কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:২০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট বাংলাদেশের জনকল্যাণকর সংস্থাসমূহের মধ্যে বৃহত্তম এবং প্রাচীনতম। ট্রাস্টের নিবন্ধিকৃত নাম কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লিমিটেড। শিল্পপতি এবং সমাজসেবক শহীদ রণদা প্রসাদ সাহা ১৯৪৭ সালে মা কুমুদিনীর স্মরণে এ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন এবং সে সময় থেকে এ সংস্থা বাংলাদেশের মানুষের, বিশেষ করে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

রায় বাহাদুর রণদা প্রসাদ সাহা তাঁর মা কুমুদিনীকে সাত বছর বয়সে হারান। বিনা চিকিৎসায় সংক্রামকব্যাধীতে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। দারিদ্রের কারণে রণদা শিক্ষার প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করতে না পারলেও ১৯১৯ থেকে ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ চলাকালে তিনি তাঁর ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ সমূহকে সর্বাত্মক কাজে লাগানো চেষ্টা করেছেন। সে সঙ্গে তিনি ভাগ্যাহতদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এ লক্ষ্যেই রণদা প্রসাদ সাহা ১৯৪৭ সালে তাঁর সকল সংস্থা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ’কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ নামে একটি ট্রাস্টের অধীনে আনেন। উদ্দেশ্য ছিল উক্ত ব্যবসার লভ্যাংশ থেকে দরিদ্র মানুষের সেবা প্রদান নিশ্চিত করা।

রণদা প্রসাদ সাহার কন্যা জয়াপতি সাহা ১৯৭১ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেছেন। মির্জাপুরে অবস্থিত মেয়েদের আবাসিক বিদ্যালয় ভারতেশ্বরী হোমস এর পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা বিজয়া। প্রচলিত হস্ত ও কুটিরশিল্প কারখানা সমূহকে সহায়তা দান সহ স্বাধীনতা যুদ্ধোত্তর সময়ের (১৯৭১) বিধবা এবং পরিত্যাক্তা নারীদের নিয়ে জয়াপতি এবং তাঁর ভাতৃবধু শ্রীমতি ‘কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফ্টস’ গড়ে তোলেন। কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফ্টস এ উৎপাদিত পণ্য এখন দেশ এবং দেশের বাইরে রপ্তানী করা হচ্ছে।

কুমুদিনী ট্রাস্টের অধীনে ১৯৮৪ সাল থেকে দরিদ্র পরিবারের ছেলে সন্তানদের ওয়েলডিং, প্লাম্বিং, বৈদ্যুতিক এবং কাঠের কাজের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য চালু করা হয় বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা। সে সঙ্গে ট্রাস্টের আয়ের উৎস সৃষ্টির লক্ষ্যে জয়াপতি সাহা একটি ঔষধ প্রস্ত্ততকারক কোম্পানি এবং পরবর্তীতে পোশাক প্রস্ত্তত কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর ভাইয়ের ছেলে রাজিব প্রসাদ সাহা এ ব্যবসার আরও সম্প্রসারণ ঘটান। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করে একটি পরিচালনা পর্ষদ (Board of Directors)।

রাজিব প্রসাদ সাহা (আর পি সাহার নাতী) ২০০০ সালের জানুয়ারি থেকে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লিমিটেড এর সভাপতি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ট্রাস্টটি ১৯১৩ সালের কোম্পানি অ্যাক্ট এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত এবং এর চার্টারে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হল, ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত ব্যবসা খাত থেকে আয়ের অর্থ সকল জনকল্যাণমূলক কাজ, কুমুদিনী হাসপাতাল ও মির্জাপুরে অবস্থিত ভারতেশ্বরী হোমস এর ব্যায় নির্বাহ করবে। ট্রাস্ট কোন ব্যক্তিগত মুনাফা বা লাভ করার লক্ষ্যে ব্যবহারযোগ্য হবে না। এর প্রত্যেক পরিচালক ও কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ এবং ট্রাস্টের নিয়ম ও নির্দেশাবলী জনকল্যাণ ও মানবিক কার্যাবলীর ওপর ভিত্তি করে নিয়ন্ত্রিত।’

ট্রাস্টের প্রত্যেক ব্যবসায়িক শাখার পৃথক করপোরেট পরিচিতি থাকলেও প্রত্যেকটি আবার ট্রাস্টের আইনি নিয়ন্ত্রনে আবদ্ধ। জনকল্যাণকর ও মানবিক কর্মকান্ডে অধিক অর্থ ব্যয় করার প্রত্যয়ে ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত প্রতিটি ব্যবস্থাপনা যার যার ব্যবসায় অধিক ও বৈধ মুনাফার লক্ষ্যে কাজের ওপর গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করে। যার ফলে কুমুদিনী ট্রাস্টের সকল বানিজ্যিক কার্যক্রম হয় প্রতিযোগিতামূলক ও লাভজনক। কার্যত ট্রাস্টের সকল ব্যবসা মির্জাপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় অবস্থিত প্রধান দপ্তর হতে পরিচালিত হয়ে থাকে।

নারায়ণগঞ্জ ও শীতলক্ষ্যা নদীর সন্নিকটে ট্রাস্টের রয়েছে ৮২ একর জমি। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রধান জনকল্যাণকর কার্যক্রমসমূহ হল: কুমুদিনী হাসপাতাল (মির্জাপুর), নার্সিং স্কুল, মহিলা মেডিকেল কলেজ, ভিলেজ আউটরিচ প্রোগ্রাম, ভারতেশ্বরী হোম্স, ট্রেড ট্রেনিং স্কুল, কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফ্টস প্রভৃতি। অন্যান্য সেবামূলক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে - পরিবেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প (ব্যবহার অযোগ্য পানি শুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট) এবং গ্রীন গোল্ড প্রজেক্ট (একটি কৃষিভিত্তিক প্রকল্প) প্রভৃতি।  [নাসরীন আক্তার]