খান, মোমতাজ আলী

খান, মোমতাজ আলী (১৯২০-১৯৯০)  গায়ক, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত সংগ্রাহক। জন্ম ১ আগস্ট ১৯২০ সালে ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে। পিতা আফসার আলী খান, মাতা বেদৌরা খাতুন।

মোমতাজ আলী খান উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন ওস্তাদ নিসার হোসেনের কাছে। সঙ্গীতে অসাধারণ দক্ষতা অর্জনের ফলে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিও, কলকাতা কেন্দ্রের শিল্পী নির্বাচিত হন (?)। এখানে তিনি পরিচিত হন কবি জসীমউদ্দীন ও শিল্পী কাশেম মল্লিকের সঙ্গে। সঙ্গীতে মোমতাজ আলী খানের আবির্ভাবের সময় বাংলাদেশে আববাসউদ্দিন আহমদের প্রভাব ছিল অসাধারণ। তা সত্ত্বেও হিজ মাস্টার্স ভয়েজ, মেগাফোন, টুইন প্রভৃতি গ্রামোফোন কোম্পানী থেকে সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য মোমতাজ আলী খান আমন্ত্রিত হন।

তিনি গায়ক, গীতিকার ও সুরকার হিসেবে সমধিক খ্যাতি লাভ করেন। অপরদিকে তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে লোকজ গান সংগ্রহ করেও বাংলা গানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছেন। নিজের লেখা গান ছাড়াও তিনি লোকজ গানে সুরারোপ করেন। লালন শাহ্, পাগলা কানাই, হাছনরাজা, কালু শাহ সহ কবি জসীমউদ্দীনের অনেক গানের সুর তাঁরই সৃষ্টি।

মোমতাজ আলী খান সঙ্গীতের একজন ভালো শিক্ষকও ছিলেন। তাঁর কাছে গানের তালিম নিয়েছেন-লায়লা আর্জুমান্দ বানু, আব্দুল আলীম, ফেরদৌসী রহমান, নীনা হামিদ, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, মীনা বড়ুয়া প্রমুখ শিল্পী। তাঁর সৃষ্ট সুরের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আববাসউদ্দিন আহমদ, শচীন দেববর্মণ, পূর্ণদাস বাউল, আব্দুল আলীম, আব্দুল লতিফ, লায়লা আর্জুমান্দ বানু, মোস্তফা জামান আববাসী, ফেরদৌসী রহমান, নীনা হামিদ প্রমুখ। তাঁর পুরো পারিবারই ছিল সঙ্গীতপ্রেমি। তাঁর ছয় কন্যার সবাই সঙ্গীতচর্চা করতেন। তবে তাঁদের মধ্যে পিলু মোমতাজ জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

মোমতাজ আলী খান যেসব গানে কণ্ঠ দিয়েছে এবং সুর সৃষ্টি করেছেন সেসব গানের উল্লেখযোগ্য: কবি জসীমউদ্দীন রচিত এবং শচীনদেব বর্মণের গাওয়া জনপ্রিয় গান-‘বন্ধু রঙ্গিলা, রঙ্গিলারে,/আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কৈ গেইল্যা রে।’  শচীনদেব বর্মণের অপর একটি গান‘-এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া/এত যতনে গড়াইছেন সাঁই।’ এ দুটি বিখ্যাত গানের সুর স্রষ্টা মোমতাজ আলী খান। এমনি আরও অসংখ্য গানের গীতিকার ও সুরকার তিনি।

সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৮০ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৯০ সালে ৩১ আগস্ট ঢাকায় মোমতাজ আলী খানের মৃত্যু হয়।  [খালিদ হাসান কমল]