কালকিনি উপজেলা

কালকিনি উপজেলা (মাদারীপুর জেলা)  আয়তন: ২৭৯.৯৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০০´ থেকে ২৩°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৬´ থেকে ৯০°২১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মাদারীপুর সদরশরিয়তপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে গৌরনদী এবং আগৈলঝারা উপজেলা, পূর্বে গোঁসাইরহাট, মুলাদী ও ডামুড্যা উপজেলা, পশ্চিমে কোটালিপাড়া ও গৌরনদী উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৭১৭৯৬; পুরুষ ১৩৭৫৫৮, মহিলা ১৩৪২৩৮। মুসলিম ২৩৬৬২৫, হিন্দু ৩৪৪৪৩, বৌদ্ধ ৬৮৩ এবং অন্যান্য ৪৫।

জলাশয় আড়িয়াল খাঁ ও ঘাঘর প্রধান নদী।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯০৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪ ১৬০ ১৬৩ ৩৮৪৯৪ ২৩৩২৯৮ ৯৭১ ৪৮.৬ ৪৪.৬
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৭.৭৯ ৩৮ ৩৮৪৯৮ ১৩৮৫ ৪৮.৫৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আলীনগর ১১ ৫৫২০ ৭৫৯৮ ৭৫৩৫ ৩৮.২২
এনায়েতনগর ৩৭ ৬১৬৩ ১২৮২৪ ১২৬৫৪ ৪১.৯৫
কয়ারিয়া ৫৬ ৫১৮৩ ৮৩০৬ ৮৩৬৩ ৪৯.৬২
কাজীবাকাই ৬৩ ২৫৮১ ৫৭৭৪ ৫৫২৩ ৪৪.১৭
গোপালপুর ৪৪ ২২০০ ৪২০৫ ৩৮৮৫ ৪৬.৩২
চর দৌলতখান ২৫ ২৯২৪ ৬৫৩১ ৬৩৪৮ ৪৫.৯৩
ডাসার ৩১ ৩৯৬৮ ৭৩৫১ ৭৩৮৭ ৫০.২১
নবগ্রাম ৭৫ ৪৮০১ ৭৩৫৯ ৬৪৫৬ ৬২.৯৫
বাঁশগাড়ি ১৮ ৬৪৩৪ ১০৬৩৭ ১০২৭০ ৪১.৬৮
বালিগ্রাম ১২ ৫৭৫৪ ১২১৫৪ ১১৩৭০ ৩৭.৬৪
রমজানপুর ৮২ ৪৮১৮ ৯৭০২ ৯৫৪০ ৫৩.৩৪
লক্ষ্মীপুর ৬৯ ৪৯২৬ ১০০৭০ ৯৭৭৩ ৩২.১০
শিকারমঙ্গল ৯৪ ৩৭৫৭ ৫৫৭২ ৫৭৩৬ ৩৯.৭৯
সাহেবরামপুর ৮৮ ৫৬৬৮ ৯৯৮৫ ১০৩৯০ ৪৭.৭৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মিয়াবাড়ির তিন গম্বুজ মসজিদ (গোপালপুর, ১৮৬৯); গোদাধরদি শিবমন্দির (আলীনগর), দুর্গামন্দির, পঞ্চরত্নমন্দির (১৯২৪, চরফতেহপুর), সেনাপতির দিঘি (মোগল আমল)।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলার দোনারকান্দি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অনিলচন্দ্র মল্লিক শহীদ হন। এছাড়াও পাকবাহিনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও হত্যা চালায়।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৮৩১, মন্দির ৭।

শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৪৫.২৪%; পুরুষ ৪৯.৫৮%, মহিলা ৪০.৮৮%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সাহেব রামপুর কবি নজরুল ইসলাম কলেজ (১৯৭২), কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ (১৯৭২), শশিকর শহীদ স্মৃতি কলেজ (১৯৭৩), শেখ হাসিনা একাডেমী এন্ড কলেজ (১৯৯৫), কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৪), মহিষমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), বীরমোহন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৩), শশিকর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৩), কালকিনি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), সাহেব রামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), খাসের হাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬০), সমিতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), গোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), স্নানঘাটা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), দর্শনা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৩), শশিকর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৮২)।

পত্র-পত্রিকা   অবলুপ্ত বালারঞ্জিকা (১৮৬৩)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৬০,  লাইব্রেরি ৬, ক্রীড়া ক্লাব ৪, মহিলা সংগঠন ৩, সিনেমা হল ৩।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.২৩%, অকৃষি শ্রমিক ২.৭৮%, শিল্প ০.৪৮%, ব্যবসা ৯.৮০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৪৯%, চাকরি ৭.১২%, নির্মাণ ১.৫০%, ধর্মীয় সেবা ০.২৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.০০% এবং অন্যান্য ৫.৩৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৭৫.১১%, ভূমিহীন ২৪.৮৯%। শহরে ৬৩.৩২% এবং  গ্রামে ৭৭.১০% পরিবারের কৃষিভূমি আছে।

প্রধান কৃষিফসল ধান, পাট, সরিষা, ডাল, গম, মিষ্টি আলু।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পান, তরমুজ, বাংগি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেঁপে, নারিকেল, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার  এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৪২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, মাদুর শিল্প, দারুশিল্প, সূঁচিশিল্প, বেতশিল্প, খেজুরের গুড়ের কারখানা।

হাটবাজার ও মেলা কালকিনি হাট, ময়দানের হাট, সাহেবরামপুর হাট, খাসের হাট, ফাইসাতলা হাট, লক্ষ্মীপুর হাট, জুরগার হাট, মিয়ার হাট, শশিকরের হাট ও ডাসার বাজার এবং শশিকর মেলা (ছিয়াভাঙ্গার দশোহরা মেলা) ও বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   পাট, পাটজাত দ্রব্য, খেজুর ও আখের গুড়।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৩.৯৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৯.৯৫%, ট্যাপ ০.২০%, পুকুর ৪.০৭% এবং অন্যান্য ৫.৭৮%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ২০.৭৩% (শহরে ১৬.১৫% এবং গ্রামে ২১.৫০%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬৭.৬৫% (শহরে ৭৭.৪৪% এবং গ্রামে ৬৬.০০%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১১.৬২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র সরকারি হাসপাতাল ১, ইউনিয়ন পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, ক্লিনিক ২।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ।  [রাশিমুল হক]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কালকিনি উপজেলা মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০০৭।