উজিরপুর উপজেলা

উজিরপুর উপজেলা (বরিশাল জেলা)  আয়তন: ২৪৮.৩৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৩´ থেকে ২২°৫৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০১´ থেকে ৯০°১৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে আগৈলঝারা ও গৌরনদী উপজেলা, দক্ষিণে বানারীপাড়া ও ঝালকাঠি সদর উপজেলা, পূর্বে বাবুগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে কোটালিপাড়া ও নাজিরপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৪১৩৭৪; পুরুষ ১২২৩৫৯, মহিলা ১১৯০১৫। মুসলিম ২৮৪০৪৩, হিন্দু ৮৩৭২, খ্রিস্টান ১০, বৌদ্ধ ৪৭৩ এবং অন্যান্য ৪০।

জলাশয় উজিরপুর, কালিজিরা, হুন্দা, স্বরূপকাঠি, শিকারপুর ও বিষারকান্দি নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন উজিরপুর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১১৮ ১২৩ ১০৪৮৩ ২৩০৮৯১ ৯৭২ ৭৭.২ ৬০.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৪৮ ১০৪৮৩ ১৬১৮ ৭৭.২৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ওটরা ৬৩ ৫৬২৬ ১৩০৭৯ ১৩০১৪ ৬২.১০
গুঠিয়া ৩১ ৭২৫৬ ১৩৮০৩ ১৩৩৪২ ৬৯.৫৮
জল্লা ৫২ ৬৭১৫ ১২৭৯১ ১২৬৬৩ ৫২.১৫
বামরাইল ১০ ৬১৯৩ ১৪৪৪১ ১৪৬৪২ ৬৬.৫১
বরাকোঠা ২১ ৫৫৫৩ ১৪২৫৮ ১৪৫৪৪ ৬৩.৬৪
শিকারপুর ৮৪ ৪৮৭৬ ১৩৭৭৫ ১৩১৫৮ ৬৯.১৯
শোলক ৯৪ ৬০০১ ১৪৬৩৭ ১৩৯৩০ ৬৭.৬৮
সাতলা ৭৩ ১২২৯৭ ১৩৯৮৫ ১২৮০১ ৪৮.৩৬
হারতা ৪২ ৬৮৫৬ ১১৫৯০ ১০৯২১ ৪৫.০২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধামুড়া গ্রামে পাকবাহিনী প্রায় তিনশত ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ফেলে এবং বহুলোককে হত্যা করে। একই সময় বাগড়ারপার গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর সঙ্গে সংঘটিত যুদ্ধে অনেক পাকসেনা নিহত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বরাকোঠা গ্রামের দরগাবাড়ি নামক স্থানে ৯ নং মুক্তিযুদ্ধ সেক্টরের প্রধান কার্যালয়ের স্মৃতিবিজড়িত দালানকোঠা।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান শিকারপুর জামে মসজিদ, ধামুড়া মিঞার মাযার, হারতা গোবিন্দ মন্দির, ধামসর গির্জা, তারাবাড়ির মন্দির উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়হার ৬১.০%; পুরুষ ৬৩.৭%, মহিলা ৫৮.৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হাবিবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৫৬), রেভ্রদ্রদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৭), শের-এ বাংলা কলেজ (১৯৭০), ধামুরা কলেজ (১৯৭০), উজিরপুর কলেজ (১৯৮৫), জেডএখান উচ্চ বিদ্যালয়, বাবরঘানা উচ্চ বিদ্যালয়, বাহেরঘাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আব্দুল মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গুঠিয়া মহেশচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রামের কাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গাজীরপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৪)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১৩, ক্লাব ১৫, সিনেমা হল ২, খেলার মাঠ ১০, নাট্যদল ৫।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৭.৫২%, অকৃষি শ্রমিক ২.০৫%, ব্যবসা ১৬%, চাকরি ১২.১৫%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.০৪%, নির্মাণ ২.২৫% এবং অন্যান্য ৭.৯৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৭৭.০১%, ভূমিহীন ২২.৯৯%। শহরে ৫৮.৯২% এবং গ্রামে ৭৭.৮৩% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, পান, আখ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, সরিষা, কলাই, মিষ্টি আলু, পাট।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, জাম, কাঁঠাল, পেঁপে, লিচু, পেয়ারা, কলা, নারিকেল, সুপারি।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার  মৎস্য ৭৩০, গবাদিপশু ৫৬, হাঁস-মুরগি ৮৭, হ্যাচারি ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৬০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪০০ কিমি; নৌপথ ২৮ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ারমিল ২০, রাইসমিল ৩৪, বরফকল ৪, করাতকল ১০, তেলকল ৩, বিড়িকারখানা ১, লেদমেশিন ৪, ওয়েল্ডিং কারখানা ৮।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প ৫, বাঁশের কাজ ১২৫, লৌহশিল্প ৮৫, মৃৎশিল্প ১১৭।

হাটবাজার, মেলা   হাটবাজার ২২, মেলা ৮; ধামুড়া, হারতা, শিকারপুর হাট এবং শিকারপুরের মেলা, করিমুদ্দির ও গলাইয়া ওয়াজিপুর ওটরা মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান, পান, নারিকেল, সুপারি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৮.৮৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৭.৬৮%, পুকুর ৮.৬৭%, ট্যাপ ০.৪৭% এবং অন্যান্য ৩.১৮%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলায়  ৬২.৯৩% (গ্রামে ৬১.৫৮% এবং শহরে ৯২.৭৯%) পরিবার স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে  এবং ২৮.৯৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৮.১২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৪।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৭৬২ সালের ঘুর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পে উজিরপুরের অনেক স্থলভাগ ডুবে গিয়ে বিলের সৃষ্টি হয়। ১৭৮৭ সালের প্লাবনে এ অঞ্চলের ব্যাপক ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া ১৭৭০, ১৮২২, ১৮২৫, ১৮৩২, ১৮৫৫, ১৯০৯ ও ১৯৬০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এখানকার বহুলোক মারা যায়।

এনজিও ব্র্যাক,  আশা, প্রশিকা, কারিতাস। [মোঃ মিজানুর রহমান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; উজিরপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।