গঙ্গোপাধ্যায়, নারায়ণ

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:৫২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

গঙ্গোপাধ্যায়, নারায়ণ (১৯১৮-১৯৭০)  প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক। প্রকৃত নাম তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, ‘নারায়ণ’ তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম। ১৯১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি  দিনাজপুর জেলার বালিয়াডিঙ্গিতে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল  বরিশাল জেলার বাসুদেবপুরের নলচিরায়। পিতা প্রমথনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন দারোগা।

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৩ সালে দিনাজপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। তারপর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হলেও রাজনৈতিক কারণে ১৯৩৫ সালের ১ মে তাঁকে  ফরিদপুর ত্যাগ করতে হয় এবং রিভোলিউশনারি সাসপেক্ট হিসেবে অন্তরীণ থাকার কারণে তিনি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারেননি। পরে তিনি বরিশালের বিএম কলেজে দ্বিতীয় বার্ষিক শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং নন-কলেজিয়েট ছাত্র হিসেবে আইএ পাস করেন (১৯৩৬)। একই কলেজ থেকে তিনি ডিস্টিংকশনসহ বিএ (১৯৩৮) পাস করেন। তারপর ১৯৪১ সালে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফল অর্জন করায় তিনি ‘ব্রহ্মময়ী স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৬০ সালে তিনি ডিফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় আনন্দচন্দ্র কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর জলপাইগুড়ি (১৯৪২-৪৫) ও সিটি কলেজে (১৯৪৫-১৯৫৫) অধ্যাপনা করার পর ১৯৫৬ সাল থেকে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্যচর্চা শুরু হয় ছাত্রজীবনে কাব্য রচনার মধ্য দিয়ে। কালক্রমে তিনি গল্প,  উপন্যাস, নাটক প্রভৃতি রচনা করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হলো: উপন্যাস উপনিবেশ (৩ খন্ড, ১৯৪৪-৪৭), সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী (১৯৪৪), মন্দ্রমুখর (১৯৪৫), শিলালিপি (১৯৪৯), লালমাটি (১৯৫১), কৃষ্ণপক্ষ (১৯৫১), বৈতালিক (১৯৫৫), অসিধারা (১৯৫৭); গল্পগ্রন্থ ট্রফি (১৯৪৯), বীতংস, জন্মান্তর, ভাঙ্গাবন্দর, দুঃশাসন, ভাটিয়ালী (১৯৫৭), একজিবিশন (১৯৬১), ছায়াতরী, ঘূর্ণি, আলেয়ার রাত; প্রবন্ধগ্রন্থ সাহিত্য ও সাহিত্যিক (১৯৫৬), সাহিত্যে ছোটগল্প (১৯৫৬), কথাকোবিদ রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৫), ছোটগল্পের সীমারেখা (১৯৬৯); রম্যরচনা সুনন্দর জার্নাল (১৯৬৬); কিশোরগ্রন্থ সপ্তকান্ড, অন্ধকারের আগন্তুক, ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৫২), ছুটির আকাশ, খুশির হাওয়া, ঝাউ বাংলোর রহস্য, পঞ্চাননের হাতি, পটলডাঙ্গার টেনিদা, গল্প বলি গল্প শোন, অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ, টেনিদার অভিযান (১৯৪১) ইত্যাদি। তাঁর রচিত নাটক ভাড়াটে চাই এবং আগন্তুক সে সময় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও রচনা করেন। তাঁর রচিত বহু গান, চলচ্চিত্র ও রেকর্ডে গৃহীত হয়েছে।

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় শনিবারের চিঠির নিয়মিত লেখক ছিলেন। জীবনের শেষ সময়ে তিনি সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় ‘সুনন্দ’ ছদ্মনামে লিখতেন। ইতিহাসবোধ ও স্বাদেশিকতা তাঁর রচনার উপজীব্য। বাংলার নিসর্গ ও নদনদীর তরঙ্গমালা, বাঙালির আদিম ও আরণ্যক জীবন তাঁর উপন্যাসে রোম্যান্টিকতার নিরিখে মনোজ্ঞভাবে চিত্রিত হয়েছে। তাঁর ছোটগল্পগুলি নাটকীয় ব্যঞ্জনায় সমৃদ্ধ। বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে আনন্দ পুরস্কার (১৯৪৬) ও সাপ্তাহিক বসুমতীর পক্ষ থেকে সম্বর্ধনা (১৯৬৮) জ্ঞাপন করা হয়। ১৯৭০ সালের ৬ নভেম্বর তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।  [সিদ্দিকা মাহমুদা]