আখাউড়া উপজেলা

আখাউড়া উপজেলা (ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা)  আয়তন: ৯৯.২৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪৭´ থেকে ২৩°৫৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৭´ থেকে ৯১°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা, দক্ষিণে কসবা উপজেলা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা ও কসবা উপজেলা। আখাউড়া এক সময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। বর্তমানে আখাউড়া বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন। এ জংশনের সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা ও ময়মনসিংহের রেলযোগাযোগ রয়েছে।

জনসংখ্যা ১৩০৩১৯; পুরুষ ৬৬০০২; মহিলা ৬৪৩১৭। মুসলিম ১২২৪৪১, হিন্দু ৭৮৪৯ এবং অন্যান্য ২৯।

জলাশয় হাওড়া ও তিতাস  নদী  এবং পিপুলি বিল উল্লেখযোগ্য; জলমহাল ১৫।

প্রশাসন আখাউড়া থানা গঠিত হয় ২০ জুন ১৯৭৬ সালে এবং উপজেলায় উন্নীত হয় ১৯৮৩ সালে। আখাউড়া পৌরসভা সৃষ্টি হয় ১৯৯৯ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০৭ ১১৩ ৩২৩৭৪ ৯৭৯৪৫ ১৩১৩ ৫৫.৮৫ ৪৮.০০
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড সংখ্যা মহল্লার সংখ্যা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
৮.২২ ২৩ ৩২৩৭৪ ৩৯৩৮ ৫৫.৮৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আখাউড়া উত্তর ১৯ ১৪১ ৬৬১ ৬৪৮ ৪২.২২
আখাউড়া দক্ষিণ ৯০ ৩৪৩৯ ৫৩৮৫ ৫২১১ ৫২.২১
ধরখাড়- ৫৭ ৮০৮৭ ১৪৫৫৭ ১৪৬০০ ৪৫.৫৮
মানিয়ান্দ ৭৬ ৫৫৮৯ ১১৪৬৯ ১১৪১৬ ৫৪.৫৬
মগরা ৮৫ ৪৫৭৮ ১৩০৪৭ ১২৪৪৫ ৪৪.৭৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ খড়মপুর হযরত সৈয়দ আহমদ গেছুদারাজ কল্লা শহীদ (র.) মাযার, ছতুরা শরীফ বড় মসজিদ, মগরার মঠখোলা, মহারাজের কাচারী।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি  ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আখাউড়া ২নং সেক্টরের অধীন ছিল। এ সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্রগুলো হচ্ছে আখাউড়া, দেবগ্রাম, তারাগণ, চেকপোস্ট সড়ক ও দরুইন। দরুইনে ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল মুখোমুখি লড়াইয়ে সিপাহী মোস্তফা কামাল শহীদ হন। এ গ্রামেই বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের সমাধি অবস্থিত।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন মগরা গঙ্গাসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়ের গণকবর এবং আখাউড়া ত্রিপুরা সীমানাস্থ সেনারবাদী গণকবর।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৭৫, মন্দির ৭।

শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৫০.০%; পুরুষ ৫১.৯%, মহিলা ৪৮.২%। কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৫, কমিউনিটি স্কুল ৬, স্যাটেলাইট স্কুল ৬, মাদ্রাসা ১৮৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৫), বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), শহীদ স্মৃতি কলেজ (১৯৭২)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৪.২৩%, অকৃষি শ্রমিক ২.৭০%, শিল্প ০.৮০%, ব্যবসা ১৯.১৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.৩৬%, চাকরি ১০.১৬%, নির্মাণ ১.৩২%, ধর্মীয় সেবা ০.২৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৮.০১% এবং অন্যান্য ৭.৯৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫১.০২%, ভূমিহীন ৪৮.৯৮%।  শহরে ৩৪.০২% ও গ্রামে ৫৬.৮৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষিপণ্য  ধান, পাট, গম, আলু ও বিভিন্ন সবজি।

বিলুপ্তপ্রায় কৃষিপণ্য  তৈল ও ডাল জাতীয় শস্য।

প্রধান ফলফলাদি কাঁঠাল, লিচু,  নারিকেল, পেয়ারা, আম, জাম, কলা, বড়ই, পেঁপে।

শিল্প ও কলকারখানা করাতকল, রাইসমিল, ওয়েলমিল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, মৎস খাবার উৎপাদন কারখানা।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাশঁ ও বেতের কাজ উল্লেখযোগ্য।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খামার রয়েছে।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩২। উল্লেখযোগ্য: মোগড়া ও আখাউড়া বাজার এবং ধরখাড় মেলা ও ভাটামাথা কালীবাড়ির মেলা উল্লেখযোগ্য।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৫০ কিমি; নৌপথ ২১ নটিক্যাল মাইল; রেলস্টেশন ০৩।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩১.৫৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৭২%, পুকুর ০.৫৬%, ট্যাপ ০.৭৯% এবং অন্যান্য ৩.৩৯%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬১.৭৪% (গ্রামে ৫৯.৪১% এবং শহরে ৬৮.৪৯%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩০.৩৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৭.৯০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা হাসপাতাল ১, স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ১, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৫, পরিবার কল্যাণকেন্দ্র ৩, ক্লিনিক ৪, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৪।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা। [মোহাম্মদ মফিজ উদ্দিন]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; আখাউড়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।