিলিয়ন, খুলনা বিভাগের জন্য ০.৩০ মিলিয়ন এবং চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য ০.২৯ মিলিয়ন।

সারণি ১৬  বিভাগওয়ারী  জনসংখ্যা, ১৯০১-২০০১।

বিভাগ ১৯০১ ১৯১১ ১৯২১ ১৯৩১ ১৯৪১ ১৯৫১ ১৯৬১ ১৯৭৪ ১৯৮১ ১৯৯১ ২০০১ শতকরা পরিবর্তন
বাংলাদেশ ১০০ ১০০ ১০০ ১০০ ১০০ ১০০ ১০০ ১০০ ১০০ ১০০ ১০০ -
বরিশাল ৮.৫৯ ৮.২৮ ৮.৫৫ ৮.৯৭ ৯.০৭ ৮.৬৯ ৮.৩৮ ৭.৬ ৭.৪৭ ৭.০২ ৬.৫৯ -২.০০
চট্টগ্রাম ১৬.৪৫ ১৭.২ ১৭.৯ ১৯.০২ ২০.১৯ ২০.৭ ১৯.৯ ১৯.৪ ১৯.৪৫ ১৯.৩ ১৯.৪৭ +৩.০২
ঢাকা ২৮.৭৭ ২৯.৮ ৩০.২ ৩০.০৫ ৩০.৭২ ৩০ ৩০.১ ২৯.৮ ৩০.১৩ ৩০.৭ ৩১.৪৮ +২.৭১
খুলনা ১৩.১৩ ১২.১ ১১.৫৭ ১১.২ ১০.৮৭ ১১.১ ১১.৪ ১২.৩ ১২.২১ ১১.৯ ১১.৭৯ -১.৩৪
রাজশাহী ২৬.০৪ ২৫.৫ ২৪.৮৭ ২৩.৯৮ ২২.৪ ২২.৩ ২৩.৩ ২৪.৩ ২৪.২৫ ২৪.৭ ২৪.২৯ -১.৭৫
সিলেট ৭.০২ ৭.১ ৬.৯১ ৬.৯৩ ৬.৭৪ ৭.২৯ ৬.৮৬ ৬.৬৬ ৬.৪৯ ৬.৩৬ ৬.৩৮ -০.৬৪

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩।

বিভাগওয়ারী জনসংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে ১৯০১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ১০০ বছরে বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে জনসংখ্যার হার হ্রাস পেয়েছে। কেবলমাত্র চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগে জনসংখ্যার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

জনসংখ্যা নীতি ও অগ্রাধিকার ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি একটি কর্মসূচি চালু করে। সরকারি এবং বিদেশি দাতা সংস্থাসমূহের সহায়তায় এ সমিতি হাসপাতালের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি প্রয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৬০-৬৫ সময়ে সরকার সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এর সাফল্য ছিল খুবই সীমিত। ১৯৬৫-৭০ সময়ে  গণযোগাযোগ কর্মসূচি ও দূরবর্তী এলাকায় হাসপাতালের সহায়তায় সেবা পৌঁছানোর মাধ্যমে ব্যাপক পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি শুরু করা হয়। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮) সময়ে প্রণীত নীতিসমূহের ভিত্তিতে জনসংখ্যা কার্যক্রম বাস্তবায়ন ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যাকে উচ্চ প্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে সেবা প্রদান এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য পরিবার কল্যাণ সহকারী নিয়োগ করা হয়। পরবর্তী পাঁচসালা পরিকল্পনাগুলিতেও সরকার জনসংখ্যা বিভাগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। নতুন নতুন উপাদান ও কর্মপন্থা অন্তর্ভুক্ত করে এ কর্মসূচি বিভিন্ন দিকে সম্প্রসারণ করা হয়, যেমন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ, ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক (চিকিৎসা কেন্দ্র) স্থাপন, স্থানীয় উদ্যোগে কার্যক্রম গ্রহণ, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন, প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নয়ন ইত্যাদি। এ কর্মসূচি সম্প্রসারণে বেসরকারি সংস্থাসমূহের অগ্রণী ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

১৯৯৮-২০০৩ সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং অন্যান্য কয়েকটি দাতা সংস্থার সাহায্যে চতুর্থ জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য প্রকল্পের অনুবৃত্তি হিসেবে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাত কার্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। চতুর্থ জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সময়ে কতিপয় বিশেষ দিক চিহ্নিত করা হয়। এগুলির মধ্যে রয়েছে সরকারি সেবাসমূহের অপূর্ণ ব্যবহার, এসব সেবায় ব্যয়ের কার্যকারিতা, কার্যক্রমসমূহের স্থায়িত্ব এবং সেবার উৎকর্ষ। চতুর্থ জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা থেকে যে সুপারিশগুলি বেরিয়ে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে সেবা বিতরণ পদ্ধতির পুনর্গঠন, যোগ্যতা উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষ সাধন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, তথ্য ব্যবস্থার কার্যকর ব্যবস্থাপনা, নতুন ও আদর্শ প্রকল্প থেকে লব্ধ শিক্ষা বাস্তবায়ন, পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার একত্রীকরণ, ব্যয়ের কার্যকারিতা, কার্যক্রমের স্থায়িত্ব ও সেবার গুণগত মান সংরক্ষণ।

বাংলাদেশে বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজনীয় সেবাসমষ্টি প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিভাগের সংস্কার করাই হচ্ছে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাতে কার্যক্রমের প্রধান উদ্দেশ্য। স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাতে কার্যক্রমের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে গর্ভধারণ ও মৃত্যুহার কমানোর প্রচেষ্টার গতি অব্যাহত রাখা, মাতৃমৃত্যু হার ও রোগব্যাধি হ্রাসকরণ এবং ছোঁয়াচে রোগের প্রকোপ হ্রাসকরণ। সেবাসমষ্টির অপরিহার্য উপাদানগুলি হচ্ছে মৌলিক প্রজনন ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা, নির্দিষ্ট কিছু ছোঁয়াচে রোগ নিয়ন্ত্রণ, সীমিত প্রতিষেধক সেবা এবং স্বভাব পরিবর্তন বিষয়ক গণযোগাযোগ। আশা করা যায় যে, পাড়া, ইউনিয়ন, থানা ও জেলা পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা পদ্ধতির মাধ্যমে অপরিহার্য সেবাসমষ্টি প্রদান করা যাবে। স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাতের কার্যক্রম দ্বারে দ্বারে সেবা প্রদানের পরিবর্তে এক ব্যক্তির এক কেন্দ্রে উপস্থিতিতে সেবাপ্রদান পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে।

বর্তমানে হেলথ,নিউট্রেশন অ্যান্ড পপুলেশন সেক্টর প্রোগ্রাম ২০০৫-২০১০ (এইচএনপিএসপি)-এ পুষ্টি, এইচআইভি/এইডস এবং  নগর স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাতে দরিদ্রদের জন্য পুর্ণ গ্রহণযোগ্য কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) সাম্প্রতিক নীতিকে সমর্থন করেছে যাতে দারিদ্র্য, পুষ্টি এবং অন্যান্য এমডিজি সম্পর্কিত বিষয় যেমন মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করা যায়।

জনসংখ্যার প্রবণতা ও তার কার্যকারিতা  গর্ভধারণের হার ২.২-২.৩ পর্যায়ে পৌঁছালে তা বাংলাদেশের জনসংখ্যার জন্য হবে প্রতিস্থাপন হার। তবে, জনসংখ্যার অyুধকাংশ যুবাবয়সী বলে প্রতিস্থাপন হার অর্জনের পরও জনসংখ্যার আকার ও কাঠামো স্থিতিশীল হওয়ার পূর্বপর্যন্ত আরও ৪০-৫০ বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। একেই জনসংখ্যার ত্বরণ অনুঘটক নামে অভিহিত করা হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গর্ভনিরোধকের প্রাপ্যতা ও গর্ভধারণ হার সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে তার ভিত্তিতে প্রণীত অভিক্ষেপ থেকে ধারণা করা হয় যে, জনসংখ্যা ২০২১ সালে ১৮৫.২ মিলিয়ন এবং ২০৫১ সালে ২৪৩.৯ মিলিয়ন হবে। গর্ভনিরোধক প্রাপ্তির বর্ধিত হার, বয়সভিত্তিক গর্ভধারণ হার হ্রাস ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত অন্য এক অভিক্ষেপ থেকে দেখা যায় যে, উল্লিখিত দুই বছরে জনসংখ্যার আকার হবে যথাক্রমে ১৫৭.৯ মিলিয়ন ও ১৮৮.১ মিলিয়ন।

প্রজননক্ষম মহিলাদের সংখ্যাবৃদ্ধি নতুন জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে। বংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৯৯৬-৯৭ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রণীত অভিক্ষেপ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রজননক্ষম মহিলাদের সংখ্যা ২০০১ সালে ৩৫.৬ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১ সাল ও ২০৫১ সালে যথাক্রমে ৪৮.৫ মিলিয়ন ও ৫৬.৩ মিলিয়ন হবে।

আরেকটি সমস্যা যা আগামী দশকে গুরুতর হয়ে দেখা দিতে পারে তা হচ্ছে জনসংখ্যার অধিকতর আয়ুষ্কাল। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে  ২০০১, ২০২১ ও ২০৫১ সালে ৬০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের মানুষের সংখ্যা হবে যথাক্রমে ৭.২২ মিলিয়ন, ১৫.০৯ মিলিয়ন এবং ৪৪.৯৫ মিলিয়ন। ১৯৯১-২০২১ সময়ে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা ২.৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং ১৯৯১-২০৫১ সময়ে তা ৭.৪ গুণ বাড়বে। এ বিষয়টির যথাযথ মূল্যায়ন করা না হলে এবং তদনুযায়ী যথোপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা বৃদ্ধি পাবে। তখন আর গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় এসবের সমাধান সম্ভব নাও হতে পারে। [এম. আতাহারুল ইসলাম এবং শ্যামল চন্দ্র কর্মকার]

আরও দেখুন আদমশুমারি