কুলিয়ারচর উপজেলা

কুলিয়ারচর উপজেলা (কিশোরগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১০৪.০১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০৬´ থেকে ২৪°১৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৯´ থেকে ৯০°৫৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বাজিতপুর উপজেলা, দক্ষিণে বেলাবো ও ভৈরব উপজেলা, পূর্বে ভৈরব ও বাজিতপুর উপজেলা, পশ্চিমে কটিয়াদি ও বেলাবো উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৫৬৫৯২; পুরুষ ৭৯৪১২, মহিলা ৭৭১৮০। মুসলিম ১৪৩৫৩৮, হিন্দু ১২৯৯৮ এবং অন্যান্য ৫৬।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা  ও আড়িয়াল খাঁ।

প্রশাসন কুলিয়ারচর থানা গঠিত হয় ১৯২১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৪৬ ৯৭ ২৮১৬২ ১২৮৪৩০ ১৫০৫ ৪৯.৮ ৫১.৬
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১১.০৮ ৩৭ ২৮১৬২ ২৫৪২ ৪৫.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ওসমানপুর ৫৯ ২৫০১ ৬২৩৪ ৬০৮৭ ২৮.৫৬
গোবাড়ীয়া আবদুল্লাপুর ৩৫ ৫১০৬ ১৫০৪২ ১৪৪৯৮ ৪৭.৪৮
ছয়সুতি ১১ ৫৩৫০ ১৪১৭৮ ১৪০২১ ৪০.১২
ফরিদপুর ২৩ ১৭৭৭ ৫৩১৩ ৫০৭২ ৪১.০৯
রামদি ৭১ ৪৮৮৯ ১২৭৮৯ ১২৩৭৬ ৩৭.৭৫
সালুয়া ৮৩ ৩৭৩৬ ১১২৯৭ ১১৫২৩ ৩৯.৭৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর বাড়ি (কাপাসহাটিয়া), গোসাইর আখড়া (রামদি) ও দাসপাড়া কালীবাড়ি (কুলিয়ারচর) উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ১৪ আগষ্ট এ উপজেলায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ২৮ জন রাজাকার অস্ত্রসহ মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৭০, মন্দির ১০, মঠ ৪, মাযার ৩, আখড়া ২। কুলিয়ারচর বাজার জামে মসজিদ উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪১.৩%; পুরুষ ৪৫.১%, মহিলা ৩৭.৪%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কুলিয়ারচর ডিগ্রি কলেজ (১৯৭৩), লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বি এম কলেজ (২০০২), আগরপুর জি সি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), বীর কাশিমনগর এফ.ইউ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৭), ফরিদপুর ইউনিয়ন আঃ হামিদ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৭), ছয়সুতি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫০), কুলিয়ারচর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৬), মূছা মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৩), লক্ষ্মীপুর দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭), গোবরিয়া ই ইউ ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২৩)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকি  ভাটির দর্পণ (মাসিক)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৪৫, লাইব্রেরি ৩, সিনেমা হল ২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫২.৯৫%, অকৃষি শ্রমিক ২.৬৯%, শিল্প ১.১৮%, ব্যবসা ১৭.৪৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৪২%, চাকরি ৬.২৬%, নির্মাণ ১.২৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%,  রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৮৫% এবং অন্যান্য ১২.৭৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.১৬%, ভূমিহীন ৪১.৮৪%। শহরে ৩৫.৬৮% এবং গ্রামে ৬২.৫৪% পরিবারের কৃষিভূমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, বাদাম, সরিষা, আলু, কচু ও শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি মসুর, মুগ, পাট।

প্রধান ফল ফলাদি  আম, কলা, লিচু, কাঁঠাল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৪৭৩, গবাদিপশু ৩১, হাঁস-মুরগি ৩৮৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫২.১৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৮১.৬৯ কিমি, রেলপথ ৮ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা হিমাগার, পনির উৎপাদন কল, বরফকল, তেলকল, জুতা তৈরির কারখানা, আগরবাতি, মোমবাতি ও গোলাপজল তৈরির কারখানা উল্লেখযোগ্য ।

কুটিরশিল্প বাঁশশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তুলাশিল্প, বুননশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫, মেলা ২। কুলিয়ারচর বাজার এবং ডুমারকান্দা বাজারের অষ্টমীর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   মাছ, কলা, লিচু, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিলবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৮.২৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.২৯%, পুকুর ০.২৩%, ট্যাপ ০.৩৭% এবং অন্যান্য ৭.১১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৪.৯৭% (গ্রামে ৪১.২৭% ও শহরে ৬৩.৯৬%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৮.১৬% (গ্রামে ২৯.৭৭% ও শহরে ১৯.৯০%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৬.৮৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৪, পশু হাসপাতাল ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৬।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯১৮ সালের ভূমিকম্পে এ উপজেলার ঘরবাড়ি  ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার বহু লোক প্রাণ হারায়।

উল্লেখযোগ্য এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা।  [মোঃ আবুল কাশেম ভূঁইয়া]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কুলিয়ারচর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।