কালীগঞ্জ উপজেলা (সাতক্ষীরা)

কালীগঞ্জ উপজেলা (সাতক্ষীরা জেলা)  আয়তন: ৩৩৩.৭৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°১৯´ থেকে ২২°৩৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫৮´ থেকে ৮৯°১০´পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে দেবহাটাআশাশুনি উপজেলা, দক্ষিণে শ্যামনগর উপজেলা, পূর্বে আশাশুনি উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য

জনসংখ্যা ২৫৬৩৮৪; পুরুষ ১৩০৯২৯, মহিলা ১২৫৪৫৫। মুসলিম ২১১৪৭০, হিন্দু ৪৪৭৫৫, বৌদ্ধ ১৪৪ এবং      অন্যান্য ১৫।

জলাশয় প্রধান নদী:যমুনা, কাকশিয়ালী, কালিন্দী এবং বিলগালি খাল, বাঁশতলা খাল ও বাগারখালি খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন কালীগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯৪২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১২ ২৪৩ ২৫৩ ১৬০৬৭ ২৪০৩১৭ ৭৬৮ ৪৬.৩৫ ৫৩.৮৯
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৭.৯৬ ১৬০৬৭ ২০১৮ ৫৩.৮৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কুশলিয়া ৫৫ ৫৫৫২ ১০৯২৩ ৯৯২১ ৫০.৪১
কৃষ্ণনগর ৪৭ ৬৪০৫ ১১৯১২ ১২৬২১ ৪৩.৭৫
চম্পাফুল ২৩ ৭৪৭৫ ৭৮৫৩ ৭৩১৩ ৪৯.০৩
তাড়ালি ৯৪ ৯১৩৮ ১০৩৬৫ ৯৬০২ ৪৫.০১
দক্ষিণ শ্রীপুর ৩১ ৪৬০১ ৮৩২৩ ৮১১৫ ৪৬.২৫
ধলবাড়িয়া ৩৯ ৮৪৩২ ৯৭৯৮ ৯৩৩১ ৫০.৩০
নলতা ৭৯ ১১৪৩১ ১৬৭৫০ ১৫৬৭৬ ৪২.৪০
বিষ্ণুপুর ১৫ ৪৩৩৬ ১০০৬৭ ৯৬১৫ ৪৯.০০
মথুরেশপুর ৬৩ ৮৩০১ ১৩৬৪৮ ১৩৩৭৫ ৪৮.২০
মৌতলা ৭১ ৩১৬৪ ৮৭৬৭ ৮৭২১ ৫২.২০
রতনপুর ৮৭ ৬৮৮৫ ১০৬৯৯ ১০১১৩ ৪২.৭২
ভাড়া সিমলা ০৭ ২২৮৭৮ ১১৮২৪ ১১০৫২ ৪৬.৮০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ প্রভাজপুর জামে মসজিদ (ধলবাড়িয়া), মদিনা পীরের দরগা (কুশলিয়া), গাজন পীরের মাযার (রতনপুর), কাঙালী পীরের মাযার (ভাড়া সিমলা), পীর আহসানউল্লাহর মাযার (নলতা), রাধাগোবিন্দের জিউ মন্দির (রতনপুর), নবরত্ন মন্দির (ধলবাড়িয়া), কালী মন্দির, বিক্রমাদিত্যের দূর্গ (মথুরেশপুর), প্রতাপাদিত্যের গড় (মহৎপুর), দমদমা (অস্ত্র কারখানা)।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা ৯নং সেক্টরের অধীন ছিল। এ সময় এখানে বেশ কয়েকটি স্মরণীয়  লড়াই সংঘটিত হয়। তন্মধ্যে বসন্তপুর, খানজিয়া, পিরোজপুর, নাজিমগঞ্জ, দুদলি, উকশার যুদ্ধ অন্যতম। ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর কালীগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৪৭, মাযার ৫, মন্দির ১৯। ছোট মিয়ার মাজার, বুড়ো পীরের মাজার, তিন মন্দির, কালী মন্দির উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৬.৮৩%; পুরুষ ৫৩.০৩%, মহিলা ৪০.৪০%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কালীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৯), দক্ষিণ শ্রীপুর কুশলিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৬), দক্ষিণ শ্রীপুর কুশলিয়া হাই স্কুল (১৯২৬), বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ মেমোরিয়াল স্কুল (১৯৩০), ধুলিয়াপুর হাই স্কুল (১৯৩০), কালীগঞ্জ পাইলট হাই স্কুল (১৯৩৬), নলতা হাই স্কুল, চাম্পাফুল আঃ চঃ প্রঃ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৪), নেংগী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৯)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাময়িকী: গ্রাম বাংলা (১৯৮৭), কাকশিয়ালী (১৯৯২), সূর্যতরুণ, ফরিয়াদ, কালীগঞ্জ বার্তা, নদী (১৯৯৩), মুক্তিসূর্য (১৯৯৫), অর্জিত কণ্ঠ (১৯৯৮), মুক্ত আলাপ (২০০২), রক্তিম সূর্য (২০০৪), আল আহসান (২০০৫), স্মৃতি (২০০৫), ব্যাঘ্রতট (২০০৫)।

উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সরকারি পাবলিক লাইব্রেরি, আহসানিয়া পাবলিক লাইব্রেরি (১৯৮০), শহীদ স্মৃতি পাঠাগার (১৯৯৫), ব্রাক উত্তর কালীগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি (২০০১), ব্র্যাক কারবালা পাবলিক লাইব্রেরি (২০০৩), সুশীলন পাঠাগার (২০০২), সুমন সাহিত্য গোষ্ঠী (১৯৮০), কালীগঞ্জ সাহিত্য একাডেমী (১৯৯৩), কালীগঞ্জ নাট্য সংস্থা (১৯৯৫), বন্ধন কল্যাণ সমিতি (১৯৮৫), ফতেহপুর সাংস্কৃতিক সংঘ (১৯৮১) উল্লেখযোগ্য।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৬.৮১%, অকৃষি শ্রমিক ৬.০৫%, শিল্প ২.৭১%, ব্যবসা ১৯.৮৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৪০%, চাকরি ৪.৩৭%, নির্মাণ ০.৯৩%, ধর্মীয় সেবা ০.২০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩০% এবং অন্যান্য ৬.৩৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫২.৪৮%, ভূমিহীন ৪৭.৫২%। শহরে ৪৩.৪৫% এবং গ্রামে ৫৩.০৩% পরিবারের কৃষিভূমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, বেগুন, পটল, পিঁয়াজ, পান, মিষ্টি আলু।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, মুগ, খেসারি, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, বাঙ্গী, কলা, পেঁপে।

মৎস্য ও হাঁস-মুরগির খামার  এ উপজেলায় মৎস্য ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। এছাড়া এখানে শুকরও পালন করা হয়।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২১.৪৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬৯৮.৪০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ময়দা কল, বরফকল, মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, তেল কল, চাল কল, মুদ্রণ শিল্প।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, আটল শিল্প (নারকেলের শলা), বাঁশশিল্প, নকশি কাঁথা, পাটিশিল্প, পাটজাত দ্রব্য, কাঠের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার, মেলা   হাটবাজার ৫০, মেলা ২। উল্লেখযোগ্য হাটবাজার ও মেলা: নলতা, নাজিমগঞ্জ, কালীগঞ্জ ও বাঁশতলা হাট, বিষ্ণুপুর, রতনপুর, কৃষ্ণনগর বাজার এবং রথ যাত্রার মেলা (কুশলিয়া), নলতা শরীফের মেলা।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   পান ও চিংড়ি মাছ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮.৮২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৪.৪৯%, ট্যাপ ২.০০%, পুকুর ৮.৮০% এবং অন্যান্য ৪.৭১%। এ উপজেলা অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা প্রকট। তাই পানযোগ্য পানির জন্য নির্ভর করতে হয় পিএসএফ যুক্ত পুকুরের পানি এবং বৃষ্টির পানির উপর।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪২.৯১% (শহরে ৬৬.৬৬% এবং গ্রামে ৪১.৪৭%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৮.৩৬% (শহরে ২৯.৯৪% এবং গ্রামে ৪৯.৪৮%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৮.৭৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, ক্লিনিক ৫, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭০ ও ১৯৮৮ সালের ঘুর্ণিঝড়ে এ উপজেলার বহুসংখ্যক লোক প্রাণ হারায়, ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

উল্লেখযোগ্য এনজিও ব্র্যাক, আশা, সুশীলন।  [সচ্চিদা নন্দ দে]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কালীগঞ্জ উপজেলা মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০০৭।