ক্রিপস মিশন

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৫৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ক্রিপস মিশন ১৯৪২ সালের ২৩ মার্চ ক্যাবিনেট মন্ত্রী স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতে প্রেরিত একটি মিশন। এ মিশনের মাধ্যমে ভারতকে নতুন কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়। শ্রমিক দলের একজন চরমপন্থি সদস্য ও সে সময়ের হাউস অব কমন্স-এর নেতা ক্রিপস ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন প্রবল সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দুটি বিষয়ের ওপর বিবেচনা করে ক্রিপস মিশন প্রণোদিত হয়। প্রথমত, ১৯৪০ সালের অক্টোবরে গান্ধী কর্তৃক সত্যাগ্রহ আন্দোলনের আহবান, যার উদ্দেশ্য ছিল ভারতে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ব্রিটিশদের যুদ্ধ তৎপরতাকে বিঘ্নিত করা এবং ব্রিটিশদের স্বার্থে এর সমাপ্তি টানা। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধে জাপানিদের হাতে সিংগাপুর (১৯৪২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি), রেঙ্গুন (৮ মার্চ) ও আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের (২৩ মার্চ) পতন সমগ্র ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কাঠামোকে হুমকির সামনে ফেলে দিয়েছিল। এরকম সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্রিটিশগন উপলব্ধি করেছিল যে, ভারতীয়দের সমর্থন পেতে হলে কিছু কাজ করতে হবে।

ক্রিপস প্রস্তাবে যুদ্ধের পরে যত দ্রুত সম্ভব ব্রিটিশ কমনওয়েলথের ভেতর একটি ভারতীয় ইউনিয়ন গঠনের ইচ্ছার কথা পুনরাবৃত্তি করা হয়, এবং তার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব পেশ করা হয়। ইলেক্টরাল কলেজের ন্যায় কার্য সম্পাদনের জন্য প্রাদেশিক আইন পরিষদ কর্তৃক একটি সংসদীয় সভা নির্বাচিত করতে হবে। এ সংসদই এর পর চুক্তি সম্পাদনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করবে। এতে কমনওয়েলথ থেকে ভবিষ্যতে বের হয়ে যাওয়ার অধিকারের কথা স্পষ্টভাবে উল্লিখিত ছিল। যোগদানের বিষয়টি ভারতীয় রাষ্ট্রসমূহের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ব্রিটিশ সরকারের সাথে দেশীয় রাজন্যবর্গের সম্পাদিত চুক্তি পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয়।

পরবর্তী যুদ্ধকালীন সম্পূর্ণ সময়ে এ প্রস্তাব ভারতীয় রাজনীতিতে প্রাধান্য বজায় রাখে। যদিও ব্রিটিশ কর্মকর্তাগণ দাবি করেন যে, ক্রিপস প্রস্তাব তার সরলতা ও স্পষ্টতার জন্য চিহ্নিত, তথাপি ব্যাপক দ্ব্যর্থবোধকতা ও ভুলবোঝাবুঝির জন্য শেষ পর্যন্ত এটি বিফল হয়। শাসকদের দ্বারা রাষ্ট্রসমূহের প্রতিনিধি মনোনয়ন সম্পর্কে কংগ্রেস ভীষণ সমালোচনা মুখর ছিল। জওহরলাল নেহরু ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধে ভারতীয়দের সমর্থন সংগঠিত করার জন্য জোরালোভাবে মত প্রকাশ করলেও কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ এবং গান্ধী নিজেও এ ব্যাপারে ছিলেন উদাসীন। ফলে কংগ্রেস-ব্রিটিশ সম্পর্ক তিক্ত হয় এবং অন্যান্য ঘটনা ভারত ছাড় আন্দোলন এর মতো সম্পূর্ণ সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে দ্রুত টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। মিশনের ব্যর্থতার জন্য ক্রিপস কংগ্রেসকে দায়ী করে, অন্যদিকে কংগ্রেস এ দায়ভার চাপায় ব্রিটিশ সরকারের ওপর। এভাবে অবিভক্ত স্বাধীন ভারত প্রতিষ্ঠার একটি বড় সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়।  [মোহাম্মদ শাহ]