উৎসবস্ত্ত, মৃত্তিকা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:০৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

উৎসবস্ত্ত, মৃত্তিকা (Parent Material, Soil)  অসংহত ও রাসায়নিকভাবে মোটামুটি অবক্ষয়িত অজৈব ও জৈব পদার্থ যা থেকে মৃৎজনিক (pedogenic) প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকার সোলাম (ক ও খ ক্ষিতিজ) উৎপন্ন হয়। মাটিতে দু ধরনের অজৈব উৎসবস্ত্তকে শনাক্ত করা যায়: ক) স্থবির (উৎস এলাকায় বিদ্যমান), যাকে অবশেষ বা অনুস্থিতও বলা হয় এবং যা অধঃস্থ  শিলা থেকে স্বস্থানে উৎপন্ন হয়; এবং খ) পরিবাহিত  অভিকর্ষ, পানি, বরফ বা বাতাস এসব বস্ত্তকে পরিবহণ করতে পারে। অভিকর্ষ পরিবাহিত উৎসবস্ত্তকে মিশ্র পলল (colluvium) বলা হয়। এগুলি উঁচুস্থানে অবস্থিত শিলার টুকরো দিয়ে গঠিত এবং ঢাল বরাবর নিচের দিকে বাহিত হয়। পানি-পরিবাহিত বস্ত্তকে অবক্ষেপণ পরিবেশের ওপর নির্ভর করে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়: হ্রদে অবক্ষেপিত পানি-পরিবাহিত বস্ত্তকে হ্রদজ অবক্ষেপ, নদীবাহিত অবক্ষেপকে  পলল (নদীজ অবক্ষেপ) এবং মহাসাগরে অবক্ষেপিত বস্ত্তকে সামুদ্রিক অবক্ষেপ বলা হয়। বরফ ও বায়ু দ্বারা পরিবাহিত বস্ত্তকে যথাক্রমে হিমবাহ ও বায়ব বলা হয়। জৈব মৃত্তিকা ব্যতীত মৃত্তিকার আদি অজৈব উৎসবস্ত্তসমূহ ভূত্বক থেকে আসে।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মৃত্তিকাই তুলনামূলকভাবে অপরিণত এবং এদের বৈশিষ্ট্য উৎসবস্ত্তর প্রকৃতি ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা দ্বারা অতিমাত্রায় প্রভাবিত হয়। অধিকাংশ উৎসবস্ত্তই পানিবাহিত। এসব বস্ত্ত বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত  নদী দ্বারা বাহিত হয়ে বিভিন্ন পরিবেশে অবক্ষেপিত হয়। বিশ প্রকারের বিভিন্ন উৎসবস্ত্ত দ্বারা  বাংলাদেশের মৃত্তিকা উৎপন্ন হয়েছে বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলি হলো: টারশিয়ারী শিলা,  মধুপুর কর্দম, মধুপুর এঁটেল পলল, হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় পুরাতন সমভূমির পলল, তিস্তা পলল, আত্রাই পলল, করতোয়া-বাঙ্গালী পলল, যমুনা পলল, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পলল, সুরমা-কুশিয়ারা পলল, মধ্য মেঘনা পলল, নিম্ন মেঘনা নদী পলল, পুরাতন মেঘনা মোহনাজ পলল, নতুন মেঘনা মোহনাজ পলল, পূর্বাঞ্চলীয় গৌণ নদীজ পলল, গাঙ্গেয় পলল, গঙ্গা কটাল (tidal) পলল, উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় পর্বত পাদদেশীয় সমভূমির পলল,  পিট এবং চট্টগ্রামের উপকূলীয় সমভূমির পলল।

সুস্পষ্টভাবেই তিনটি ভূতাত্ত্বিক সময়ের পলল বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এগুলি হলো টারশিয়ারী, প্লাইসটোসিন এবং হলোসিন। সিলেট ও চট্টগ্রাম এলাকার পাহাড়ে বিদ্যমান সংহত পললগুলি সর্বাপেক্ষা প্রাচীন শিলা। মধুপুর ও বরেন্দ্র অঞ্চলের মধুপুর এঁটেল প্লাইসটোসিন যুগের বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা জুড়ে বিদ্যমান অসংহত প্লাবনভূমিজ পললগুলি সাম্প্রতিক কালের (হলোসিন) পলল। বর্ষা মৌসুমে নদীগুলি সাধারণত কূল ছাপিয়ে প্রবাহিত হয় এবং আশপাশের এলাকাকে প্লাবিত করে এবং নদীপ্রবাহ দ্বারা বাহিত পললগুলি অবক্ষেপিত হয়। অবক্ষেপণের সময় স্থূলাকার বস্ত্তগুলি নদী তীরের কাছাকাছি এলাকায় জমা হয় এবং সূক্ষ্মতর বস্ত্তগুলি তীর থেকে দূরে স্থলভাগের অভ্যন্তরে বাহিত হয়। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে বেলেময় বস্ত্তগুলি কখনও কখনও বর্তমান নদীর পাড় থেকে বহুদূরে পাওয়া যায়। নদীর এ ধরনের গতিপথ পরিবর্তন অতীতে বাংলাদেশে অনেকবার ঘটেছে।

বিভিন্ন নদী ভিন্ন ভিন্ন ভূতাত্ত্বিক অঞ্চল থেকে পলল বহন করে নিয়ে আসে। সে কারণে বিভিন্ন নদীবাহিত পললে বিভিন্ন পরিমাণে  মণিক, যেমন মাইকা, ফেল্ডস্পার, হর্নব্লেন্ড ইত্যাদি থাকে।  তিস্তা ও  ব্রহ্মপুত্র বাহিত পলল অবক্ষেপে সহজে অবক্ষয়যোগ্য মণিক বায়োটাইট (কালো মাইকা) অধিক পরিমাণে থাকে, কিন্তু সেইসঙ্গে অল্প পরিমাণ চুন (CaCO3) থাকে বা কখনও কখনও আদৌ চুন থাকে না। অন্যদিকে,  গঙ্গা নদীর পললে তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণে বায়োটাইট থাকে, কিন্তু চুনের পরিমাণ বেশি থাকে।  সুরমাকর্ণফুলি ও পূর্বাঞ্চলীয়  পাহাড় থেকে উৎপন্ন অন্যান্য নদীর অবক্ষেপে সামান্য পরিমাণে বায়োটাইট থাকে, কিন্তু চুন থাকে না। সুতরাং বাংলাদেশে প্রাপ্ত উৎসবস্ত্ততে প্রচুর বৈচিত্র্য বিদ্যমান। উৎসবস্ত্তর এ ধরনের বৈচিত্র্যের কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মৃত্তিকা উৎপন্ন হয়েছে।  [সিরাজুল হক]