কালিকলম

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৩৬, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

কালিকলম  সচিত্র মাসিক সাহিত্য পত্রিকা। প্রথম প্রকাশ বৈশাখ ১৩৩৩ (১৯২৬)। মুরলীধর বসু, শৈলেজানন্দ মুখোপাধ্যায় ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের সম্পাদনায় কলকাতা, কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের বরদা এজেন্সি থেকে প্রকাশিত। টেকসই অ্যান্টিক কাগজে ছাপা কালিকলম-এর সাইজ ডাবল ক্রাউন। দাম প্রতি সংখ্যা চার আনা। বার্ষিক ডাকমাশুলসহ সাড়ে তিন টাকা। প্রত্যেক মাসের ৩০ তারিখে এটি প্রকাশিত হতো। পত্রিকাটির মেয়াদকাল ছিল মাত্র চার বছর। এ সময় দু’ একটি সংখ্যা বাদে ১৩৩৬ সালের মাঘ মাসে বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে । কালিকলম-এর ২য় বর্ষে এসে প্রেমেন্দ্র মিত্র পত্রিকা ছেড়ে যান। এরপর শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় ও মুরলীধর বসুর যৌথ সম্পাদনায় পত্রিকাটি আরও এক বছর চলে। তৃতীয় বর্ষে শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ও পত্রিকা ছেড়ে চলে যান। এরপর বন্ধ হওয়া অবধি মুরলীধর বসু উক্ত পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন।

পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যার প্রথম রচনা ছিল শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের ধারাবাহিক বড় গল্প ‘মহাযুদ্ধের ইতিহাস’। এ ছাড়া তিনি ‘দিদিমণি’ নামে আরেকটি গল্প লিখেছিলেন ছদ্মনামে। প্রেমেন্দ মিত্রের উপন্যাস ‘পাঁক’-এর দ্বিতীয় পর্ব ধারাবাহিকভাবে শুরু হয়েছিল কালিকলম-এর প্রথম সংখ্যা থেকে। এ ছাড়া তাঁর ‘মগেরমুল্লুক’ ও ‘মানুষের মানে চাই’ নামে কবিতা প্রকাশিত হয়। পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যায় (জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা) প্রকাশিত নজরুল ইসলামের ‘মাধবী প্রলাপ’ কবিতা নিয়ে রক্ষণশীল পাঠক সমাজে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এ কবিতায় দেহজ আবেদন ও অশ্লীল শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। শনিবারের চিঠির সজনীকান্ত দাস কালিকলম ও কল্লোল-এর অশ্লীতার বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

সে-সময়ের বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিকগণ কালিকলম কাগজে লিখেছিলেন। পত্রিকাটিতে ছাপা হতো গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ ও অনুবাদ। পত্রিকাটি পাঠকদের কাছে যাতে আকর্ষণীয় হয়, তার জন্য ‘সংগ্রহ’, ‘চয়নিকা’, ‘বিচিত্রা’, ‘অসংলগ্ন’, ‘চিত্র’ ও ‘সাহিত্যপ্রসঙ্গ’ নামে ফিচার বিভাগ ছিল। ‘সংগ্রহ’-এ বিভিন্ন বিদেশি লেখার অংশবিশেষ অনুবাদ করা হতো। ‘চয়নিকা’ ছিল সমসাময়িক অন্যান্য পত্রপত্রিকার মূল্যবান রচনার পুনর্মুদ্রণ বিভাগ। ‘চিত্র’ বিভাগে ছিল বিভিন্ন বিষয়ের উপর রম্য রচনা। ‘সাহিত্যপ্রসঙ্গ’ বিভাগটি সমসাময়িক সাহিত্য বিষয় নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা করা হতো। মাসিক সাহিত্য নামের আরেকটি নিয়মিত বিভাগে সমসাময়িক পত্রপত্রিকা নিয়ে সমালোচনা থাকত।

সচিত্র মাসিক পত্রিকা হিসেবে কালিকলম চিত্র মুদ্রণেও বৈশিষ্ট্য রেখে গেছে। ব্যক্তিত্বদের আলোকচিত্র ছাড়াও তৎকালীন তরুণ শিল্পীদের অাঁকা ছবি ছাপানো হতো। বিশেষ করে পত্রিকার বিভিন্ন রচনার জন্য অাঁকা ছবিগুলি ছিল আকর্ষণীয়।

কল্লোল পত্রিকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে কালিকলম। যদিও দুটি পত্রিকার ভাবাদর্শ ছিল এক, লেখকবৃন্দও প্রায় এক। অচিন্ত্যকুমার বলেছিলেন, কল্লোল আর কালিকলম ‘একই মুক্ত বিহঙ্গের দুই দীপ্ত পাখা’। সাহিত্যের আধুনিকতার ইতিহাসে একটি অধ্যায় রচনা করেছে কালিকলম। এর চার বছরের মধ্যে রচিত যতীন্দ্রনাথের ‘দুঃখবাদ’, মোহিতলালের ‘ভোগবাদ’, নজরুলের ‘সাম্যবাদ’ প্রভৃতি কবিতা উজ্জ্বল হয়ে আছে। এ পত্রিকার পাতায় পাতায় নিম্নবিত্ত শ্রেণি জীবন্ত হয়ে উঠেছিল কয়লাকুঠির দেশ বা পোনাঘাট গল্পে। [মামুনূর রশীদ]