কিবরিয়া, মোহাম্মদ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৩৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
মোহাম্মদ কিবরিয়া

কিবরিয়া, মোহাম্মদ (১৯২৯-২০১১)  অনন্য চিত্রশিল্পি। জন্ম পশ্চিম বঙ্গের বীরভূমে, ১ জানুয়ারি ১৯২৯ সাল। স্কুল শেষ করে ১৯৪৫ সালে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে (কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস্)। আর্ট স্কুল থেকে ১৯৫০ সালে পেইন্টিং-এ স্নাতক পাশ করেন। ১৯৫১ সাল ঢাকায় স্থায়ী নিবাস নেন এবং নওয়াবপুর স্কুলে ড্রয়িং শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকায় আর্ট ইনস্টিটিউটে (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) যোগ দেন। ১৯৫৯ সালে তিনি জাপানে পেইন্টিং এবং ছাপচিত্রে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করেন। চারুকলা ইনস্টিটিউটে ১৯৫৪ সাল থেকে একটানা শিক্ষকতা করে যান এবং এই ইনস্টিটিউট ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত হলে ছাপচিত্র বিভাগে অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৯৭ সালে কিবরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘প্রফেসর ইমেরিটাস’ পদে নিযুক্ত করে এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে আসীন ছিলেন।

মোহাম্মদ কিবরিয়ার শিল্পি জীবনে বিভিন্ন সময়ে তাঁর চিত্রে দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা। যেমন, ৭০-এর দশকের ‘ছাই’ শিরোনামের চিত্রগুলোতে ক্রুশের মতো কম্পোজিশন, বর্গাকার ক্ষেত্রের মধ্যে পাথুরে বুনট এবং তাদের শরীরে ছড়ানো ছেড়া-কাঁটার মতো টেক্সচার এক দম বন্ধ করা অনুভূতির জন্ম দেয়। ৮০-এর দশকের চিত্রে বর্গক্ষেত্রগুলি মিলিয়ে গিয়ে অসমান, অনির্ধারিত জমিনের রূপ নিতে থাকে। লাল, নীল, কালো, ধুসর, শ্যাওলা সবুজ, বাদামি রঙেরা ক্যানভাসে জড়ো হয়ে ভাঙ্গন-জর্জর দেয়ালের মতো করে তোলে ছবির নানান তল। ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে সাদা রঙ স্পেসে বড় ভূমিকা নেয়। ২০০০ সালে অাঁকা ‘শিরোনামহীন’ শিরোনামের দুটি প্রায়-সাদা ছবি কেবল টেক্সচারের হাত ধরে এক মার্গীয় মহিমা অর্জন করে। আবার ২০০২ সালের চিত্রে ক্যানভাসে জুড়ে দেয়া ছেঁড়া কাগজ, পোড়ানো কাপড় কিংবা মরচে ধরা টিন তাদের ভৌত বৈশিষ্ট্য হারিয়ে চিত্রে আনে ভিন্ন ডাইমেনশন।

এসময়ে শিল্পি মিনিমাইজেশনের প্রতি অনেকটা ঝুকে পড়েন। ফর্মের ব্যাপ্তি কমিয়ে, স্পেসের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে টেক্সচারের ক্ষেত্রটি আরো বেশি ক্রিয়াশীল করে তিনি তাঁর ভাবনাকে প্রকাশ করেছেন মাটির রঙগুলোকে ব্যবহার করে।

এভাবেই শিল্পি মোহাম্মদ কিবরিয়া নিরন্তর প্রকৃতির ভেতরের সুর, স্পন্দন আর মানুষের বোধ-অনুভূতিকে সম্পূর্ণ এক বিমূর্ত শিল্পভাষায় অন্বেষণ করতে করতে ৭ জুন ২০১১ সালে ৮২ বছর বয়সে মারা যান।  [ভদ্রেশু রীটা]