আধূনিক

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৮:০২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

আধূনিক (Adhunik)  মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ধূমপানের বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত নাম। প্রতিষ্ঠানের পুরোনাম ‘আমরা ধূমপান নিবারণ করি’। চারটি শব্দের প্রথম অক্ষর পর পর সাজিয়ে ‘আধূনিক’ শব্দের সৃষ্টি হয়েছে।

সুদীর্ঘকাল থেকে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে তামাক সেবনের রেওয়াজ চলে আসছে। তাই এ রীতি বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে প্রায় মিশে আছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও তামাক সেবনের রীতি প্রচলিত। আর্থিক দিক থেকে সমর্থ ব্যক্তিদের মধ্যে কিছুসংখ্যক চুরুট ও অবশিষ্টরা সিগারেট পান করে। অন্যদিকে দরিদ্র শ্রমিক শ্রেণির মানুষ ও গ্রামাঞ্চলের মানুষদের কাছে তামাক পাতায় বা নিম্নমানের সিগারেটের কাগজে মোড়ানো অপরিশোধিত তামাক, যা সাধারণত বিড়ি নামে পরিচিত, তা বেশ জনপ্রিয়। এদেশে ঐতিহ্যবাহী  হুঁকোর (hookah) প্রচলনও আছে। সচরাচর তিন ধরনের হুঁকো ব্যবহূত হয় পিতলের, নারিকেলের ও বাঁশের। গ্রামাঞ্চলে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি ধূমপানে অভ্যস্ত।

১৯৬০ সালের গোড়ার দিকে  ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ এ ধারণার জন্ম হয়। পরবর্তীকালে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এর স্বপক্ষে রায় দেয়। ফলে পশ্চিমা জগতে ধূমপান-বিরোধী একটি মনোভাব দানা বাঁধতে শুরু করে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতে ধূমপান-বিরোধী কঠোর মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ইউরোপসহ পশ্চিমা জগতের অন্যান্য অংশেও এ আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলিতে ধূমপান-বিরোধী চেতনা জাগ্রত হয় অপেক্ষাকৃত ধীরে, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এ বিষয়ে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে ১৯৭০ সালে ধূমপান-বিরোধী প্রথম সংগঠন হিসেবে ‘আধূনিক’ নামের এ প্রতিষ্ঠানের আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রতিষ্ঠানটি সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মিটিং ও মিছিল এবং রেডিও-টেলিভিশনে নানা কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে ধূমপানের অপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে। স্বল্পমাত্রায় হলেও প্রধানত বাংলাদেশ সরকার ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশেষ করে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন আধূনিককে আর্থিক সহায়তা দান করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন নগর ও শহরে আধূনিকের কার্যকরী ইউনিট রয়েছে, তবে অপেক্ষাকৃত ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলে এর কর্মকান্ড এখনও সীমিত পর্যায়ে রয়েছে। কাজেই সংগঠনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় গ্রামে বসবাসকারী বিপুলসংখ্যক মানুষ আধূনিকের ধূমপান-বিরোধী কর্মকান্ডের সুফল থেকে এখনও বঞ্চিত। এতদসত্ত্বেও, আধূনিক পরিচালিত কর্মকান্ড ও সরকারের গৃহীত ধূমপান-বিরোধী নানা পদক্ষেপ বাংলাদেশে, বিশেষ করে নগরে ও শহরে ধূমপান কিছু পরিমাণে হ্রাস করায় অবদান রেখেছে। বিগত দু দশক ধরে পুরুষদের, বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত উচ্চ আয়ের মানুষের মধ্যে সিগারেট পান বেশ কমে যেতে থাকে, কিন্তু লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের মধ্যে ধূমপান কমে নি। যদিও আধূনিক সিগারেট পানের প্রতিরোধে কার্যকরি অবদান রেখে চলেছে, কিন্তু অর্থবল ও জনবলের পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের আকার ও এর কাজের পরিধি উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলি নানা প্রলোভনমূলক ও উদ্ভাবনী উপায়ে তাদের উৎপাদিত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, সেখানে সামান্য পরিমাণ সম্পদ নিয়ে আধূনিকের মতো ছোট সংগঠনের প্রয়াস অসম প্রতিযোগিতার শামিল।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]

আরও দেখুন ক্যানসার, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞান