চৌধুরী, এ.এফ.এম আবদুল আলীম

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:৩৮, ২৩ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

চৌধুরী, এ.এফ.এম আবদুল আলীম (১৯২৮-১৯৭১)  চিকিৎসক, শহীদ বুদ্ধিজীবী। পুরো নাম আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আবদুল আলীম চৌধুরী। জন্ম ৩ বৈশাখ ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ (১৯২৮ সাল) কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার খয়েরপুর গ্রামে। পিতা আবদুল হেকিম চৌধুরী এবং মাতা সৈয়দা ইয়াকুতুন্নেছা। তিনি ১৯৪৫ সালে কিশোরগঞ্জ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৮ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই.এস-সি পাস করেন। আলীম চৌধুরী ১৯৫৫ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি এবং ১৯৬১ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনস থেকে ডিপ্লোমা ইন অপথালমোলজি ডিগ্রি লাভ করেন।

আলীম চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয় লন্ডনের সেন্ট জেমস ও হুইপস ক্রস হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (১৯৬১-১৯৬৩) হিসেবে। তিনি মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালের প্রধান চক্ষু চিকিৎসক (১৯৬৩-১৯৬৫), আই.পি.জি.এম.আর-এর চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (১৯৬৭) এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (১৯৬৮-১৯৭০), রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (১৯৭১) ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (১৯৭১) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আলীম চৌধুরী চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ধর্মঘটকে সফল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন এবং ১৯৫৪ সালে শহীদ দিবসে পতাকা উত্তোলনের কারণে কারারুদ্ধ হন। ১৯৫৪-১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৫৭-১৯৫৮ সালে Pakistan Medical Association-এর পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সম্পাদক, ১৯৬৭-১৯৬৮ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৯ সালে East Pakistan Ophthalmological Society-র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

লেখক হিসেবেও আলীম চৌধুরী পরিচিত ছিলেন। তিনি ছাত্রজীবনে ১৯৪১-১৯৪২ সালে খাপছাড়া (মাসিক পত্রিকা), ১৯৫২-১৯৫৩ সালে যাত্রিক (মাসিক পত্রিকা) এবং ১৯৫৭-১৯৫৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মেডিক্যাল জার্নালের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে লন্ডনে তাঁর উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল বাংলা একাডেমী। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নাল ও সংবাদপত্রে তাঁর বহু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

আলীম চৌধুরী ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে এবং ১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড় দুর্গতদের চিকিৎসাসহ ত্রাণকাজে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন এবং তাদের জন্য ঔষধ সরবরাহ করতেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৪ ডিসেম্বর (১৯৭১) পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সহযোগী  আল-বদর বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে বাসা (২৯/১ পুরানা পল্টন, ঢাকা) থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাঁর লাশ পাওয়া যায়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ ১৯৯১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরীর নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। [বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ]