অও

অও আসাম অঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একটি উপজাতি। একসময় ত্রিপুরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামেও এদের বিস্তার ছিল। ১৯৩১ সালের আদমশুমারি অনুসারে অওদের লোকসংখ্যা ছিল ৩২,৭৭৫। বর্তমানে তাদের সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। এ উপজাতির মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে অধিক।

অও উপজাতি তিনটি শাখায় বিভক্ত- চোঙলি, মোঙসেন ও চঙকি। প্রতিটি শাখাই আবার একাধিক উপশাখায় বিভক্ত। অন্যান্য উপজাতির চেয়ে অওগণ আকৃতিতে বেশ লম্বা, গড়ে প্রায় পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি। এদের গায়ের রং তামাটে, কেশ কুঞ্চিত। দেহ যথেষ্ট লোমশ। অওদের নাক চ্যাপ্টা এবং মুখমন্ডল বিস্তৃত, কিছুটা মঙ্গোলীয়দের মতো।

অও পুরুষগণ সাধারণত স্বল্প কাপড় পরিধান করে থাকে। মেয়েদের পরিধেয় বস্ত্রের মাপ এক গজ থেকে দেড় গজ লম্বা ও বিশ থেকে ত্রিশ ইঞ্চি চওড়া। পরার কায়দা অনেকটা লেংটিরই মতো। অবিবাহিত মেয়েরা ফিতা দিয়ে বক্ষ বন্ধন করে। বিবাহিতা মেয়েদের বক্ষ থাকে উন্মুক্ত। উৎসবের সময় মেয়েরা বিচিত্র পোশাক পরে। পুরুষ ও নারী সবাই প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত লতাপাতা, চামড়া, পাখির পালক ও নানারকম পাথরের অলঙ্কার পরিধান করে থাকে।

অওগণ খুবই শান্তিপ্রিয়। প্রতিরোধ মনোভাবের অভাবের ফলে এরা প্রায়ই উর্বর এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে অনাবাদি পার্বত্য ভূমিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। তবে অওরা বেশ কলহপ্রিয়। কলহ এদের জন্য একটি বিনোদন বিশেষ।

অওগণ শিকারি নয়, কৃষিজীবী। এদের প্রধান খাদ্য ভাত। ধান-চাল ধন-সম্পত্তি সম্মানের পরিচায়ক। এরা  জুমচাষ প্রথায় জমি আবাদ করে। ধান ব্যতীত তুলা চাষও এদের মধ্যে ব্যাপক প্রচলিত। তুলা থেকে এরা নিজেরাই নিজেদের কাপড় বানিয়ে থাকে। অওগণ চোরাগর্ত খুঁড়ে হরিণ ও অন্যান্য প্রাণী শিকার করে থাকে। দলবদ্ধভাবে এরা বাঘ ও হাতি শিকার করে। অওরা প্রায় সর্বভুক।

অওগণের ধর্মে নৈতিকতা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এদের ধর্ম হচ্ছে কতিপয় পূজা-অর্চনা ও বলি প্রথার মধ্যে সীমাবদ্ধ। দেবতাকে তুষ্ট ও অপদেবতাকে প্রতিহত করার জন্য এরা অহরহ বলি দিয়ে থাকে। আত্মা, পরজন্ম, জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে এদের ধারণা খুবই সরল।

অওরা সমগোত্রীয়দের মধ্যে বিবাহ করে না। বিবাহ সংঘটিত হওয়ার আগে একজন অও পাত্র প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত পাত্রীর সঙ্গে কিছুকাল সহবাস করে। পছন্দ হলে পাত্রীর মা-বাবা পাত্রপক্ষের নিকট বিবাহের প্রস্তাব পাঠায়। পছন্দ না হলে প্রস্তাব আসার আগেই পাত্রীর সঙ্গ ত্যাগ করতে হয়।

অওদের সামাজিক সংগঠন বয়সের ওপর নির্ভর করে। সমস্ত গ্রামের লোকদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করা হয়। দলের সদস্যরা সমান বা কাছাকাছি বয়সের হয়ে থাকে। প্রত্যেক দলের নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে। চাষ, শিকার, উৎসব, ভোজ, বাড়ি নির্মাণ, আত্মরক্ষা প্রভৃতি কাজ এক একটি দলের ওপর ন্যস্ত থাকে।  [শাহীদা আখতার]