কুষ্টিয়া সদর উপজেলা

Banglapedia admin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৬:৪৫, ২৩ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা (কুষ্টিয়া জেলা)  আয়তন: ৩১৮.২২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪২´ থেকে ২৩°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫৫´ থেকে ৮৯°০৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলা, দক্ষিণে হরিণাকুন্ড ও শৈলকূপা উপজেলা, পূর্বে কুমারখালী উপজেলা, পশ্চিমে মিরপুর (কুষ্টিয়া) ও আলমডাঙ্গা উপজেলা।

জনসংখ্যা ৫০২২৫৫; পুরুষ ২৫৩৪৯৯, মহিলা ২৪৮৭৫৬। মুসলিম ৪৮১৬৬৫, হিন্দু ১৯৪৫২, বৌদ্ধ ২৯, খ্রিস্টান ১৪২ এবং অন্যান্য ৯৬৭। এ উপজেলায় বাগদী, বুনো, বাঁশফোড় প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় পদ্মা, কালীগঙ্গা, গড়াই ও কুমার নদী এবং সাগরখালী খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন কুষ্টিয়া সদর থানা গঠিত হয় ১৮২৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। ১৯৬৯ সালে পৌরসভা গঠিত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪ ১১৪ ১৬৭ ১০৮৪২৩ ৩৯৩৮৩২ ১৫৭৮ ৭০.৫ (২০০১) ৪৮.০
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
১৩.৩১ (২০০১) ১২ ৩৬ ১০২৯৮৮ ৬২৮৫ (২০০১) ৭৪.৮
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১.০১ (২০০১) ৫৪৩৫ ১৫৮৮৮ (২০০১) ৬৯.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আইলচড়া ১৭ ৫৩০৭ ১০৫৫৮ ১০৪৮৪ ৪৬.৮
আব্দালপুর ১৬ ৬২০২ ১৪০৪৮ ১৩৬৮৯ ৪১.৩
আলমপুর ১৮ ৬৬৫০ ১৩৮৬৩ ১৩৭৯৭ ৪৮.০
উজানগ্রাম ৯৪ ৫২৯২ ১১৯৩৪ ১১৭৫৪ ৪৫.১
গোস্বামীদুর্গাপুর ৩১ ৫৫৪৪ ১০০৮৯ ১০১৪৭ ৩৫.০
জিয়ারোখী ৫৬ ৫৭৩২ ১৩৪৪১ ১৩৬৯৪ ৪১.৪
ঝাউদিয়া ৬৩ ৬৬০২ ১২১৭৬ ১১৮৪৯ ৩৮.২
পাটিকাবাড়ী ৮৮ ৪২২৪ ৯৫৮৪ ৯৯০০ ৪৮.০
বাট্টালি ৫০ ৫১৭৩ ২২৮৫৯ ২২৭৯১ ৫২.৪
বারখাদা ২৫ ৪২০০ ২১৪০৮ ২০৮৪৭ ৫৬.১
মজমপুর ৭৫ ২৮৩৫ ২১৬৫৩ ২১৫৬২ ৬১.৪
মনোহরদিয়া ৮২ ৫২৪৩ ১০৪৬৯ ১০৩৪৪ ৪৫.৩
হরিনারায়ণপুর ৩৭ ৩৮০৪ ১৩৫৪৩ ১৩০৮৬ ৫১.২
হাট্শ হরিপুর ৪৪ ৮৫০১ ১৪৯৮৭ ১৪৭১১ ৪৫.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মুগল আমলে নির্মিত ঝাউদিয়া মসজিদ এবং শায়েস্তা খাঁর আমলের স্বস্তিপুর মসজিদ।

ঐতিহাসিক ঘটনা বাংলার অন্যান্য অংশের মতো কুষ্টিয়ায়ও নীল বিদ্রোহ সংঘঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ১৪৭ জন পাকসেনা কুষ্টিয়া পৌঁছালে তারা সেখানকার পুলিশ, আনসার, ছাত্র এবং স্থানীয় জনগণ কর্তৃক ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হয়। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ কুষ্টিয়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়। ৫ সেপ্টেম্বর বংশীতলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাকবাহিনী উপজেলার মিলপাড়া কোহিনূর লজ নামক বাড়িতে একই পরিবারের প্রায় ১২ জনকে হত্যা করে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা কুষ্টিয়া জেলা স্কুল, গাড়াগঞ্জ, কামারপাড়া প্রভৃতি স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ৩টি গণকবর (কুষ্টিয়া জেলা স্কুল, কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন ও গড়াই নদীর তীরে) রয়েছে এবং কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত বাংলা ভাস্কর্য ও বংশীতলায় ১টি সমাধিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান শাহ সুজার মসজিদ, পাটিকাবাড়ী শাহী মসজিদ, কুঠিপাড়া পুরাতন জামে মসজিদ, লাহিনী কারিকরপাড়া দ্বিতল জামে মসজিদ, কুষ্টিয়া বড় জামে মসজিদ, ইসলামপুর শাহী মসজিদ, গোস্বামী দুর্গাপুর রাধা রমণের মন্দির, লাহিনী সর্বজনীন পূজা মন্দির, চার্চ অব বাংলাদেশ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৩.৯%, পুরুষ ৫৬.২%, মহিলা ৫১.৫%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, কলেজ ১৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪০, মাদ্রাসা ১৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৯), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ (১৯৪৬), কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৯৪৭), কুষ্টিয়া কারিগরি মহাবিদ্যালয় (১৯৬৪), কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৭), কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ (১৯৬৭), কুষ্টিয়া সেবিকা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, কুষ্টিয়া পি টি আই, গোস্বামী দুর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৬০), হরিনারায়ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৯১), কুষ্টিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), দিনমনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩০), মোহনীমোহন বিদ্যাপীঠ (১৯৪৪), কুষ্টিয়া টেকনিক্যাল স্কুল (১৯৫৮), কুষ্টিয়া জেলা স্কুল (১৯৬০), মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯৮)।

পত্র-পত্রিকা এবং সাময়িকী  দৈনিক: বাংলাদেশ বার্তা, আন্দোলনের বাজার, আজকের আলো, বজ্রপাত, কুষ্টিয়া, আজকের সূত্রপাত, দেশভূমি, দেশতথ্য, হাওয়া, শিকল; সাপ্তাহিক: ইস্পাত, দেশব্রতী।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১০, নাট্যমঞ্চ ২, সিনেমা হল ৪, সাহিত্য সংগঠন ৪, মহিলা সংগঠন ৯।

বিনোদন কেন্দ্র শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শিশু পার্ক।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪১.১২%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৫৮%, শিল্প ৩.১৬%, ব্যবসা ২.১২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৯৪%, চাকরি ১৩.৩১%, নির্মাণ ২.০৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬২% এবং অন্যান্য ২৭.৯৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৭.৬৬%, ভূমিহীন ৫২.৩৪%। শহরে ৩১.৩০% এবং গ্রামে ৫২.৩২% পরিবারের কৃষিভূমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আখ, আলু, তামাক, পান।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসল  নীল।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কলা, কাঁঠাল, লিচু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এবং হ্যাচারি রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৯৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩৮, কাঁচারাস্তা ২৪৯; নৌপথ ৫ কিমি; রেলপথ ৮ কিমি; রেল স্টেশন ৩।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা রাবার শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, এ্যালুমিনিয়াম শিল্প, গার্মেন্টসশিল্প, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, ঔষধ ফ্যাক্টরি, সুগার মিল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, নকশি কাঁথা, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

হাটবাজার ও মেলা কমলাপুর হাট, জিয়ারোখী হাট, হরিনারায়ণপুর হাট, ঝাউদিয়া হাট এবং রথ মেলা ও বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   তামাক, পান, কলা এবং আখ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭৭.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.০%, ট্যাপ ৪.১% এবং অন্যান্য ১.৯%। উপজেলার ৮.০৪% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭১.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৩.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১, মাতৃসদন এবং শিশুসেবা কেন্দ্র ১, টিবি হাসপাতাল ১, ডায়াবেটিক কেন্দ্র ১, চক্ষু হাসপাতাল ১, শিশু হাসপাতাল ১, হাসপাতাল ২, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৪, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ৫০।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৭৬ ও ১৮৯৭ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার কয়েক হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, জাগরণী, দৃষ্টি।  [এস.এম রাকিব নেহাল]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।