আনোয়ারা উপজেলা

আনোয়ারা উপজেলা (চট্টগ্রাম জেলা)  আয়তন: ১৬৪.১৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°০৭´ থেকে ২২°১৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪৯´ থেকে ৯১°৫৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পটিয়া উপজেলা, দক্ষিণে বাঁশখালী উপজেলা, পূর্বে চন্দনাইশ উপজেলা, পশ্চিমে চট্টগ্রাম বন্দর থানা ও বঙ্গোপসাগর।

জনসংখ্যা ২২৮৫৩০; পুরুষ ১১৬৬৪২, মহিলা ১১১৮৮৮। মুসলিম ১৯২৫৬৪, হিন্দু ৩৩৮৬৭, বৌদ্ধ ৩৯, খ্রিস্টান ১৬৪৯ এবং অন্যান্য ৪১১।

জলাশয় প্রধান নদী: কর্ণফুলি ও সাঙ্গু নদী।

প্রশাসন আনোয়ারা থানা গঠিত হয় ১৮৭৬ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১০ ৮৫ ৭৫ ৪৬৭০ ২২৩৮৬০ ১৩৯২ ৬৫.৯ ৪৬.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩.৩৪ ৪৬৭০ ১৩৯৮ ৬৫.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আনোয়ারা ৯ ১৮৭১ ৪৮৮৬ ৪৬৮২ ৬২.১৮
চাতারী ৬৬ ৩২৬৫ ৯২৬৫ ৮৬৮০ ৫৩.৯৬
পারৈকোড়া ৮৫ ৩৯৩৫ ৯৬৪২ ৯১০৬ ৫৭.৪৯
বটতলী ৫৭ ২৯৩৫ ১০৯৩০ ১০১২৪ ৪৬.৯৩
বারখাইন ২৮ ৪৩৭৮ ১৩৯০০ ১৩৮১১ ৫০.০৯
বারাসাত ৩৮ ৩২০৮ ১৩৭০৭ ১২৯৪৭ ৫৩.৮৯
বরুমচড়া ৪৭ ৫৯২৭ ১৬৬৬৩৮ ১৬৫৯৯ ৩৫.৯৭
বৈরাগ ১৯ ৪০১৩ ৭৫১৪ ৬৯৬৪ ৪৩.৩৯
রায়পুর ৯৫ ৫৭২১ ১৬৯৮৩ ১৫৯৩৮ ৩২.৮১
হাইলধর ৭৬ ৩৮৮৫ ১৩১৭৭ ১৩০৪২ ৫১.৪৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মোহছেন আউলিয়ার দরগাহ্ ও পাথর, আকবরী মসজিদ, চুরুত বিবির মসজিদ, ধলা বিবির মসজিদ, মনু মিঞার দিঘি ও কামান (বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত)।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে আনোয়ারা ১ নং সেক্টরের অধীন ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর কাফকো, কালীগঞ্জ, পারৈকোড়া প্রভৃতি জায়গায় সংঘটিত বিভিন্ন লড়াইয়ে প্রায় ৫৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং অনেক পাকসেনা হতাহত হয়। পাকবাহিনী এ উপজেলার খিলপাড়া গ্রামের ৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এছাড়াও পাকবাহিনী এ উপজেলার অনেক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ৩; কাফকো (কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কোম্পানী), কালীগঞ্জ, পারৈকোড়া।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.২%; পুরুষ ৫২.৪%, মহিলা ৪১.৮%। কলেজ ৪, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শহীদ আনোয়ারা কলেজ, আনোয়ারা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), পারৈকোড়া নয়নতারা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), বটতলী শাহ মোহছেন আউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), আনোয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪১), গুজরা নিত্যানন্দ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৩), তৈলার দ্বীপ বারখাইন এয়ার আলী খান উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), মেরিন একাডেমি।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী পাক্ষিক: অবিচল।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১৫, নাট্যদল ২, যাত্রাপার্টি ১, খেলার মাঠ ১৫।

বিশেষ আকর্ষণ  পারকী সী বীচ।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪১.২৫%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৩৮%, ব্যবসা ১৫.৩৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.২৬%, চাকরি ১৬.৪৬%, শিল্প ০.৪৬%, নির্মাণ ১.৪২%, ধর্মীয় সেবা ০.৬০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.৬০% এবং অন্যান্য ১৪.১৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৮.৭৮%, ভূমিহীন ৫১.২২%। শহরে ৪৫.০৫% এবং গ্রামে ৪৮.৮৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসল  মুগডাল।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার  এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার ও হ্যাচারি (মুরগি) রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৮.৩২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪০৯.৩১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি।

শিল্প ও কলকারখানা কাফকো (কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড), সি ইউ এফ এল সার-কারখানা প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, নকশি কাঁথা, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, কাঠের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার  হাটবাজার ৫। মিন্নত আলী দোভাষী হাট ও কালু মাঝি হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য    ইউরিয়া সার, মাছ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩২.৩১% (গ্রামে ৩১.৭৪% এবং শহরে ৫৭.৪৩%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৬.৯৮%, পুকুর ৫.৬৩%, ট্যাপ ৩.০৮% এবং অন্যান্য ৪.৩১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৩.৪৪% (গ্রামে ৪২.৯৮% এবং শহরে ৬৩.৯৬%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৬.৩২% (গ্রামে ৪৬.৭৪% এবং শহরে ২৭.৮২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১০.২৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০।

এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস, আশা, প্রচেষ্টা, ওয়ার্ল্ড ভিশন।  [গোলাম কিবরিয়া ভূইয়া]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১,বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; আনোয়ারা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।