কুষ্টিয়া জেলা

কুষ্টিয়া জেলা (খুলনা বিভাগ)  আয়তন: ১৬২১.১৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪২´ থেকে ২৪°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪২´ থেকে ৮৯°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলা, দক্ষিণে চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলা, পূর্বে রাজবাড়ী জেলা, পশ্চিমে মেহেরপুর ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।

জনসংখ্যা ১৭৪০১৫৫; পুরুষ ৮৯৩৭৪৪, মহিলা ৮৪৬৪১১। মুসলিম ১৬৮২১৫৪, হিন্দু ৫৭২৪১, বৌদ্ধ ৩১৩, খ্রিস্টান ৬৭ এবং অন্যান্য ৩৮০।

জলাশয় প্রধান নদী: পদ্মা, গড়াই, মাথাভাঙ্গা এবং কুমার নদী।

প্রশাসন কুষ্টিয়া জেলা এক সময়ে অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে কুষ্টিয়া সদর, চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুর মহকুমা নিয়ে এই জেলার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এর তিনটি মহকুমা আলাদা জেলায় পরিণত হয়েছে। জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে দৌলতপুর সর্ববৃহৎ (৪৬৮.৭৬ বর্গ কিমি) এবং এটি জেলার মোট আয়তনের ২৮.৯২% এলাকা জুড়ে অবস্থিত। জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা খোক্সা (৯৯.১৭ বর্গ কিমি)।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
১৬২১.১৫ ৬১ ৭১১ ৯৭৮ ২১৪২৭৫ ১৫২৫৮৮০ ১০৭৩ ৪০.৪
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলা নাম আয়তন (বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
কুমারখালী ২৫৮.৩৭ ১১ ১৮৭ ২০১ ২৯৭৭২৮ ১১৫২ ৩৮.১
কুষ্টিয়া সদর ৩১৬.২৭ ১৪ ১১৭ ১৬৫ ৪২৩৮১৮ ১৩৪০ ৪৮.৪
খোক্সা ১০৬.৭০ - ৮৫ ১০১ ১১৪১৮৮ ১০৭০ ৩৯.৭
দৌলতপুর ৪৬৮.৭৬ - ১৪ ১৫৩ ২৪৬ ৪৪৩৬৫৫ ৯৪৬ ৩৫.৬
ভেড়ামারা ১৫৩.৭২ ৪৭ ৭৮ ১৭৫৬৭৭ ১১৪৩ ৪২.৫
মিরপুর ৩১৭.৩৫ ১২ ১২২ ১৮৭ ২৮৫২৮৯ ৮৯৮ ৩৭.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ১৪৭ জন পাকসেনা কুষ্টিয়া সদরে পৌঁছালে তারা সেখানকার ইপিআর, পুলিশ, আনসার, ছাত্র এবং স্থানীয় জনগণ কর্তৃক ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হয়। ৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বংশীতলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়াও পাকসেনারা এ উপজেলার মিলপাড়ার এক বাড়িতে অতর্কিত আক্রমণ করে একই পরিবারের ১২ জনকে হত্যা করে। ৬ আগস্ট কুমারখালী উপজেলার স্থানীয় এক রাজাকারের বাড়ি আক্রমণ করতে গিয়ে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৩ নভেম্বর দৌলতপুর উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১৩, স্মৃতিস্তম্ভ ২, সরণি ১০। মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য একটি স্মারক ভাস্কর্য হচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের ‘মুক্তবাংলা’।

শিক্ষার হার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৪০.৪%; পুরুষ ৪৩.৪%, মহিলা ৩৭.২%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৯), কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৯৪৭), কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৭), কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ (১৯৬৮), কুমারখালী ডিগ্রি্ কলেজ (১৯৭০), খোক্সা ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), পান্টি ডিগ্রি কলেজ (১৯৭৮), কুমারখালী এম এন পাইলট হাইস্কুল (১৮৫৬), গোস্বামী দুর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৬০), জুনিয়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৭২), খোক্সা জানিপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০০), যদুবয়রা হাইস্কুল (১৯০২), কুষ্টিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), মিরপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), দিনমনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩০), মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮), পান্টি হাইস্কুল (১৯৫৭), কুষ্টিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং কুষ্টিয়া জেলা স্কুল (১৯৬০), দৌলতপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৩), কুমারখালী বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬৩), মরিচা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৭৩), দৌলতপুর পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৭৯), ভেড়ামারা মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৬৯), প্রাগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৮৯)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫১.৭১%, অকৃষি ৫.৫৮%, শিল্প ৩.৯৯%, ব্যবসা ১৭.৬১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.০৩%, নির্মাণ ১.৫৪%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, চাকরি ৭.৩২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪০% এবং অন্যান্য ৭.৬৭%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: আজকের আলো, বাংলাদেশ বার্তা, বজ্রপাত, শিকল, সূত্রপাত, কুষ্টিয়া দর্পণ, সৃজনশীল, প্রত্যাশার প্রতিবিম্ব, দেশভূমি, দেশতথ্য, হাওয়া, শিকল, নিহারিকা, দেশব্রতী। সাপ্তাহিক: দ্রোহ, কুষ্টিয়ার কণ্ঠ, সীমান্ত কথা; পাক্ষিক: হিতকরী; মাসিক: কাকলী, অরুণোদয়, দৌলতপুর বার্তা, শৈবী; দ্বিমাসিক: অভিযান; সাময়িকী: প্রদীপ, চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙ্গেছে, হিসনা, পলাশী, পারাবার, প্রতিধ্বনি; অবলুপ্ত পত্রিকা: জাগরণ (১৯২১), গ্রামবার্তা (১৮৫৭), দিপীকা (১৯৩৩), শৈবী (১৮৯৫), আজাদ (১৯৩২), তিলি সমাজ, প্রত্যয়, সৃজনশীল, প্রত্যাশার প্রতিবিম্ব, কোহিনুর, যোগাযোগ, ইস্পাত, অবরুদ্ধ কণ্ঠ।

লোকসংস্কৃতি বাউলগান, মুর্শিদিগান, জারিগান, সারিগান, গাজীরগান, মারফতি, পুঁথিপাঠ, পুতুল নাচ উল্লেখযোগ্য।

দর্শনীয় স্থান হার্ডিঞ্জ ব্রিজ (১৯১২), ভেড়ামারা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র (ভেড়ামারা); রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি, বাউল শিল্পী লালন সাঁই-এর মাযার, সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের বাস্ত্তভিটা (কুমারখালী), শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শিশু পার্ক (কুষ্টিয়া সদর)।  [এস এম রাকিব নেহাল]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কুষ্টিয়া জেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; কুষ্টিয়া জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।