গাজীপুর সদর উপজেলা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৭:১১, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

গাজীপুর সদর উপজেলা (গাজীপুর জেলা)  আয়তন: ৪৪৬.৩৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৫৩´ থেকে ২৪°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২০´ থেকে ৯২°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে শ্রীপুর উপজেলা, দক্ষিণে সাভার উপজেলা ও উত্তরা থানা এবং রূপগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে কালীগঞ্জ (গাজীপুর) ও রূপগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে কালিয়াকৈর ও সাভার উপজেলা।

জনসংখ্যা ৮৬৬৫৪০; পুরুষ ৪৭১৭৬৮, মহিলা ৩৯৪৭৭২। মুসলিম ৮১৭৯২৬, হিন্দু ৪৫০৬৮, বৌদ্ধ ৩১৮৫, খ্রিস্টান ১৮৮, অন্যান্য ১৭৩। এ উপজেলায় কোচ, রাজবংশী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: তুরাগ, বালু, লবনদহ, সালদা।

প্রশাসন ১৯৮৪ সালে জয়দেবপুর ও টঙ্গী এলাকা নিয়ে গাজীপুর সদর উপজেলা গঠিত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৮৩ ২৬১ ১৮৬৮৫৬ - ১৯৪১ ৬২.৬ -
গাজীপুর পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪৮.৭৫ ৩১ ১২২৮০১ ২৫১৯ ৬৬.৫২
টঙ্গী পৌরসভা
২৯.৭১ ১২ ৩৭ ২৫৬৮৯৭ ৮৬৪৭ ৬১.৭৯
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩৬৭.০০ - ৪৬০৬৪০ ১২৫৫ ৬০.১৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাউলতিয়া ৫৪ ১৭২৩১ ৩৩১৬৮ ২৯৮১৭ ৫২.০২
কাশিমপুর ৪৭ ১০৪৫৪ ২৬৫৭৪ ২১৭০১ ৫৮.৫৭
কোনাবাড়ী ৬০ ৫৪৬২ ৩৮২১০ ২৪৫৬২ ৫৭.১৮
গাছা ৩১ ৭০৭২ ৩৬১৬৩ ৩১৫২৮ ৬৯.৫৬
পুবাইল ৮১ ১১৮৯৯ ২৭৯১০ ২৬৫৪১ ৬৪.২৫
বাড়ীয়া ২৫ ১০০২১ ১৮৪৩০ ১৬২৮৪ ৬৫.২০
বাসন ২৩ ৭০৬৮ ৩০৯৪৫ ২৬৩৪২ ৫৯.৩৮
মির্জাপুর ৬৭ ২১৪৮৪ ৩৮৫১১ ৩৩৯৫৪ ৫৭.২২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ  ভাওয়াল রাজপ্রাসাদ, ভাওয়াল তাম্রলিপি, ভাওয়াল রাজ শ্মশান মন্দির, মীর জুমলার সেতু (টঙ্গী), কৃপাময়ী মন্দির, পলাসোনা (গাছা) জমিদার বাড়ী, সোনাভান মসজিদ (টঙ্গী), কাশিমপুর জমিদার বাড়ী, লালশাহ্ মাযার (ভাদুন), ভরান রাজবাড়ী।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি চিলাই নদীর দক্ষিণ তীরের পীরাবাড়ী গ্রামে ভাওয়ালের জমিদার জয়দেবনারায়ণ রায় চৌধুরী স্বীয় প্রাসাদ নির্মাণ করেন এবং তার নামানুসারে এলাকার নামকরণ হয় জয়দেবপুর। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে কালীনারায়ণ রায় চৌধুরী ‘রাজা’ খেতাব পান এবং তখন থেকে জয়দেবপুরের জমিদার বাড়ী ‘রাজবাড়ী’ হিসেবে খ্যাত হয়। ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ টংগীতে প্রতিরোধ সংগ্রামে আবদুল মোতালিব সহ ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৯ মার্চ জয়দেবপুর ও চান্দনা চৌরাস্তায় পাকবাহিনীর গুলিতে হুরমত, নেয়ামত, মনু খলিফা, কানু মিয়া প্রমুখ শহীদ হন। পাকবাহিনী ২৭ মার্চ টঙ্গী বিসিক এলাকায়, ৭ এপ্রিল জয়দেবপুরে, ১৭ এপ্রিল আরিচপুরে, ১৪ মে বাড়িয়া, ইছরকান্দি ও টঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে গণহত্যা চালায়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন জয়দেবপুর রাজবাড়ীর পুকুর এলাকা, বধ্যভূমি ১ (গাছা স্কুল প্রাঙ্গণ); গণকবর ১ (টঙ্গী শহীদ স্মৃতি স্কুল প্রাঙ্গণ); ভাস্কর্য ১ (মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য জাগ্রত চৌরঙ্গী, চান্দনা চৌরাস্তার মোড়ে); মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ১ (জয়দেবপুর রাজবাড়ীতে জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে); মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকর্নার ১ (উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬১৩, মন্দির ১২২, গির্জা ৩।

শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৬২.৬%; পুরুষ ৬৭.৩%, মহিলা ৫৬.৮%। বিশ্ববিদ্যালয় ৫, কলেজ ১০, মেডিকেল কলেজ ১, ক্যাডেট কলেজ ১, প্রযুক্তি কলেজ ১৫, প্রযুক্তি স্কুল ১০, বিশেষ প্রযুক্তি কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬৮, মাদ্রাসা ৩৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৩), ইসলামী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৯), ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৮০), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯২), উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৩), রাণী বিলাসমণি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক গণমুখ, সাপ্তাহিক গাজীপুর বার্তা, আজকের জনতা, গাজীর দেশ, ভাওয়াল, সাপ্তাহিক গাজীপুর সংবাদ, সাপ্তাহিক সকলের কণ্ঠ, মাসিক কিশোর মানস, ত্রৈমাসিক ধান গবেষণা সমাচার, বার্ষিক অনির্বাণ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৬, লাইব্রেরি ১৭০, জাদুঘর ৩, নাট্যমঞ্চ ১, নাট্যদল ৫, মহিলা সংগঠন ৩, মহিলা সমবায় সমিতি ৮৯, সিনেমা হল ১০, কমিউনিটি সেন্টার ১০, শিল্পকলা একাডেমি ১, শিশু একাডেমী ১, ডাকবাংলো ২, সার্কিট হাউজ ১।

পর্যটন কেন্দ্র বা দর্শনীয় স্থান ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, হোতাপাড়া শ্যুটিং অঞ্চল, খতিববাড়ি শু্যটিং এলাকা, খ্রিস্টান পর্যটন কেন্দ্র, নীলের পাড়া খামার বাড়ি, অনন্তধারা পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র, পুষ্পধাম বিনোদন ও শু্যটিং স্থান, ভাওয়াল রাজ প্রাসাদ, কাশিমপুর জমিদার বাড়ী, নুহাশ চলচ্চিত্র পল্লী, পলাসোনা জমিদার বাড়ী, টঙ্গী মীরজুমলা সেতু, স্বাধীনতার প্রথম ভাষ্কর্য জাগ্রত চৌরঙ্গী। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ১৭.৮৬%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৮%, ব্যবসা ১৯.৭৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৭.০৩%, চাকরি ৩২.২২%, নির্মাণ ৩.৯৭% এবং অন্যান্য ১৬.৫৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.৪৮%, ভূমিহীন ৪১.৫২%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, সরিষা, হলুদ।

বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  নীল, আউশ ধান, পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, আনারস, লিচু, আম, জাম, পেয়ারা, পেঁপে, তাল, কুল, বাতাবিলেবু, বেল, তেঁতুল।

মৎস্য, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খামার  মৎস্য ১১১, হাঁস-মুরগি ৮০৫২, গবাদি পশু ৬৪৭, মৌচাষ প্রকল্প ৮০, হ্যাচারি ১০, অন্যান্য ৩।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩৬৮ কিমি, আধাপাকারাস্তা ১৮৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩২৪ কিমি; নৌপথ ২২.৬৭ নটিক্যাল মাইল; রেলপথ ৫৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন কোন্দা (তাল গাছের নৌকা) ও বজরা, টমটম, গরু ও মহিষের গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বিসিক শিল্পনগরী-২ (টঙ্গী ও কোনাবাড়ী), টঙ্গী শিল্প এলাকার বৃহৎ ও মাঝারি আকারের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, এ্যালুমিনিয়াম কারখানা, হার্ডবোর্ড, কসমেটিকস শিল্প, টেক্সটাইল, সিরামিক কারখানা, প্যাকেজিং কারখানা, গার্মেন্টস্, ফার্মাসিউটিক্যাল, মেশিনটুলস ফ্যাক্টরি, ডিজেল প্লান্ট, প্রিন্টিং প্রেস, সমরাস্ত্র কারখানা প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, পাটজাত দ্রব্য, বাঁশ ও বেত সামগ্রী, কাঠশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প উল্লেখযোগ্য।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৬, মেলা ১৪। উল্লেখযোগ্য হাটবাজার: টঙ্গী, পুবাইল, মির্জাপুর, কাশিমপুর, বোর্ডবাজার, সালনা, জয়দেবপুর। উল্লেখযোগ্য মেলা: পূবাইল লক্ষ্মী দশমীর মেলা, টঙ্গী স্নান ঘাটার মেলা, ধীরাশ্রম শীতলা দেবীর মেলা, ডোমের পাড়া চৈত্র সংক্রান্তির মেলা, কড্ডার বারুণী মেলা ও জয়দেবপুর রথমেলা।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  কাঁঠাল, আনারস, শাকসবজি, কসমেটিকস, জুতা, ইলেক্ট্রিক দ্রব্যাদি, ইলেক্ট্রনিক্স, ঔষধ, তৈরি পোশাক, বিড়ি, সিগারেট, মশার কয়েল।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবকটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭৮.৪৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ  মোট ৪৩৩৬৩ হেক্টর জমির ৩১৪০ হেক্টর (প্রায় ৭.২৪%) বনভূমি।

পানীয়জলের উৎস অগভীর নলকূপ ৮৪.০৩%, গভীর নলকূপ ১.৫৯%, ট্যাপ ১১.১২%, পুকুর ০.১৬% এবং অন্যান্য ৩.১০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৭৪.১১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২০.২০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫.৭০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৬৯ সালে মির্জাপুর এলাকায় সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়ে ২০ জন লোক মারা যায়। ১৯৯১ সালের টর্ণোডোতে তিনটি গ্রামের ১৫ জন লোক মারা যায়।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র জেলা সদর হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, মিশনারী হাসপাতাল ১, ক্যান্সার হাসপাতাল ১, চক্ষু হাসপাতাল ২, বেসরকারি হাসপাতাল ২৫, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ১, হূদরোগ হাসপাতাল ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, প্রশিকা, ওয়ার্ল্ড ভিশন, এবিসি, ডায়ালগ, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, পিদিম। [মো. ফরিদ উদ্দিন আহমদ]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গাজীপুর সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।