আবাবিল

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:২৪, ১৬ জুন ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
পাতি আবাবিল

আবাবিল (Swallow)  ছোট, দলবদ্ধভাবে বসবাসকারী, পতঙ্গভুক   পাখি। এদের খাটো ও চওড়া ঠোঁট ছোট শক্ত লোমে (bristle) আবৃত। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র এরা আছে। মার্টিনসহ প্রায় ৯০ প্রজাতির আবাবিল Paridae ও Hirundinidae গোত্রভুক্ত। এদের ডানা লম্বা ও সরু, লেজ দ্বিধাবিভক্ত এবং পা দুর্বল। আবাবিলদের উড়ার ভঙ্গি খুবই আকর্ষণীয়, এরা নানাভাবে পাক খেতে খেতে চলে। উড়ন্ত পোকা ধরতে হাঁ-মুখ এ পাখিরা দ্রুত দিক বদলায়। পালক চকচকে নীল বা কালো, সাধারণত নিচের চেয়ে উপরের দিক গাঢ় রঙের। একসঙ্গে বাসা বাঁধে খামারের চালাঘরে, দালানের কার্নিশে, চিমনিতে, বা অন্য কোনো আলগা কাঠামোয়। বাসাগুলি বাটি আকৃতির, কাদার ডেলা ও খড়ে তৈরি। ডিম সর্বাধিক ৬, পুরোপুরি সাদা বা ফোঁটা ফোঁটা দাগসহ। বাংলাদেশে আছে ৪ প্রজাতির আবাবিল (৩টি পরিযায়ী) ও ১ প্রজাতির মার্টিন। প্রজাতিগুলি হচ্ছে: Paridae গোত্রের Hirundo smithii (Wire-tailed Swallow); Riparia paludicola (Plain Martin) [Plain Sand Martin]; এবং Hirundinidae গোত্রের Hirundo daurica (Red-rumped Swallow); Hirundo rustica (Barn Swallow) [Common Swallow]; Hirundo striolata (Striated Swallow) [Large Striated Swallow]।

আবাবিল পশ্চিমা বিশ্বের অন্যতম প্রিয় পাখি।  পেঁচা ও দাঁড়কাককে যেখানে মনে করা হয় অমঙ্গল ও আসন্ন সর্বনাশের সূচক, আবাবিল সেখানে সুসংবাদ, আরাম ও আনন্দের বার্তাবহ। ক্রুশবিদ্ধ যিশুকে একটি আবাবিল সান্ত্বনা দিতে চেয়েছিল, এমন ঘটনার উল্লেখ আছে খ্রিস্টান উপকথায়। এ পাখিরা ফসলের ক্ষতিকর  কীটপতঙ্গ ধ্বংস করে। দেহের তুলনায় ডানা লম্বা থাকায় ওরা দীর্ঘক্ষণ উড়তে পারে। ডানার আগার খাঁজের দরুন আবাবিল উড়ার সময় থামতে, গড়াতে, নামতে এবং সেতুর নিচে বা কোনো গর্তে বাসায় পৌঁছতে নিঁখুতভাবে দোল খেতে পারে। ডানার কাঠামোর সুবাদে এ পাখিরা দ্রুত অনেক উঁচুতে উঠতে পারে। এরা যে কোনো পতঙ্গের নাগাল ধরতে অসম্ভব দ্রুত পাক খায় কিংবা উপর থেকে নিচে ঝাপ দেয় এবং কোনো পুকুর বা নদীর পানি ছোঁয়ার আগেই খাড়া হয়ে অনুভূমিক উড়ালে ছুটে চলে। পা ছোট হওয়ায় তাতে দাঁড়ের মতো কিছুতে বসতে অসুবিধা হয়। এক্ষেত্রে টেলিফোনের তার খুবই সুবিধাজনক এবং যেজন্য সদ্য বাসা ছাড়া বাচ্চাদের প্রায়শ তারে বসে মায়ের মুখ থেকে খাবার খেতে দেখা যায়। অনেকে আবাবিলদের আবহজ্ঞাপক পাখি ভাবে, অর্থাৎ ধারণা করা হয় যে, এরা নিচে উড়লে ঠান্ডা বায়ু ও বৃষ্টি আসবে, উঁচুতে উড়লে রোদ ও উষ্ণ আবহাওয়া চলবে। এ ধারণা অনেক সময় সঠিক হয়। পতঙ্গরা আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে এবং যেখানে পতঙ্গ সেখানেই আবাবিল দেখা যায়।

ইসলাম ধর্মে পবিত্র কুরআনে আবাবিল পাখির উল্লেখ আছে। এক ঝাক আবাবিল পাখির মুখ থেকে ফেলা পাথরসমূহের আঘাতে পবিত্র কাবা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আসা ইয়েমেনের রাজা আব্রাহার অভিযান ব্যর্থ হয়।  [মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]

আরও দেখুন বাতাসি