ক্রাস্টেসিয়ান

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:০৭, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ক্রাস্টেসিয়ান (Crustacean)  Arthropoda পর্বের Crustacea শ্রেণীর সদস্যদের সাধারণ নাম। এসব প্রাণী প্রধানত স্বাদুপানি ও লোনাপানির বাসিন্দা। কয়েকটি থাকে আর্দ্রভূমিতে, কিছু আবার পরজীবী। এদের সবার থাকে একজোড়া করে শুঙ্গক (antennule) ও শুঙ্গ (antenna)। এদের খোলস  কাইটিন (chitin) নামক পদার্থে গঠিত এবং তারা খোলস বদলে বাড়তে থাকে। লিঙ্গ পৃথক কিংবা একীভূত, স্ত্রী ও পুরুষ সহজেই চেনা যায়। এদের সক্রিয় লার্ভা-পর্যায় আছে। এ দলে রয়েছে  কাঁকড়াচিংড়ি, বার্নাকল, জলজ ফ্লি, মেছো-উকুন, হারমিট ক্রাব, সো-বাগ ও পিল-বাগ। আজ পর্যন্ত জানা প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ২৬,৭৮২।

ক্রাস্টেসিয়ান: সাতারু কাঁকড়া

লোনা ও স্বাদুপানির অনেকগুলি অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির কাঁকড়া ও চিংড়ি বাংলাদেশে আছে। স্বাদুপানির ৪টি ও সামুদ্রিক ১১টি প্রজাতির কাঁকড়ার মধ্যে উপকূলীয় Scylla serrata বাণিজ্যিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। Neptunus pelagicus, N. sanguinolentus, Gelasimus annulipes ইত্যাদি সামুদ্রিক কাঁকড়াগুলিও গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য সামুদ্রিক কাঁকড়া আকারে ছোট ও কমদামি। স্বাদুপানির ৪ জাতের কাঁকড়ার মধ্যে শুধু Paratelphusa lamelliforns প্রজাতিই খাওয়ার উপযোগী। ১৯৯৫ সালে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাঁকড়া রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ প্রায় ৫৭,৯২,০০০ মার্কিন ডলার উপার্জন করে।

বাংলাদেশে স্বাদুপানির অন্তত ১০টি ও সামুদ্রিক ১৯টি প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। স্বাদুপানির গলদা চিংড়ি (Macrobrachium rosenbergii) বাণিজ্যিকভাবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং রপ্তানি থেকে প্রতি বছর পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। সামুদ্রিক চিংড়ির মধ্যে অর্থকরী প্রজাতি হলো কোলা চিংড়ি (Penaeus merguiensis), বাগদা চিংড়ি (P. monodon), চাপড়া চিংড়ি (P. indicus), বাঘাতারা চিংড়ি (P. semisulcatus), হরিনা চিংড়ি (Metapenaeus monoceros) এবং কুচো চিংড়ি (M. brevicornis)।

চিংড়ি ব্যবসায় রয়েছে চিংড়ি ধরা ও চিংড়ি চাষ। বঙ্গোপসাগরের প্রায় ৭,৮০০ বর্গ কিমি আয়তনের বাংলাদেশের একান্ত অর্থনৈতিক এলাকার ৪টি মৎস্যাঞ্চল থেকে চিংড়ি ধরা হয় আর উপকূলীয় প্রায় ১,৪৫,০০০ হেক্টরে হয় চিংড়ি চাষ। গলদা চিংড়ি (M. rosenbergii) দেশের বিস্তৃত  হাওর, বাঁওড়বিল ও  নদী থেকে সংগ্রহ করা হয়, কেউ কেউ ইদানিং পুকুরেও চাষ করে। কিছু হ্যাচারিতে এ চিংড়ির পোনা উৎপন্ন হয় এবং বিভিন্ন নদী থেকেও চাষের জন্য প্রচুর পোনা ধরা হয়। বাগদা চিংড়ির (P. monodon) পোনা উৎপাদনের জন্য কক্সবাজার ও খুলনায় আছে ৬টি হ্যাচারি, অধিকন্তু কক্সবাজার ও খুলনার উপকূলীয় অঞ্চল থেকেও মানুষ এ চিংড়ির পর্যাপ্ত পোনা ধরে। বিশ্বে গলদা ও বাগদা চিংড়ির মোট উৎপাদন ৯,৩১,৭৮৮ মে টনের মধ্যে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ যুগিয়েছিল প্রায় ৩,৪০৩০ মে টন।

বঙ্গোপসাগরে ৬ প্রজাতির লবস্টার (lobster) পাওয়া যায় প্রধানত বাংলাদেশের মহীসোপানের পাথুরে ও বালুময় অঞ্চলে। সেন্ট মার্টিনস দ্বীপের লাগোয়া এলাকা থেকেই গিলনেট, চিংড়ির ট্রলার ও পাথুরে জাল দিয়ে এগুলি ধরা হয়। Panulirus polyphagus ও Thenus orientalis দুটি প্রধান অর্থকরী প্রজাতি।

Artemia (brine shrimp) সামুদ্রিক চিংড়ির লার্ভার জীবন্ত খাদ্যের অন্যতম প্রধান যোগানদার। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এটির ব্যাপক চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাদুপানির Daphnia, Cypris ও অন্যান্য কিছু জু-প্ল্যাঙ্কটন মাছ ও চিংড়ির উত্তম খাদ্য। মৎস্যপরজীবী Argulus রুই-কাতলা সহ অনেক জাতের মাছকেই আক্রমণ করে। সামুদ্রিক জু-প্ল্যাঙ্কটনের মধ্যে মৎস্য খাদ্য হিসেবে ১৫-২০ প্রজাতির Copepod গুরুত্বপূর্ণ।  [মোঃ আবদুল কাদের]