চক্রবর্তী সুখেন্দু

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:৩২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

চক্রবর্তী সুখেন্দু (১৯২৮-১৯৮০)  গণসঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত-পরিচালক। জন্ম ১৯২৮ সালে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ায়। সাধারণত তিনি ‘খোকা চক্রবর্তী’ নামে পরিচিত ছিলেন। পিতা নলিনী চক্রবর্তী, মাতা হরসুন্দরী দেবী।

সুখেন্দু চক্রবর্তী সঙ্গীতে তালিম গ্রহণ করেন বড় ভাই সত্য চক্রবর্তীর কাছে। পরে কুম্লিল্লার সঙ্গীতশিক্ষক সমরেন্দ্র পাল ও ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরুর কাছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত চর্চা করেন। পাশাপাশি তিনি এস্রাজ, সেতার ও তবলাবাদনে পারদর্শিতা অর্জন করেন।

সুখেন্দু চক্রবর্তী ১৯৪৩ সালের ২৯ জুন রেডিও’র একটি অনুষ্ঠানে প্রথম অংশগ্রহণ করেন। পরে রেডিও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সঙ্গীত-প্রযোজক নিয়োজিত হন। ফেরদৌস হোসেন ভূঁইয়ার লেখা ‘ডিম পাড়ে হাসে খায় বাঘ ডাসে’ জনপ্রিয় এ গানটির মধ্য দিয়ে ষাটের দশকে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। অপরদিকে তিনি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সূচনালগ্ন থেকে নানা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন গণমুখী-সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গেও তিনি ঘনিষ্টভাবে কাজ করেন।

সুখেন্দু চক্রবর্তী সভাসম্মেলনে বহু সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তিনি যেসব জনপ্রিয় গান গেয়ে খ্যাতি লাভ করেন, তার মধ্যে ‘বাংলার বুকে ওই  মৃত্যুর কালো দূত’, ‘অন্ধকার থেকে আলোর পৃথিবী হাতছানি মেরে ডাকছে’, ‘আমাদের হাতের মুঠি তাদের পিষে দলবে’, ‘ওরা নাকি আমাদের ক্ষেত আর খামারের সবুজের স্বপ্ন কেড়ে নিতে চায়’, ‘মানিক তোমার যুদ্ধে যাবে মাগো বিদায় দাও’ প্রভৃতি উল্লেলখযোগ্য। তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ঐতিহাসিক কাগমারী মহাসম্মেলনে, ঢাকায় অনুষ্ঠিত যুবসম্মেলনে ও কুমিল্ললার ভিক্টোরিয়া কলেজের মহাসম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন করে ব্যাপক সাড়া জাগান। তিনি খবরের কাগজওয়ালা, ফেরীওয়ালা, জেলে, কামার, কুমার, ছুতার ইত্যাদি পেশাজীবী মানুষের জীবনসম্পৃক্ত গান করেন। তবে সুখেন্দু চক্রবর্তী গণসঙ্গীত-শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও অন্যান্য গানেও তাঁর সুরেলা কণ্ঠ ছিল। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তাঁর পারদর্শিতা এবং চিরায়ত বাংলা গানের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সংযোগ, দুইই তাঁকে সঙ্গীতগুরুর মর্যাদা দান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুননাহার হলে দীর্ঘদিন তিনি সঙ্গীত বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।

সুখেন্দু চক্রবর্তী ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উদ্দীপ্ত ছিলেন। ঊনষত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি সংগ্রামী চেতনার গান পরিবেশন করেন। এ চেতনার স্বতস্ফূর্ততা তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে। জনসাধারণকে সংগ্রামী চেতনায় উজ্জ্বীত করা ছিল তাঁর সঙ্গীত-সাধনার এক প্রধান দিক। ১৯৮০ সালের ৭ জুলাই কুমিল্ললায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [সাইম রানা]