কুষ্ঠরোগ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৪৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

কুষ্ঠরোগ (Leprosy)  Mycobacteria leprae নামক জীবাণু ঘটিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের এক তীব্র সংক্রামক ব্যাধি। ত্বকের বিকৃত ক্ষত, প্রান্তিক স্নায়বিক ক্ষয় ও দুর্বলতা ইত্যাদি এ রোগের বৈশিষ্ট্য। এ জীবাণুর সুপ্তিকাল অত্যন্ত দীর্ঘ বিধায় কোথায় কখন রোগটির সংক্রমণ ঘটে তা নির্ণয় প্রায়শই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

কুষ্ঠরোগের দুটি সাধারণ ধরন গুটিযুক্ত (tuberculoid) ও কুষ্ঠগ্রস্ত (lepromatous)। উভয় অবস্থাতেই ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হয়, কিন্তু কুষ্ঠগ্রস্ত অবস্থা সর্বাধিক মারাত্মক যাতে বড় বড় বিকৃত পিন্ড গড়ে ওঠে। এ রোগের সকল অবস্থাই ধীরে ধীরে প্রান্তিক স্নায়ুগুলির ধ্বংস ঘটায় যা পরবর্তীকালে ত্বকের সংবেদনশীলতা বিনষ্ট করে এবং মাংসপেশীগুলিকে দুর্বল করে দেয়। দীর্ঘকাল কুষ্ঠরোগাক্রান্ত থাকলে প্রায়শই হাত বা পা ব্যবহারের স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এই রোগের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে ত্বকের এক বা একাধিক বিবর্ণ দাগ বা ক্ষত যাতে স্পর্শ, তাপ অথবা ব্যথা অনুভূত হয় না; ত্বকের ক্ষত কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসেও আরোগ্য হয় না; হাত, বাহু, পা ও পায়ের পাতায় অসাড়তা দেখা দেয় এবং চলার সময় পায়ের মাংসপেশীর দুর্বলতাজনিত কারণে পায়ের আড়ষ্টতা বেড়ে যায়।

কুষ্ঠরোগ বাংলাদেশের একটি  জনস্বাস্থ্য সমস্যা। শারীরিক অক্ষমতা, সামাজিক ঘৃণা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সমস্যাটিকে জটিলতর করে তোলে। রোগটি দেশের ৬৪ জেলায় সমভাবে বিস্তৃত নেই; ৪৬১ উপজেলার ১২০টিতে এ রোগের প্রকোপ বেশি। সর্বাধিক সংখ্যক কুষ্ঠরোগী আছে রংপুর ও দিনাজপুরে। বগুড়া, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ রোগের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম। খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে এ রোগের প্রকোপ আরও কম। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে অল্প কয়েকটি থানায় ব্যাকটেরিয়া বিরোধী ড্যাপসোন চিকিৎসা (dapsone monotherapy) পদ্ধতিতে কুষ্ঠরোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এ কার্যক্রম ১৯৫ উপজেলায় বিস্তার লাভ করে। ১৯৮৫ সাল থেকে উপজেলাগুলিকে ড্যাপসোন পদ্ধতির পরিবর্তে MDT (Multi Dose Therapy) মাধ্যমে কুষ্ঠরোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে নিবিড় শারীরিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলাই সংক্রমণ রোধের প্রধান উপায়। দীর্ঘসময় চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে সংক্রমণের ক্ষমতা থাকে না এবং তারা জীবাণু দ্বারা অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে না। শুধু এ রোগ চিকিৎসার জন্যে বাংলাদেশে কয়েকটি কুষ্ঠরোগ হাসপাতাল (Leprosy Hospital) রয়েছে। [মোঃ শহীদুল্লাহ]