হেপারিন

হেপারিন (Heparin) হেপারিন বা রক্তথিনার প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এমন একটি গ্লাইকোসামিনো গ্লাইকান যার মধ্যে প্রচুর সালফেট গ্রুপ সংযুক্ত আছে এবং যেটিতে জীবজগতে বিদ্যমান এমন যেকোনো অণুর তুলনায় অধিক ঋনাত্মক চার্জ ঘনত্ব রয়েছে। হেপারিন একটি প্রয়োজনীয় ঔষধ হিসেবে রক্ত জমাট না বাঁধার জন্য ব্যবহার করা হয়, যার কাজ হচ্ছে রক্তজমাট হতে বাধা দেয়া। বিশেষ করে হার্টঅ্যাটাক এবং অস্থিতিশীল এনজাইনার চিকিৎসায় ও এটি ব্যবহার করা হয়। হেপারিন ত্বকের নিচে অথবা কোনো শিরায় ইঞ্জেকশন দিয়ে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। হেপারিন রক্তপাত হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়, যেটা মারাত্মক বা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারও যদি অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাত অথবা রক্তে অণুচক্রিকার পরিমাণ খুবই কম থাকে তবে তাদের এটি ব্যবহার করা উচিৎ নয় কারণ এটি ‘হেপারিন-জনিত অণুচক্রিকার ঘাটতি’ সৃষ্টি করতে পারে। এটি শরীরে ক্ষত, পাকস্থলী বা পৃষ্ঠদেশে প্রচ- ব্যথা, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, প্রস্রাব বা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া, কফের সাথে রক্ত বের হওয়া ইত্যাদি ঘটাতে পারে, এবং জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রয়োজন হতে পারে।

কিছু ঔষধ, যেমন অ্যাসপিরিন অথবা অন্য কোন স্টেরয়েড-নয় এমন প্রদাহরোধক ঔষধ যার মধ্যে রয়েছে ইবুপ্রফেন, ডাইক্লোফেনাক, ইন্দোমেথাসিন, মেলক্সিকাম, কেটোপ্রফেন, মেফেনামিক এসিড ইত্যাদি হেপারিন গ্রহণ করছেন এমন কোন ব্যক্তির শরীরে রক্তপাত হবার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে। যাদের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্ত চাপ, পাকস্থলী বা অন্ত্রের ব্যাধি, যকৃতের রোগ অথবা কিডনির সক্ষমতা দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে হেপারিন গ্রহণ করার পূর্বে অধিকতর সতর্ক হতে হবে। গর্ভাবস্থায় ও বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় হেপারিন ব্যবহার করা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ মনে করা হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীর ব্যাসওফিলওমাস্টসেল নামক কোষ হেপারিন উৎপন্ন করে, সচরাচর এটা ঐ সকল কোষের সিক্রেটরি গ্রানুলসের ভিতর জমা থাকে এবং টিস্যুতে আঘাত এসেছে যেখান থেকে শুধুমাত্র সেখানে বিমুক্ত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জমাটরোধক কাজ নয়, বরং হেপারিনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যে সমস্ত স্থানে অনুপ্রবেশকারী ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য বহিরাগত উপাদান রয়েছে সেখানে সুরক্ষা প্রদান করা, যেমন- অ্যালার্জেন। [লায়লা নূর ইসলাম]