গাইবান্ধা সদর উপজেলা

গাইবান্ধা সদর উপজেলা (গাইবান্ধা জেলা)  আয়তন: ৩২৪.০৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°১৩´ থেকে ২৫°২৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৬´ থেকে ৮৯°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সুন্দরগঞ্জ ও চর রাজীবপুর উপজেলা, দক্ষিণে পলাশবাড়ি, সাঘাটা এবং ফুলছড়ি উপজেলা, পূর্বে দেওয়ানগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলা এবং ব্রহ্মপুত্র নদ, পশ্চিমে সাদুল্লাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪৩৭২৬৮; পুরুষ ২১৩৮১১, মহিলা ২২৩৪৫৭। মুসলিম ৪০৪১৯০, হিন্দু ৩২৭৯২, বৌদ্ধ ৫, খ্রিস্টান ১৯ এবং অন্যান্য ২৬২।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও বাঙালি।

প্রশাসন ১৮৫৭ সালে সাবেক ভবানীগঞ্জ ও সাদুল্লাপুর উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে গাইবান্ধা থানা গঠিত হয় এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৩ ১৩২ ১৪৪ ৯৪০৮৯ ৩৪৩১৭৯ ১৩৪৯ ৬১.২ (২০০১) ৪২.২
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.৬০ (২০০১) ৩৫ ৬৭৮৩৩ ৫৫৯৩ (২০০১) ৭৪.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.২২ (২০০১) ২৬২৫৬ ১৮৯৯ (২০০১) ৪৩.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কামারজানী ৫১ ৮০৩৭ ৬৫৬২ ৬৬৩৪ ২৮.২
কুপতলা ৬৫ ৫১২৫ ১৩৯৪০ ১৪৮৯৩ ৫১.৬
খোলাহাটি ৫৮ ৬০৭৮ ২১৩৮১ ২১৭৩৯ ৪২.৬
গিদারী ৪৩ ৫৮৮০ ১৩৭৩৯ ১৫৩০৪ ৩৩.৪
ঘাগোয়া ৩৬ ৩৯৫০ ১০৩৫৮ ১০৮৮১ ৩৭.৭
বল্লমঝাড় ১৪ ৭২১০ ২৩৫৫১ ২৪০৬৯ ৪০.৯
বাদিয়াখালী ১২ ৫৭৪৮ ১৪১৪৬ ১৫১০৫ ৪২.৪
বোয়ালি ২১ ৬২৫৬ ১৭১০৩ ১৮০৪০ ৪৪.৫
মালীবাড়ি ৮০ ৫১১৮ ১৩১৬৬ ১৪৪৪৯ ৩৭.৫
মোল্লারচর ৮৫ ৭৬১৭ ৩৮১৬ ৪১১৫ ৩১.৪
রামচন্দ্রপুর ৮৭ ৫২৫০ ১৪৫৭৯ ১৫৫৩৬ ৪৪.৫
লক্ষ্মীপুর ৭৩ ৬৩৩১ ১৫৫০৩ ১৬১৯১ ৪৪.১
সাহাপাড়া ৯৪ ৪৬৮৩ ১১৯৮০ ১২৬৫৫ ৫৫.০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ খাগোয়া গ্রামে মীরের বাগান মসজিদ (১৩০৮), পীর ইবনে শরফুদ্দিনের মাযার, ভবানীগঞ্জ ডাকঘর (১৮৫৮), বাগুড়িয়া তহশিল অফিস (উনিশ শতক)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৭ আগস্ট উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার সংযোগকারী বদিয়াখালী সড়ক সেতু অপারেশনের মাধ্যমে পাকহানাদারদের বিতাড়িত করে এবং সেতুটির একটি অংশ ধ্বংস করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব এলাহী রঞ্জু (বীর প্রতীক)-এর নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা গাইবান্ধাকে শত্রুমুক্ত করে শহরে প্রবেশ করে এবং স্বাধীনতা প্রাঙ্গনে (সাবেক এসডিও মাঠ) প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। উপজেলায় ১টি বধ্যভূমি, ১টি গণকবর, ২টি শহীদ সমাধি, ৩টি শহীদ মিনার এবং ৩টি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। এগুলি হেলালপার্ক বধ্যভূমি, কামারজানি গণকবর, তুলসীঘাট ও বল্লমঝাড় শহীদ সমাধি, গাইবান্ধা পৌর পার্ক শহীদ মিনার, গাইবান্ধা কলেজ শহীদ মিনার, মুন্সীপাড়া শহীদ মিনার, গাইবান্ধা পৌর পার্কে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ বিজয়স্তম্ভ, পশ্চিমপাড়া স্মৃতিস্তম্ভ এবং মাতৃভাণ্ডার স্মৃতিস্তম্ভ।

বিস্তারিত দেখুন গাইবান্ধা সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫১৮, মন্দির ৩৬, মাযার ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.৫%; পুরুষ ৫০.৮%, মহিলা ৪৪.৪%। কলেজ ১০, আইন কলেজ ১, উচ্চ বিদ্যালয় ৪৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৬, এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২, স্যাটেলাইট ১২, কিন্ডার গার্টেন ১৬, অন্যান্য ১, ভকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, অন্যান্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ৬, মাদ্রাসা ২৬১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৫), গাইবান্ধা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), গাইবান্ধা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯১৬), পিয়ারাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), চাপাদহ বি. এল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), তুলসীঘাট কাশিনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), গাইবান্ধা কলেজ (১৯৪৭), কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (১৯৫৪)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী বর্তমান: দৈনিক ঘাঘট, দৈনিক সন্ধান, দৈনিক পলাশ, দৈনিক ভোরের সূর্য্য, দৈনিক জনসংকেত, সাপ্তাহিক গণপ্রহরী, সাপ্তাহিক গাইবান্ধা, সাপ্তাহিক পলাশ, সাপ্তাহিক গণ উত্তরণ, সাপ্তাহিক কাটাখালি। বিলুপ্ত: সাপ্তাহিক কণ্ঠস্বর, সাপ্তাহিক গণদূত, সাপ্তাহিক অগ্রদূত, পাক্ষিক পূর্ব দিগন্ত, মাসিক তিস্তা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৩৭, লাইব্রেরি ২, থিয়েটার গ্রুপ ৫, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ২৩, মহিলা সংগঠন ৮, সিনেমা হল ৩, নাট্যমঞ্চ ৬।

বিনোদন কেন্দ্র মীরের বাগান, গাইবান্ধা পৌর পার্ক।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি  ৫৫.২৩%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮০%, শিল্প ০.৯৫%, ব্যবসা ১৫.৭৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.৪৮%, চাকরি ৭.৮৪%, নির্মাণ ২.৪২%, ধর্মীয়  সেবা ০.২৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩৩% এবং অন্যান্য ৫.৪৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫০.৭০%, ভূমিহীন ৪৯.৩০%। শহরে ৪২.৪৯% এবং গ্রামে ৫২.৬০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, সরিষা, মসুর ডাল, চিনা বাদাম, ভুট্টা, পিঁয়াজ, রসুন।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশধান, আমন, আখ, মিষ্টিআলু, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, বাংগী, লিচু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৫২, গবাদিপশু ৪৪, হাঁস-মুরগি ৯০, হ্যাচারি ৮।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ১৭৯.৩৮ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ০.৭০০ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৩৭২.৮৭ কিমি; রেলপথ ১৫ কিমি; নৌপথ ১৪ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া, গরু ও মহিষের গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ময়দাকল, বরফকল, সাবান তৈরি কারখানা, চাল কল, চিড়াকল, প্লাস্টিক পাইপ তৈরির কারখানা, স’মিল প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ, কাঠের কাজ, জাল বুনন কাজ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

হাটবাজার ও মেলা হাট-বাজার ২২, মেলা ৩। দবিয়াপুর হাট,    লক্ষীপুর হাট, সাহাপাড়া হাট, ঘাগোয়া হাট, কামারজানি হাট এবং ঠাকুরবাড়ি মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান, পাট, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লীবিদ্যুতায়ন কর্মসূচীর আওতাধীন। তবে ৩২.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস গভীর নলকূপ ৯১.৭%, ট্যাপ ৪.০% এবং অন্যান্য ৪.৩%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ২৫.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৭.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৭.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ৬, কমিউনিটি   ক্লিনিক ৪৯টি।

এনজিও ব্র্যাক, কেয়ার, সিভিপি, আশা, ঠেঙ্গামারা মহিলা সমিতি, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, আহছানিয়া মিশন, গণউন্নয়ন কেন্দ্র, একতা, ছিন্নমুল মহিলা সমিতি, গণউন্নয়ন ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উদ্দীপন, পারিবারিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। [আবু জাফর সাবু]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গাইবান্ধা সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।