হোসেন, এম.এ.এম মুহতাশাম

এম.এ.এম মুহতাশাম হোসেন

হোসেন, এম.এ.এম মুহতাশাম (১৯২৯-২০২১) বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ। তিনি ভারতের কলকাতায় ১৯২৯ সালের ১লা আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম অধ্যাপক কাজী আকরাম হোসেন এবং মাতার নাম আমেনা শরফুন্নেসা।

১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় অনার্স ডিগ্রিতে প্রথম শ্রেণী পেয়ে রাজা কালী নারায়ণ বৃত্তি লাভ করেন। পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এস.সি পরীক্ষায় পুনরায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে তিনি ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এই ডিগ্রির জন্য তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘পার্টিকেল ফিজিক্স’। তিনি লিভারপুল সিনক্রো-সাইক্লোট্রন ব্যবহার করে মুওন ক্ষয়ের বৈশিষ্ট্য অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে, তিনি ইংল্যান্ডের হারওয়েলে পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে দুই বছর কাজ করেন। সেখানে তিনি ভ্যান ডি গ্রাফ এক্সিলারেটরের সাথে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে গবেষণা চালিয়ে যান।

ড. হোসেন ১৯৬৪ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর ঢাকার পরমাণু শক্তি কেন্দ্রে নবনির্মিত ৩ MeV ভ্যান ডি গ্রাফ এক্সিলারেটরের সাথে কাজ করেছেন এবং নিউট্রন পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর গবেষণা কার্যক্রমকে কেন্দ্রীভুত করেছেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তেজস্ক্রিয় উৎস থেকে এক্সরে এবং নিউট্রন ব্যবহার করে মৌলিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কাজ শুরু করেন। তাঁর গবেষণার প্রধান আগ্রহ ছিল সৌর ও বায়ুশক্তি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের এনার্জি পার্ক প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে গবেষণা ও প্রদর্শনী কার্যক্রমে আত্মনিয়োগ করেন।

ড. মুহতাশাম হোসেন ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার প্রভাষক নিযুক্ত হন। ১৯৬০ সালে তিনি পদার্থবিদ্যা বিভাগের রিডার এবং ১৯৭০ সালে পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হন। তিনি ১৯৮৪ সালে পদার্থবিদ্যার বোস অধ্যাপক নিযুক্ত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক (১৯৮৩-১৯৯০) এবং বিজ্ঞানের ডিন (১৯৮৩-১৯৮৫) ছিলেন। তিনি ১৯৯০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে আরও পাঁচ বছরের জন্য পুনরায় নিয়োগ পান।

ড. মুহতাশাম হুসাইন ছিলেন ‘দ্য ফিজিসিস্ট- জার্নাল অফ দ্য ফিজিক্যাল সোসাইটি অফ বাংলাদেশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টাডিজ জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য ছিলেন।

প্রফেসর হোসেন বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এবং বাংলাদেশ ফিজিক্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ ফিজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি এবং ১৯৯১ সাল থেকে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সোলার এনার্জি সোসাইটির সভাপতি ছিলেন।

অধ্যাপক মুহতাশাম হোসেন ৯ই জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। [ইয়ারুল কবীর]