ইসলাম, আমিনুল

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৮:৫৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
আমিনুল ইসলাম

ইসলাম, আমিনুল (১৯৩১-২০১১)  ৫০-এর দশকে বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পান্দোলনের অন্যতম প্রধান শিল্পি। জন্ম ১৯৩১ সালের ৭ নভেম্বর, মেঘনা নদীর পাড়ে টেটিয়া গ্রামে, মাতুলালয়ে। ঢাকার মাহুতটুলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়া শুরু করেন। কৈশরে দেখা গ্রামীণ সমাজের রূপকথা, নকশী পিঠা ও সূচীকর্ম জন্ম দেয় শিল্পি হওয়ার সুপ্ত বাসনা। সেই আকুলতা থেকেই পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ‘গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্ট’- এ ভর্তি হন এবং ১৯৫৩ সালে প্রথম বিভাগে স্নাতক পাশ করেন। তিনি ছিলেন এ বিদ্যায়তনের প্রথম ব্যাচের মেধাবী ছাত্র। ১৯৫৩ সালে তিনি ইতালি সরকারের বৃত্তি নিয়ে ফ্লোরেন্সের ‘আকাদেমি দেল বেল্লে আর্তে’ তে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং ১৯৫৬ সালে ইতালি থেকে ফিরে চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। ঢাকা আর্ট কলেজে তিনিই ছিলেন প্রথম সরকারী গেজেটে অন্তর্ভুক্ত লেকচারার। ১৯৭৮ সালে তিনি এই ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই তিনি চাকুরি থেকে স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণ করেন।

শিল্পি আমিনুল ইসলাম কোন বিশেষ রীতি অনুসরণ করে শিল্পচর্চা করেননি। তিনি জ্যামিতিক ফর্মকে তাঁর চিত্রে বেশি প্রাধান্য দিতেন। জ্যামিতিক ফর্ম তাঁর কাজে বিভিন্ন রূপে উপস্থাপিত হয়েছে। তাঁর প্রাথমিক পর্যায়ের কাজে জ্যামিতিক ফর্মের উপস্থিতি খুব সূক্ষভাবে থাকলেও ৫০-এর দশকের চিত্রগুলোতে এর উপস্থিতি টেক্সচারের সমন্বয়ে নতুন এক আঙ্গিকে ফুটে ওঠে। ফর্মগুলো একটির উপর অপরটি এমনভাবে বিন্যস্ত হয়েছে, যাতে প্রতিটি ফর্ম পরস্পরকে ছেদ করে। ফলে ছবিতে কিউবিক শিল্পরীতির জন্ম হয়। আবার ৬০-এর দশকে তাঁর চিত্রে ফর্মের চেয়ে বর্ণের প্রাধান্য বেশি দেখা যায়। চেনা ফর্মের জ্যামিতিকতার পরিবর্তে বিমূর্ত ধারার রূপই বেশি জোরালো হয়ে উঠেছে তাঁর এসময়ের কাজে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শিল্পি আমিনুলের চিত্রভাষা আবার পরিবর্তিত হয়। এ সময়ের চিত্রে তেলরং, ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো এবং হার্ডবোর্ডের সমন্বয়ে এক ধরনের কোলাজের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

শিল্পি আমিনুল ইসলাম ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মোট দশটি ম্যুরাল করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - ১৯৬৮ সালে নির্মিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরাতন ভবনের অভ্যন্তরের একটি দেয়াল, ১৯৮৪ সালে ওসমানী হলের সামনের দেয়ালে নির্মিত একটি মোজাইক ম্যুরাল, ১৯৮৬ সালে মতিঝিলে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রবেশমুখে ২০ x  ২০ ফুট আয়তনের একটি ম্যুরাল, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বত্রিশ তলা ভবনের ললাটে উৎকীর্ণ ৮৪ x ১৫.১ ফুট আয়তনের একটি ম্যুরাল। তিনি ১৯৮১ সালে ‘একুশে পদক’ এবং ১৯৮৮ সালে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন। ২০১১ সালের ৮ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।

[ভদ্রেশু রীটা]