কাদির, আবদুল

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:৩৫, ৭ আগস্ট ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
আবদুল কাদির

কাদির, আবদুল (১৯০৬-১৯৮৪)  কবি, প্রাবন্ধিক, ছন্দোবিশারদ, সম্পাদক। ১৯০৬ সালের ১ জুন  কুমিল্লা জেলার আড়াইসিধা গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা হাজী আফসারউদ্দীন ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। শৈশবে মাতৃহারা হওয়ার কারণে পিতার তত্ত্বাবধানেই তিনি বড় হন।

তিনি ১৯২৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া অন্নদা মডেল হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯২৫ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিএ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন। ১৯২৯ সালে তিনি কলকাতার মাসিক  সওগাত  পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে যোগদান করেন। মুসলিম সাহিত্য সমাজের (১৯২৬) মাধ্যমে ঢাকায় যে  বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন সংঘটিত হয়, আবদুল কাদির ছিলেন তার অন্যতম উদ্যোক্তা। সংগঠনের মুখপত্র বার্ষিক শিখা (১৯২৭) পত্রিকার তিনি প্রকাশক ও লেখক ছিলেন।

আবদুল কাদির কিছুকাল (১৯৩০-১৯৪৬) কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তার পাশাপাশি তিনি মাসিক জয়তী পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ (১৯৩০-১৯৩৩) করেন। এ ছাড়া সাপ্তাহিক নবশক্তি (১৯৩৪),  যুগান্তর (১৯৩৮), দৈনিক নবযুগ (১৯৪১), ভারত সরকারের প্রচার বিভাগের সাপ্তাহিক মুখপত্র বাংলার কথা, সাপ্তাহিক মোহাম্মদী (১৯৪৬) এবং সাপ্তাহিক পয়গম (১৯৪৭-১৯৫২) পত্রিকায়ও তিনি বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫২ সালে ঢাকায় এসে তিনি মাসিক  মাহে নও  পত্রিকা সম্পাদনা করেন (১৯৫২-১৯৬৪)। পরবর্তীকালে তিনি কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রকাশনা কর্মকর্তা (১৯৬৪-১৯৭০) পদে দায়িত্ব পালন করেন।

আবদুল কাদির অনেক কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতা ও প্রবন্ধগ্রন্থ: দিলরুবা (১৯৩৩), উত্তর বসন্ত (১৯৬৭), কবি নজরুল (১৯৭০), ছন্দসমীক্ষণ (১৯৭৯), কাজী আবদুল ওদুদ (১৯৭৬), বাংলা ছন্দের ইতিবৃত্ত (১৯৮৫), যুগকবি নজরুল (১৯৮৬) ইত্যাদি। এগুলির মধ্যে সাহিত্য সমালোচনা ও ছন্দবিষয়ক গ্রন্থও রয়েছে। তিনি বাংলা ছন্দ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ও সামগ্রিক বিশ্লেষণ করেছেন, যা তাঁর ছন্দসমীক্ষণ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।

আবদুল কাদির বেশসংখ্যক রচনাবলি সম্পাদনার কৃতিত্ব অর্জন করেন, যেমন: কাব্যমালঞ্চ (যুগ্মভাবে, ১৯৪৫), এয়াকুব আলী চৌধুরী রচনাবলী (১৯৬৩), নজরুল রচনাবলী (৫ খন্ড, ১৯৬৬-১৯৮৪), শিরাজী রচনাবলী (১৯৬৭), কাজী ইমদাদুল হক রচনাবলী (১৯৬৮), আবুল হুসেন রচনাবলী (১৯৬৮), লুৎফর রহমান রচনাবলী (১ম খন্ড, ১৯৭২), রোকেয়া রচনাবলী (১৯৭৩), বাংলা সনেট (১৯৭৪) ইত্যাদি।

সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ আবদুল কাদির বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৩), আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৭), একুশে পদক (১৯৭৬), নজরুল একাডেমী স্বর্ণপদক (১৯৭৭), কুমিল্লা ফাউন্ডেশন পদক (১৯৭৭), মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৭৭) ও মুক্তধারা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [মাহবুবুল হক]