গোয়ালদি মসজিদ

গোয়ালদি মসজিদ  সোনারগাঁও-এ বিদ্যমান স্বল্পসংখ্যক মধ্যযুগীয় সহাপত্য নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি। মেঘনা নদীর গতি পরিবর্তন এবং মানুষ ও প্রকৃতির নানাবিধ ধ্বংসযজ্ঞের কারণে সোনারগাঁও নগরীর খুব অল্প সংখ্যক নিদর্শনই বর্তমানে টিকে আছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার অন্তর্গত পানামনগর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত গ্রাম গোয়ালদিতে বাঁশ ঝাড় আর আম, কাঁঠাল গাছের জঙ্গলের আড়ালে রয়েছে দৈবক্রমে টিকে থাকা এ রকম দুটি প্রাচীন এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। এর মধ্যে একটি মুগল সম্রাট আওরঙ্গজেব-এর শাসনকালে আব্দুল হামিদ নামে এক ব্যক্তি ১১১৬ হিজরি/ ১৭০৫ সালে নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে মসজিদটির ব্যাপকভাবে সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। একই গ্রামে, এ মসজিদের কাছেই প্রতি দিকে ৪.৮ মিটার দীর্ঘ বর্গাকার আরেকটি এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ রয়েছে। একটি শিলালিপির তথ্যানুযায়ী সৈয়দ আশরাফ আল হোসাইনির পুত্র সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহ-এর শাসনামলে ৯২৫ হিজরির ১৫ শাবান/১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে এ মসজিদ নির্মাণ করেন মোল্লা হিজাবর আকবর খান। আলেকজান্ডার কানিংহাম শিলালিপিটির একটি ছাপচিত্র গ্রহণ করে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল-এ প্রেরণ করেন। হেনরী ফার্ডিনান্ড ব্লকম্যান আরবি ভাষায় লেখা এ লিপির পাঠোদ্ধার করে ১৮৭৩ সালে অনুবাদসহ এর সম্পাদনা করেন।

গোয়ালদি মসজিদ, সোনারগাঁও

প্রাক-মুগল যুগের ছোট্ট সুন্দর গোয়ালদি মসজিদটি এ এলাকার সর্বপ্রাচীন নিদর্শন। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যখন এটিকে ‘সংরক্ষিত’ ইমারত হিসেবে চিহ্নিত করে তখন এটি রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালে মসজিদটিকে পুনর্গঠন করা হয়। এর পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে (এখন ইট দিয়ে ভরাট করা) একটি করে খিলানাকৃতির প্রবেশপথ রয়েছে। পেন্ডেন্টিভের সাহায্যে নির্মিত গম্বুজটির ভিত্তি চারকোণের চারটি স্কুইঞ্চ খিলানের উপর স্থাপিত। মসজিদটির ভেতরে ছাদের ভার রক্ষার জন্য কালো পাথরের কিছু অলংকৃত স্তম্ভও রয়েছে।

পূর্ব দিকের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে অলংকরণে সমৃদ্ধ তিনটি মিহরাব। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অপেক্ষাকৃত প্রশস্ততর এবং কালো পাথরে খোদাইকৃত ফুলেল ও আরব্য নকশায় চমৎকারভাবে অলংকৃত। তবে পার্শ্ববর্তী মিহরাব দুটিতে রয়েছে পোড়ামাটির সাবলীল ফুলেল ও জ্যামিতিক নকশা। পাথরের তৈরী কেন্দ্রীয় মিহরাবটি একটি খিলানকৃত প্যানেলের মধ্যে সহাপিত। প্যানেলের উপরিভাগের কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিকশিত সূর্যমুখীর নকশা। তার নিচে মিহরাবের বহুখাঁজবিশিষ্ট খিলানটি একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে অলংকৃত। খাঁজকাটা খিলানাকৃতির কুলুঙ্গিটি স্থানে স্থানে পলকাটা খর্বাকৃতি অষ্টকোণী স্তম্ভের উপর বসানো। মসজিদটির বাইরের দিকের চারকোণে রয়েছে ব্যান্ডযুক্ত চারটি গোলাকার পার্শ্ববুরুজ, যেগুলি মসজিদের বাঁকানো কার্নিশ পর্যন্ত উঠে গেছে।  [নাজিমউদ্দীন আহমেদ]