এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:১২, ৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা  ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা শ্রী গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী। তিনি ১৮৯৮ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত পাবনা ইনস্টিটিউশন স্কুলে এফ. এ মানের কলেজ চালু করেন এবং একই বছর ডিসেম্বরে তা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি লাভ করে। প্রতিষ্ঠাকালীন ছাত্রসংখ্যা ছিল মাত্র ২৯ জন। ১৯০৬ সালে কলেজটির নামকরণ করা হয় পাবনা কলেজ এবং তা বোর্ড অব ডিরেক্টরস দ্বারা পরিচালিত হতে থাকে। ১৯১১ সালে সম্রাট সপ্তম এডওয়ার্ড-এর স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নামকরণ হয় এডওয়ার্ড কলেজ। অধ্যক্ষ শ্রী গোপাল চন্দ্র লাহিড়ীর পর ১৯১৪ সালে উক্ত পদে যোগদান করেন রায় রাধিকা নাথ বোস (আর বোস) এবং তিনি দীর্ঘ ৩৪ বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় কলেজের পাঠদানের বিষয়সমূহ ছিল ইংরেজি, ইতিহাস, যুক্তিবিদ্যা, গণিত, বিজ্ঞান, সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি।

১৯১২ সালের আগস্টে তাড়াশের জমিদার রায় বাহাদুর বনমালী রায় কলেজের উন্নয়নের জন্য ৫০ হাজার টাকা দানের প্রতিশ্রুতি দেন। তখন বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল কলেজকে ৫০ হাজার টাকা অনুদানের ঘোষণা দেন। এর পর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হেমচন্দ্র রায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাশিম বাজারের মহারাজা স্যার মনীন্দ্র চন্দ্র নন্দী, পোরজনার জমিদার যোগেশ চন্দ্র ভাদুড়ী, দুলাই জমিদারের পুত্রবধু শরীফুন্নেছা চৌধুরানী, তাতিবন্দের জমিদার ক্ষিরোদ গোবিন্দ চৌধুরী ও প্রমদা গোবিন্দ চৌধুরী, হরিপুরের বার অ্যাট ল কে. এন চৌধুরী প্রমুখ কলেজটিকে অর্থ সাহায্য করেন। ইতোমধ্যে কুষ্টিয়ার আমলা সদরপুরের জমিদার প্যারী সুন্দরী দাস্যার উত্তরাধিকারী গোপী সুন্দরী দাস্যা ও দেবেন্দ্র নারায়ণ সিংহ পাবনা শহরের রাধানগর মৌজার সাড়ে ছেচল্লিশ (প্রায় ১৬ একর) বিঘা জমি দান করেন।

১৯১৫-১৬ সালে কলেজটিতে ইন্টারমিডিয়েট-এ বিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয় এবং ১৯২৪ সালে নির্মাণ করা হয় বিজ্ঞান ভবন। ১৯২৫ সালে চালু করা হয় বি.এস.সি কোর্স। ১৯৩৯ সালে অধ্যাপক হেমচন্দ্র রায়ের স্ত্রী স্নেহলতা রায়ের দানে নির্মিত হয় কলাভবন। এরপর ১৯৪০ সালে বি. এ ক্লাস খোলা হলে কলেজটি প্রথম শ্রেণির কলেজের মর্যাদা লাভ করে। কলেজটিতে ১৯৫৪ সালে বাংলা, ১৯৫৫ সালে অর্থনীতি এবং ১৯৭২ সালে পদার্থবিদ্যা, গণিত ও ব্যবস্থাপনায় অনার্স কোর্স চালু হয়। বাংলা ও অর্থনীতিতে এম. এ. কোর্স চালু হয় ১৯৭৩ সালে। ১৯৬১ সালে কলেজ সংলগ্ন বিশাল আঙ্গিনা সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণের ফলে কলেজের মোট জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৯ একর। ১৯৬৮ সালের ১ মার্চ থেকে কলেজটি প্রাদেশিকীকরণের ফলে সরকারি হয়ে যায়। জাতীয়করণের সময় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২৬১৩ জন। ১৯৭৮ সালে সরকারি কলেজ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কলেজের ভৌত অবকাঠামো আরও উন্নত করা হয়। অতঃপর ১৯৮৭ সালে কলেজটি ‘৮টি বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক প্রকল্প-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। এ প্রকল্পের ২৯৮.৮৪ লক্ষ টাকায় ১৯৮৭-১৯৯০ সালের মধ্যে কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়।

এডওয়ার্ড কলেজে ১৯৮৭ সালে ইংরেজি, রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা, হিসাববিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান দর্শন, ইতিহাস বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করা হলে অনার্স কোর্সের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২টি এবং ১৯৯৫ সালে এ ১২টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়। ১৯৯৭-১৯৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সে পাঠদান শুরু হয়। এর পরের বছর ২০০০ সালে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমান শিক্ষাবর্ষে ১৫টি বিষয়ে সম্মানসহ মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। বর্তমানে এ কলেজে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সারাদেশের সরকারি কলেজগুলিকে ৬টি ক্যাটিগরিতে ভাগ করা হলে এডওয়ার্ড কলেজ সর্বোচ্চ AA ক্যাটিগরি ভুক্ত হয়। কলেজে বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ে ১১ জন অধ্যাপক, ৩৬ জন সহযোগী অধ্যাপক, ৪৬ জন সহকারী অধ্যাপক, ৫৩ জন প্রভাষক রয়েছেন। এ ছাড়া কলেজে কর্মরত বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারীগণের মধ্যে রয়েছেন ১১ জন ৩য় শ্রেণির কর্মচারী, ২৫ জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী, ৭ জন সি.সি.এম.এল. এস.এস এবং  ৩৬ জন মাস্টার রোল কর্মচারী।

কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের মধ্যে রয়েছে পুরানো বিজ্ঞান ভবন, প্রশাসনিক ভবন, নতুন বিজ্ঞান ভবন (দ্বিতল), উদ্ভিদ বিজ্ঞান ভবন (ত্রিতল), লাইব্রেরি ভবন (বই সংখ্যা প্রায় ৩০,০০০), বাংলা ভবন (দ্বিতল), দর্শন ভবন (দ্বিতল), পুরানো কলা ভবন (ত্রিতল), নতুন ত্রিতল কলা ভবন (অর্থনীতি, ইংরেজি ও ইতিহাস বিভাগ), ব্যবস্থাপনা ভবন (ত্রিতল), হিসাব বিজ্ঞান ভবন (ত্রিতল)। ছাত্রাবাসের মধ্যে রয়েছে শহীদ সামসুজ্জোহা মুসলিম ছাত্রাবাস (দ্বিতল), কামাল উদ্দিন ছাত্রাবাস (দ্বিতল), ছাত্রী নিবাস (ত্রিতল), নতুন ছাত্রী নিবাস (ত্রিতল), হিন্দু ছাত্রাবাস (ত্রিতল)। ভৌত অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় মসজিদ (দ্বিতল), অডিটরিয়াম, অধ্যক্ষের বাসভবন, ছাত্র সংসদ ভবন, হোস্টেল সুপারের বাসভবন ২টি, জিমনেসিয়াম, শিক্ষক ডরমেটরি (চারতলা), কেন্দ্রীয় ক্যাফেটিরিয়া/ছাত্র কমনরুম, শহীদ মিনার, ডাকঘর ও কর্মচারী মিলনায়তন। এছাড়া রয়েছে প্রতিটি বিভাগে সেমিনার কক্ষ ও গ্রন্থাগার, খেলার মাঠ ২টি, ছাত্রছাত্রীদের পরিবহন বাস (৪টি), অন্তঃকক্ষ ক্রীড়ার ব্যবস্থা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, মেধাবী গরিব ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা দান, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন, সেমিনার/বিতর্ক/আলোচনা/শিক্ষা সফরের আয়োজন, বার্ষিকী/পত্রিকা প্রকাশনা, বি.এন.সি.সি/রোভার সাকউট/গার্লস ইন রোভার-এর নিয়মিত কার্যক্রম, সাহিত্য ও সাংসৃকতিক প্রতিযোগিতা এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য ২টি টিএন্ডটি  ও ২২টি ইন্টারকম টেলিফোন।

ব্রিটিশ ভারতে বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল এডওয়ার্ড কলেজ। শিক্ষার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য এডওয়ার্ড কলেজকে দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠে পরিণত করেছে। উচ্চশিক্ষা বিস্তার ও জ্ঞানানুশীলনে শতবর্ষের প্রাচীন এ কলেজটি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে চলেছে। [মো আব্দুল মোত্তালিব]