চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)  একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৫ কিমি দূরে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের পাশে রাউজান উপজেলায় ১৬৩ একর জমির উপর এটি প্রতিষ্ঠিত। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। কলেজটি ১৯৮৬ সালে সীমিত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি’ তে রূপান্তরিত হয়। পূর্বেকার বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি) ২০০৩ সালের ৩১ নং আইনের অধীনে ‘চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩টি অনুষদ রয়েছে: ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এগ্রিকালচার অ্যান্ড প্লানিং। এ ৩টি অনুষদের অধীনে ১১টি বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলি হলো: সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, স্থাপত্য, আরবান অ্যান্ড রিজিউনাল প্লানিং এবং মানবিক। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পছন্দের বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। বিভাগগুলিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু আছে। স্নাতকোত্তর শেষে শিক্ষার্থীরা এম.ফিল ও পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষদ ও বিভাগ পৃথকভাবে গবেষণা কর্মকান্ড পরিচালনা করে। গবেষণার জন্য আর্থকুইক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ সেন্টার এবং পরিবেশ গবেষণা সেন্টার নামে দুটি ইনিস্টিটিউট রয়েছে। প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানি সম্পদ, পরিবেশ এবং ভূতাত্ত্বিক বিষয়েও গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষণা সংক্রান্ত কারিগরী ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে জাতিসংঘের বিভন্ন অংগসংগঠন, কমনওয়েলথ ফাউন্ডেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। গবেষণা ও ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শের সার্বিক বিষয় তদারকি করে ব্যুরো অব রিচার্স টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন (বিআরটিসি)। কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ জার্নাল (সিআরইআরজে) নামে একটি বার্ষিক জার্নাল নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা সিন্ডিকেট। সবধরণের স্ট্যাট্যুট প্রণয়ন ও সংশোধন কাজ হয় সিনেটে। সিনেট বার্ষিক বাজেট অনুমোদন, শিক্ষা কার্যক্রমের সার্বিক পর্যালোচনা এবং উপাচার্য নিয়োগ দানের জন্য প্যানেল নির্বাচন করেন। ভাইস-চ্যান্সেলর সহ মোট সিন্ডিকেট সদস্য ১৬ জন। এছাড়া ২৯ সদস্যবিশিষ্ট একাডেমিক কমিটি, ৭ সদস্যবিশিষ্ট অর্থ কমিটি এবং ৭ সদস্যবিশিষ্ট পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সাথে যুক্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের কয়েকটি সংগঠন রয়েছে যেমন: সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, কম্পিউটার ক্লাব, ডিবেটিং সোসাইটি, গ্রীন ফর পিস, জয়ধ্বনি, চলচ্চিত্র সংসদ এবং ফটোগ্রাফি ও আর্ট কালচার অ্যাসোসিয়েশন। সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন সাধারণ ছাত্রছাত্রী পরিচালিত একটি সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রী এর সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি এটি ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা দেখভাল করে। কম্পিউটার ক্লাবে রয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ। ছাত্রছাত্রীদের যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন করে তোলার কাজ করে কম্পিউটার ক্লাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে ডিবেটিং সোসাইটির শাখা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ডিবেটিং সোসাইটি আন্তঃহল, আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়ন এবং সকলকে পরিবেশ সচেতন করার জন্য গঠিত হয়েছে ‘গ্রীন ফর পিস’ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনটি বৃক্ষরোপন, পরিবেশ দূষণের উপর বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করে। ‘জয়ধ্বনি’ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন। সংগঠনটি নিয়মিত নাটকের মহড়া এবং প্রদর্শনের আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ নিয়মিত কর্মশালা, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এছাড়া ফটোগ্রাফি ও আর্ট কালচার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ফটোগ্রাফি কর্মশালা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী হয়।

২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৪০০, শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১২৫ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ২১৮। আবাসিক হলের সংখ্যা ৫টি। ছেলেদের ৪টি এবং মেয়েদের ১টি। হলগুলি হলো: ড. কুদরত-ই-খুদা হল, শহীদ মোহাম্মদ শাহ হল, শহীদ তারেক হুদা হল, ছাত্রী হল এবং নতুন হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি বেশ সমৃদ্ধ। এখানে অনেক দুষ্প্রাপ্য বই, জার্নাল ও অডিওভিজুয়াল সামগ্রী রয়েছে। গ্রন্থাগারের বইয়ের সংখ্যা ৪৪৮৯১ এবং জার্নালের সংখ্যা ৭৭৫। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ প্রত্যেক বিভাগে ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশাপাশি প্রত্যেক বিভাগে আছে আলাদা ল্যাব ও সেমিনার হল।  [মো. আশিক ইকবাল]