কুলি

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৪৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

কুলি দক্ষিণ এশিয়া, চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশসমূহে ভাড়াটে শ্রমিক অথবা বোঝা বহনকারী অর্থে শব্দটি ব্যবহূত হয়। উনিশ শতক ও বিশ শতকের প্রথমদিকে মাদাগাস্কার, মরিশাস, ফিজি, পশ্চিম ভারতীয় দেশসমূহ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে চাষাবাদের জন্য ভারত ও চীন থেকে শ্রমিকদের চুক্তিপত্র সম্পাদনের মাধ্যমে নেওয়া হতো। এ শ্রমিকদেরকে সাধারণভাবে কুলি আখ্যা দেওয়া হয়। এ সকল দেশে কুলি শব্দটি ওই সব শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয় যারা পরিবহণ, মাটি কাটার কাজ, রাজপথ নির্মাণ, কাঠবহন ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত ছিল। ভারতের রেলপথ নির্মাণের যুগে যে শ্রমিকগণ রেল লাইন বসানোর কাজ করত তাদেরকেও সাধারণত কুলি বলা হতো, এবং পরবর্তীকালে যে শ্রমিকেরা রেল স্টেশনে ও স্টিমার ঘাটে মালামাল উঠানো-নামানোর কাজ করত তাদেরকে কুলি বলা হতো। এটা কৌতূহলের বিষয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় রেলপথ নির্মাণের কাজে যে সকল শ্রমিক জড়িত ছিল তাদের বেশির ভাগকে কুলি বলা হতো, যদিও এ শ্রমিকদের অধিকাংশকে চীন থেকে চুক্তিপত্র সম্পাদনপূর্বক আনা হয়েছিল।

এটা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, কুলি শব্দটির উদ্ভব ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের একটি শ্রমিক গোষ্ঠী, কোলি থেকে হয়েছে। একটি বিকল্প ধারণা রয়েছে, শব্দটি বাংলায় অস্ট্রিক গোষ্ঠীর একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা ‘কোল’ থেকে উদ্ভূত, যারা মৃত্তিকা খনন এবং কাঠবহনে পেশাগতভাবে পটু ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ফ্যাক্টরি রেকর্ড থেকে জানা যায়, ভারতে বাণিজ্যরত ব্রিটিশ ও অন্যান্য ইউরোপীয় জাতিসমূহ সতেরো আঠারো শতকে তাদের প্রতিষ্ঠানসমূহে অন্তর্দেশীয় মালামাল পরিবহণের জন্য ‘কুলি’ নিয়োগ করত। উনিশ শতকের প্রথমদিকে যখন ক্রীতদাস প্রথা বিলুপ্ত হয়, তখন কুলি শ্রমিক বাজার বিশেষভাবে প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন কার্যত ক্ষেতে কাজ করে না এমন সকল শ্রমিক কুলি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। একথা বিশ্বাস করার পেছনে যুক্তি আছে যে, শ্রমিকদের একটি শ্রেণি হিসেবে কুলিদের সৃষ্টিতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের হাত ছিল। সাম্রাজ্যের সর্বত্র ঔপনিবেশিক চাষাবাদের কাজকর্ম সাধারণত ভারত ও চীন থেকে চুক্তিপত্র সম্পাদনপূর্বক নিয়ে আসা কুলিদের দ্বারা করানো হতো। যদিও বাংলায় স্থানীয় কুলিরা ছিল, তবুও বাংলার শ্রমিক বাজারে এ শ্রেণির শ্রমিকদের সরবরাহ প্রধানত উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ছোটনাগপুর ও যোধপুর থেকে আসত। [সিরাজুল ইসলাম]