আলফাডাঙ্গা উপজেলা

আলফাডাঙ্গা উপজেলা (ফরিদপুর জেলা)  আয়তন: ১৩৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১৩´ থেকে ২৩°২১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৬´ থেকে ৮৯°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বোয়ালমারী উপজেলা, দক্ষিণে লোহাগড়া (নড়াইল) উপজেলা, পূর্বে কাশিয়ানী ও বোয়ালমারী উপজেলা, পশ্চিমে লোহাগড়া (নড়াইল) ও মোহাম্মদপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১০০৫৯৮: পুরুষ ৪৯৬৬৫, মহিলা ৫০৯৩৩। মুসলিম ৯২৮৬৩, হিন্দু ৭৭২৬ এবং অন্যান্য ৯।

জলাশয় প্রধান নদী:মধুমতি, বাবাশিয়া এবং নাইদায়ের চাঁদ বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন আলফাডাঙ্গা থানা গঠিত হয় ১৯৬০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৯২ ১২১ ৫৪২৯ ৯৫১৬৯ ৭৪০ ৫৫.৬ ৪২.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪.৩৯ ৫৪২৯ ১২৩৭ ৫৫.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আলফাডাঙ্গা ১০ ৪৩৪৯ ৬৮৬২ ৭০৩১ ৪৫.০৫
গোপালপুর ৪২ ৪৮৪১ ৭৫৮৭ ৮১৫০ ৫২.৯৫
টগরবান্দা ৮৪ ৭৭১৩ ৮৮২০ ৯২৩০ ৪৭.৬৮
পাঁচুরিয়া ৫২ ৫১৭৯ ৭৬০৪ ৭৪৫১ ৩৫.৭৬
বানা ২১ ৫৩৭৫ ৮০৪০ ৮২১৮ ৩৮.৫১
বুড়াইচ ৩১ ৬১৫১ ১০৭৫২ ১০৮৫৩ ৩৮.৭৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে রাজাকার ও পাকসেনারা আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নিপীড়ন চালায় এবং কয়েকজনকে হত্যা করে। ৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের দখলকৃত লাহুরিয়া নকশাল ঘাটি আক্রমণ করে নকশাল নেতা বাদশা জমাদারকে হত্যা করে। ৫ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর ভাটিয়াপাড়ার ওয়ারলেস ঘাটি আক্রমণ করে। এ সময় পাকস্তানি বিমান থেকে গুলিবর্ষণ করলে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ১০ জন আহত হন। ১১ নভেম্বর মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা ভাটিয়াপাড়া ঘাটি দখলের চেষ্টা চালায়। ১৮ ডিসেম্বর রাতে পাকবাহিনীর সাথে মিত্রবাহিনীর সম্মুখযুদ্ধে লে. কর্নেল কমল গুরুতর আহত হন।  ১৮ ডিসেম্বর আলফাডাঙ্গা শত্রুমুক্ত হয়।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩%; পুরুষ ৪৫.৪%, মহিলা ৪০.৮%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৫, মাদ্রাসা ১০।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী আলফাডাঙ্গা দর্পণ, কলকণ্ঠ।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৬০, মন্দির ২০। বেদন শাহ্ (রা:) এর মাযার শরীফ উল্লেখযোগ্য।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ক্লাব ৩০, সিনেমা হল ১, মহিলা সংগঠন ১৭, অফিসার্স ক্লাব ১, খেলার মাঠ ১৮।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৬.১৫%, অকৃষি শ্রমিক ২.১৭%, ব্যবসা ১১.০১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৮৫%, চাকরি ১৬.৩১%, শিল্প ০.৯২%, নির্মাণ ১.৮৭%, ধর্মীয় পেশা ০.৩১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৪১% এবং অন্যান্য ৫.৯৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক  ৬০.৯৫%, ভূমিহীন ৩৯.০৫%। শহরে ৩৯.১০% এবং গ্রামে ৬২.২৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, ডাল, বাদাম, গম, আলু, কলাই, পিঁয়াজ, রসুন।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি চিনা, কাউন, অড়হর, যব।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, জামরুল, কুলবরই।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৩০, গবাদিপশু ৪০, মুরগি ৮, অন্যান্য ২৫০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৭৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৮০ কিমি; নৌপথ ৮১ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

হাটবাজার  হাটবাজার ১৩। উল্লেখযোগ্য হাটবাজার: গোপালপুর, আলফাডাঙ্গা, শিবরাম।

উল্লেখযোগ্য কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, ওয়েল্ডিং কারখানা।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   পিঁয়াজ, রসুন, খেজুর ও তাল গুড়, আলু, ডাল, বাদাম, পাট।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৭.৭০% (শহরে ৬০.২৭% এবং গ্রামে ১৫.২০%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.১৭%, ট্যাপ ০.২৮%, পুকুর ০.৪৪% এবং অন্যান্য ৩.১০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪২.৭৪% (শহরে ৮১.৪৪% এবং গ্রামে ৪০.৩৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫০.৬৭% (শহরে ১৪.১৪% এবং গ্রামে ৫২.৮২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬.৫৯% (শহরে ৪.৪১% এবং গ্রামে ৬.৭২%) পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৩, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২, ব্র্যাক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ক্লিনিক ৩।

এনজিও ব্র্যাক।  [এ.ইউ হায়দার চৌধুরী]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; আলফাডাঙ্গা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।