অ্যান্টিবায়োটিক

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৮:৫২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotics)  অণুজীব ধ্বংসকারী বা এর বৃদ্ধি ও প্রজননে বাধাদানকারী মূলত অন্য কোনো অণুজীব নিঃসৃত প্রাকৃতিক পদার্থ, যদিও অধুনা এগুলো সাধারণত কৃত্রিম উপায়ে তৈরী হয়ে থাকে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় আজকাল অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ব্যাপক। ১৯২৮ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং সর্বপ্রথম লক্ষ্য করেন যে অসাবধানতাহেতু তার চাষকৃত (cultured in media) ব্যাকটেরিয়ার পাত্রে এক রকমের ছত্রাক জন্মেছে আর এর নিঃসৃত পদার্থে আশপাশের ব্যাকটেরিয়া মারা গেছে। তিনি ছত্রাক-নিঃসৃত দ্রব্যটির নাম দেন অ্যান্টিবায়োটিক। পরবর্তীতে এই নিঃসৃত পরিশোধন করে জীবাণুঘটিত রোগের চিকিৎসায় এটির সম্ভাব্য প্রয়োগের ব্যাপারে গবেষণা পরিচালিত হয় এবং দেখা যায় এটি মানুষের অনেক সংক্রামক রোগ সারাতে সক্ষম। ফলে দ্রব্যটি অচিরেই ব্যাপকভাবে চিকিৎসায় ব্যবহূত হতে থাকে এবং Penicillium notatum নামের ছত্রাক থেকে উৎপন্ন বিধায় নাম দেওয়া হয় পেনিসিলিন। এ যাবৎ আবিষ্কৃত অ্যান্টিবায়োটিকের সংখ্যা কয়েক হাজার আর প্রতি বছরই তালিকাতে নতুন নতুন নাম যোগ হচ্ছে।

অ্যান্টিবায়োটিক হলো দ্বিতীয় পর্যায়ের বিপাকলব্ধ বস্ত্ত (metabolites/ জন্মদাতা জীবাণুদের বৃদ্ধি ও প্রজননের জন্য এগুলি প্রয়োজনীয় নয়), যেগুলি খুব সীমিত সংখ্যক অণুজীবের মধ্যে উৎপন্ন হয়। সর্বাধিক পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক দ্রব্যের উৎপাদক হলো অ্যাক্টিনোব্যাকটেরিয়া (actinobacteria) নামের কিছু মাটিতে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া যারা মানুষ বা অন্য প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর নয়। এসব ব্যাকটেরিয়াই তিন-চতুর্থাংশের বেশি অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন করে থাকে, যদিও এককোষী ব্যাকটেরিয়া ও অসম্পূর্ণ ছত্রাক থেকেও যথেষ্ট সংখ্যক অ্যান্টিবায়োটিক উৎপন্ন হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এবং ফলে সারাবিশ্বে লক্ষ লক্ষ জীবন রক্ষা পাচ্ছে। আজ পর্যন্ত যথেষ্ট সংখ্যক অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত হলেও এদের অনেকগুলিই আবার মানুষ ও জীবজন্তুর জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত বিধায় চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়নি। বর্তমানে মানুষ ও বিভিন্ন পশুর চিকিৎসায় প্রায় ১৬০টি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহূত হয়। এগুলির মধ্যে আছে ব্যাকটেরিয়া থেকে স্বাভাবিকভাবে উৎপন্ন অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিবায়োটিক-এর কার্যকারিতা প্রতিরোধের সাধারণ সমস্যা এড়ানোর জন্য ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত সেগুলির উৎপাদন এবং কয়েকটি সংশ্লেষিত অ্যান্টিবায়োটিক। অ্যান্টিবায়োটিককে মূলত কার্যপদ্ধতি ও রাসায়নিক গঠনের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ করা হয়।

শিল্পোন্নত বিশ্বে চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহূত প্রায় সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকই বাংলাদেশে পাওয়া যায়। সাধারণভাবে অ্যান্টিবায়োটিক আমদানির ক্ষেত্রে সরকারি নীতি যথেষ্ট শিথিল আর এটা এজন্য যে, দেশে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব এবং পরিবেশে জীবাণুর উপস্থিতির পরিমাণ অত্যধিক। বাংলাদেশে বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারই মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে। এখনও দেশে মুরগির খামার বা গবাদি পশুর ক্ষেত্রে এ ঔষধের ব্যবহার খুবই সীমিত। বাংলাদেশে ব্যবহূত সব অ্যান্টিবায়োটিকই বিদেশি ঔষধ কোম্পানি থেকে আমদানিকৃত। সীমিত পরিমাণে ব্যবহূত দামি ও নামি ব্রান্ডের ঔষধগুলি বিপণনযোগ্য অবস্থায় আসে, কিন্তু সচরাচর ব্যবহূত অ্যান্টিবায়োটিক একত্রে প্রচুর পরিমাণে আমদানি হয়ে থাকে। যদিও কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনে হাত দিয়েছে বেশীরভাগ কোম্পানিই আসলে প্যাকিং প্রতিষ্ঠান। ঔষধ শিল্পখাতে স্থানীয়ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনের লক্ষ্যে কোনো গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয় না। ঔষধ প্রস্ত্ততের খাতগুলিতে গবেষণা ও উন্নয়নের ব্যাপারে উদ্যোগহীনতার প্রধান কারণ সরকার থেকে উৎসাহ উদ্দীপনার অভাব। আরেকটি বাস্তব কারণও আছে, অ্যান্টিবায়োটিকের সহজ প্যাকিং ও বিপণন বেশির ভাগ ঔষধ কোম্পানির জন্যই অত্যন্ত লাভজনক। এ পরিস্থিতি স্থানীয় উৎপাদন প্রচেষ্টাকে কার্যকরভাবে অবদমিত করে রাখে, কেননা স্বল্পমেয়াদি লাভের তুলনায় এক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে, বিশ্বায়নের বিস্তৃতির ফলে স্থানীয় উৎপাদন এবং গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগের প্রশ্নটি অধিক গুরুত্ব লাভ করবে বলে মনে করা হয়।

অ্যলার্জিজনিত সমস্যা ছাড়াও বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের বিশেষ করে দীর্ঘদিন ব্যবহারে ভিন্ন ভিন্ন পাশর্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যান্টিবায়োটিক-এর যৌক্তিক ব্যবহারের প্রসঙ্গটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহূত হয়ে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রোগীরা নিজেরাই এ ঔষধ ব্যবহার করে এবং পূর্বপরীক্ষা ও সংশ্লিষ্ট রোগজীবাণু শনাক্ত বা নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি এগুলির সংবেদনশীলতা নির্ণয় না করেই ব্যবস্থাপত্র লিখে দেওয়া হয়। কোনো রকমের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বা হাতুড়ে ব্যবস্থাপত্রে, এমনকি ক্রেতার মৌখিক চাহিদাতেই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি শহর ও গ্রামাঞ্চলে নিত্যদিনের ঘটনা। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিক কেনা হলেও প্রধানত অজ্ঞতার কারণে রোগীদের পক্ষে ব্যবহারবিধি মেনে চলা বা সম্পূর্ণ চিকিৎসাক্রম শেষ করা প্রায়শই সন্তোষজনক হয় না। এসবের ফলেই একটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক  প্রচলনের সঙ্গে ক্রমান্বয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষম (resistant) জীবাণুরও উদ্ভব ঘটে।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]