ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কাল্টিভেশন অব সায়েন্স

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৪:১৪, ৯ জুলাই ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কাল্টিভেশন অব সায়েন্স ভারতের প্রথম জাতীয় বিজ্ঞান সমিতি। খ্যাতনামা বিজ্ঞানী প্রবাদপ্রতিম হোমিও চিকিৎসক ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার কর্তৃক এটি ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ১৮৬৭ সাল থেকে সমিতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। সরকার এ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেনি; এমনকি, জনগণের একটি সোচ্চার অংশ এর বিরোধিতা করেছিল। টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য তাদের দাবি মহেন্দ্রলালের বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। জাতীয় পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে মহেন্দ্রলাল একটি প্রশিক্ষিত বিজ্ঞানীগোষ্ঠী গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। ভারতের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ সমিতির তহবিলে মুক্ত হস্তে অর্থদান করেন এবং ১৮৭৬ সালে সিনেট হলে অনুষ্ঠিত এক ঐতিহাসিক সভায় ফাদার লাফন্ত, রাজেন্দ্রলাল মিত্রকেশবচন্দ্র সেন এর মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাদের বক্তব্যে সমিতির উদ্দেশ্যকে সমর্থন করেন। সমিতির বিরোধিতাকারী ইন্ডিয়ান লীগের নেতৃবৃন্দ শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যান এবং ছোটলাট টেম্পল বিজ্ঞান সমিতি গঠনে তাঁর সম্মতি প্রদান করেন। শুরু থেকেই সমিতিকে ভারতীয়দের অর্থায়নে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার ছিলেন সমিতির প্রথম পরিচালক এবং ১৯০৪ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এপদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।  কলকাতার ২১০ বউবাজার স্ট্রীটে সমিতির দপ্তর স্থাপন করা হয়।

মহেন্দ্রলালের স্বপ্ন ছিল সমিতিকে লন্ডনের রয়াল ইনস্টিটিউটের আদলে গড়ে তোলা যেখানে বিজ্ঞান বিষয়ক উচ্চতর গবেষণা পরিচালিত হবে। এ উদ্দেশ্যে অনুদান সংগ্রহ করে ভিজিয়ানাগ্রামের মহারাজা গবেষণাগার স্থাপন করেন। লক্ষ্য ছিল যে, এখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীরা হবে ভারতে প্রথম প্রজন্মের বিজ্ঞানী যাঁরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন তত্ত্বাবধান করবেন। এ কারণে এখানে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, শারীরবিদ্যা, ভূতত্ত্ব, উদ্ভিদবিদ্যার মতো মৌলিক অনুষদগুলি খোলা হয়। জে.সি. বোস, পি.এন. বোস, আস্টএতাষ মুখাজট্ট, গিরিন্দ্রশেখর বসু, তারাপ্রসন্ন রায়ের মতো বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা মহেন্দ্রলাল সরকারের জীবদ্দশায় এবং তাঁর পুত্র ও উত্তরাধিকারী ডা. অমৃতলাল সরকারের সময়ে এ বিভাগগুলির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ে বক্তৃতা প্রদানের জন্য অন্য একটি ধারা প্রবর্তনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যে সকল ছাত্র ও সাধারণ লোক মৌলিক বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী তাদের জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়। মহেন্দ্রলাল নিজে, ফাদার লাফন্ত এবং অনুষদের অন্যান্য সদস্য সারা বছর ধরে প্রদর্শনমূলক বক্তৃতা প্রদান করেন। এধরনের প্রায় একশটি বক্তৃতার আয়োজন করা হয় যেগুলিতে সাধারণ লোক ছাড়াও কলকাতার বিভিন্ন কলেজ থেকে ছাত্ররা এসে যোগ দেয়। এ সকল বক্তৃতায় গড়ে তিনশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকত। এ সমিতির সংক্ষিপ্ত নামকরণ হয় ‘প্রাইভেট কলেজ অব সায়েন্স’। কলকাতা ও সন্নিহিত এলাকায় বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে এ পাঠ্যসূচি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এ কর্মসূচির সফলতা সত্ত্বেও বিজ্ঞানে উচ্চতর অধ্যয়নের লক্ষ্যে কিছু পদ সৃষ্টির জন্য অর্থ সংগৃহীত না হওয়ায় মহেন্দ্রলাল দুঃখ প্রকাশ করেন। তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য পূর্ণ হলো না বলে তিনি মনে করতেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর এ সমিতি বিশ শতকের প্রথমার্ধে বিজ্ঞান গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এ শতকের বিশের দশক থেকে সি.ভি. রমণ, কে.এস. কৃষ্ণন ও  মেঘনাদ সাহা পর পর এখানে গবেষণাকার্য পরিচালনা করেন। এঁরা সকলেই পদার্থবিদ্যায় যুগান্তকারী অবদান রাখেন। স্যার সি.ভি. রমণ নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। বর্তমানে এ সমিতি ভারতের প্রধান জাতীয় বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হিসেবে সক্রিয় রয়েছে।  [চিত্তব্রত পালিত]