চৌধুরী, অহীন্দ্র নটসূর্য

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:১০, ২৩ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
অহীন্দ্র নটসূর্য চৌধুরী

চৌধুরী, অহীন্দ্র নটসূর্য (১৮৯৫-১৯৭৪)  অভিনেতা, নাট্যসংগঠক ও লেখক। ১৮৯৫ সালের ১২ আগস্ট কলকাতায় তাঁর জন্ম। তিনি লন্ডন মিশনারি স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। কিন্তু অল্প বয়সেই অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে তিনি থিয়েটার ও যাত্রাভিনয়ে যোগ দেন। অভিনয়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই থিয়েটার, যাত্রা এবং সিনেমা এই তিন মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। ১৯২৩ সালে কর্ণার্জুন নাটকে তাঁর প্রথম অভিনয়। এছাড়া যেসব নাটকে অভিনয় করে তিনি স্মরণীয় হন সেগুলি হলো: শ্রীরামচন্দ্র, অশোক, চক্রব্যূহ, সাজাহান, মহারাজ নন্দকুমার, চন্দ্রগুপ্ত, মিশরকুমারী ইত্যাদি। তাঁর শেষ অভিনীত নাটক সাজাহান  মঞ্চস্থ হয় ১৯৫৭ সালে মিনার্ভা থিয়েটার মঞ্চে। তাতে তিনি নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯২৩ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘকালীন অভিনয়জীবনে অহীন্দ্র চৌধুরী বহু নাটকের প্রায় প্রতিটি চরিত্রে স্মরণীয় অভিনয় করে নাট্যজগতে একটি যুগের সৃষ্টি করেন, যাকে ‘অহীন্দ্রযুগ’ বলে অভিহিত করা হয়।

মঞ্চের পাশাপাশি অহীন্দ্র চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। ১৯২২ সালে তিনি সোল অব এ পেভ  নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা ও তাতে অভিনয় করেন। ১৯৩১-৫৪ সাল পর্যন্ত ১২৫টিরও বেশি সবাক চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেন। প্রিয়তমা, চিরকুমার সভা, তটিনীর বিচার, রাজনর্তকী, সোনার সংসার, ডাক্তার, শেষ উত্তর, কৃষ্ণকান্তের উইল, কঙ্কাবতীর ঘাট প্রভৃতি চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১৯৭০ সালে তিনি অভিনয় সংক্রান্ত নিজস্ব সংগ্রহশালা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন এবং এটি পরিচালনার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করেন।

১৯৫৪ সালে অহীন্দ্র চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গীত-নাটক আকাদেমির অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৫৭ সালে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘গিরিশ লেকচারার’ মনোনীত করে। তাঁর প্রদত্ত বক্তৃতামালা বাংলা নাট্য বিবর্তনে গিরিশচন্দ্র শিরোনামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। তাঁর অপর গ্রন্থ নিজেরে হারায়ে খুঁজি আত্মজীবনীমূলক রচনা। ১৯৫৮ সালে সঙ্গীত-নাটক আকাদেমি কর্তৃক তিনি পুরস্কৃত হন এবং নাট্য শতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্টার থিয়েটার পদক’ (১৯৭২) লাভ করেন। এছাড়া রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি প্রাপ্ত হন। অভিনয়ে অসামান্য দক্ষতার জন্য তিনি সাধারণের নিকট ‘নটসূর্য’ নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ৫ নভেম্বর কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [বদিউজ্জামান]