হালদার, গোবিন্দ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

("right|thumbnail|200px|গোবিন্দ হালদার '''হালদার, গোবিন্দ''' (১৯৩০-২০১৫) গীতিকার ও কবি। ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’; ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’; ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠে..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১২ নং লাইন: ১২ নং লাইন:
মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের ২০শে অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গোবিন্দ হালদার-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালের ১৭ই জানুয়ারি গোবিন্দ হালদার মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম পারুল হালদার এবং কন্যা গোপা হালদার।  [মনিরুজ্জামান শাহীন]
মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের ২০শে অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গোবিন্দ হালদার-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালের ১৭ই জানুয়ারি গোবিন্দ হালদার মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম পারুল হালদার এবং কন্যা গোপা হালদার।  [মনিরুজ্জামান শাহীন]


[[en:Halder, Govinda]]
[[en:Halder, Govind]]

১৭:০৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

গোবিন্দ হালদার

হালদার, গোবিন্দ (১৯৩০-২০১৫) গীতিকার ও কবি। ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’; ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’; ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল’সহ মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং মুক্তিযুদ্ধত্তোর বাঙালিদের অনুপ্রেরণাদানকারী অসংখ্য গানের রচিয়তা। তিনি ১৯৩০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত যশোর জেলার বনগাঁয় (পশ্চিম বাংলা) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীকালে তিনি আয়কর বিভাগের চাকরিতে যোগদান করেন এবং ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ভারতের আকাশবাণী বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার ছিলেন।

পড়াশুনা অবস্থায় তিনি বাংলা কবিতা এবং গান রচনায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তিনি প্রায় ৩,৫০০টি সেমি-ক্লাসিক্যাল, লোকসংগীত, বাউল, কীর্তন, শ্যামাসংগীত ও আধুনিক বাংলা গান রচনা করেছেন। তাঁর রচিত প্রথম কবিতা ‘আর কতদিন’ এবং প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘দূর দিগন্তে’। চাকরিতে কর্মরত অবস্থায় তিনি বন্ধু কামাল আহমেদের অনুপ্রেরণায় এবং উৎসাহে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কয়েকটি গান রচনা করেন। কামাল আহমেদ তাঁকে স্বাধীন বাংলা বেতারের কামাল লোহানীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় তিনি ১৫টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গানের একটি খাতা কামাল লোহানীর হাতে তুলে দেন। এসব গানের মধ্যে রয়েছে ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’, ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘চলো বীর সৈনিক’, ‘বাংলার মাটি’, ‘লেফট রাইট লেফট রাইট’, ‘চলো বীর সৈনিক’ প্রভৃতি। ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষদিকে গোবিন্দ হালদার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান করেন। জুন মাস থেকে তাঁর দেশাত্মবোধক গানগুলো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এবং অনেক গান অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং দূরদর্শনে প্রচারিত হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত এসব চিরন্তন গান স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশের জনগণের জন্য অন্তহীন উদ্দীপনার উৎস ছিল।

গোবিন্দ হালদার রচিত ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ গানটি মুক্তিযুদ্ধ- পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সেরা সংগীতে পরিণত হয়। নব্বইয়ের দশক থেকে এটি বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচয়জ্ঞাপক বাজনা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ গানে সুর দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সুরকার কণ্ঠশিল্পী আপেল মাহমুদ এবং মূল কণ্ঠ দিয়েছিলেন স্বপ্না রায় ও সহশিল্পীরা। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পরপরই সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে এ গানটি প্রচারিত হয়। তাঁর রচিত গানগুলোর মধ্যে প্রখ্যাত সুরকার সমর দাস সুরারোপিত ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল’ গানটি স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে প্রথম প্রচারিত হয়।

২০০৬ সালের ১৪ই এপ্রিল থেকে ৩রা মে পর্যন্ত বিবিসি বাংলার শ্রোতারা তাদের বিচারে যে ৫টি সেরা গান নির্বাচন করেন, তার ভিত্তিতে বিবিসি তৈরি করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি গানের তালিকা। এর মধ্যে দুটি গান ছিল গোবিন্দ হালদারের লেখা। তাঁর ঐ গান দুটি হলো- ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ এবং ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে’।

গোবিন্দ হালদার জীবনের শেষপ্রান্তে এসে চরম আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করেন। মাথাগোঁজার ঠাঁই না থাকায় এসময় তিনি হাওড়া জেলার বকুলতলার নাজিরগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি কিডনিজনিত অসুস্থতার জন্য তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পশ্চিমবঙ্গ সফরের সময় ২২শে ডিসেম্বর তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান। বাংলাদেশ বান্ধব এই গীতিকারের অসুস্থতা ও আর্থিক সংকটের কথা শুনে তাঁর চিকিৎসার সকল দায়িত্বভার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রহণ করেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের ২০শে অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গোবিন্দ হালদার-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালের ১৭ই জানুয়ারি গোবিন্দ হালদার মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম পারুল হালদার এবং কন্যা গোপা হালদার। [মনিরুজ্জামান শাহীন]