হাটহাজারী উপজেলা

হাটহাজারী উপজেলা (চট্টগ্রাম জেলা)  আয়তন: ২৪৬.৩২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°২৪´ থেকে ২২°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪১´ থেকে ৯১°৫৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ফটিকছড়ি উপজেলা, দক্ষিণে পাঁচলাইশ ও চাঁদগাঁও থানা, পূর্বে রাউজান উপজেলা, পশ্চিমে সীতাকুন্ড উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪৩১৭৪৮; পুরুষ ২১৫২০১, মহিলা ২১৬৫৪৭। মুসলিম ৩৯০০৫৮, হিন্দু ৩৬২১২, বৌদ্ধ ৪৯৪৯, খ্রিস্টান ১৪৪ এবং অন্যান্য ৩৮৫।

জলাশয় হালদা নদী এবং আলাওল ও মোহসোনিয়া বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন হাটহাজারী থানা গঠিত হয় ১৯২৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৫ ৪৮ ৫৫ ৬২৬৪৮ ৩৬৯১০০ ১৭৫৩ ৬৮.৯ ৬৩.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.৩৭ ৬২৬৪৮ ৬৬৮৬ ৬৮.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উত্তর মাদার্শা ৯৫ ৩০৩৭ ১০৪৮০ ১১৫৭৫ ৬৮.৫
গড়দুয়ারা ৪৭ ১২৮২ ৪৮৬৯ ৫৪১৮ ৬৫.৯
গুমান মর্দন ৫৩ ২৯৩২ ৫৭৪৫ ৬৯৭২ ৬৩.৯
চিকনদন্ডী ১৭ ২৭৬১ ২৩৫৩০ ২৪০৪৩ ৬৬.৬
ছিবাতলী ১১ ১০৯২ ৩৫৮২ ৪৩০৭ ৬৮.১
দক্ষিণ মাদার্শা ২৩ ২৪১৬ ১১১২৬ ১১২৭৮ ৭২.৫
ধলই ২৯ ৪৮৭০ ১৭৮৮৩ ১৯১৪৫ ৫৮.৭
নাঙ্গলমোড়া ৭৭ ৪৬২ ৩২৪৯ ৩৮৪৫ ৬৭.৮
ফতেহপুর ৩৫ ৫৬৬৮ ২২৭৫০ ২১১৭৯ ৬৪.২
ফরহাদাবাদ ৪১ ১২৩৮৭ ১৩৫৯৩ ১৪৮৬৮ ৫৯.৬
বুড়িরচর ১০ ৯৪৬ ১১৯৩৬ ১২৭১০ ৬৯.১
মির্জাপুর ৭১ ৬৪৫১ ২০১১৯ ১৯৯৩৩ ৫০.০
মেখল ৬৫ ২৮৬৭ ১৬০০০ ১৪৪৩১ ৭২.০
শিকারপুর ৮৯ ১৭০২ ১০৯৫০ ১১৬০৭ ৬৭.০
হাটহাজারী ৫৯ ৫৯৬২ ৩৯৩২৯ ৩৫২৩৬ ৬০.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ আলাওলের মসজিদ (১৪৭৩-৭৪), ফকির মসজিদ (১৪৭৪-৮০), অলি খাঁ মসজিদ (১৭১৪-১৯), হামজা খাঁ মসজিদ (১৬৮২), পাঁচকড়ি চৌধুরি বাড়ি, লক্ষ্মী সাহার জমিদার বাড়ি।

ঐতিহাসিক ঘটনা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে জালালাবাদের যুদ্ধ এক যুগান্তকারী ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৮ এপ্রিল ১৯৩০ সালে জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবী সূর্যসেন ও অনন্ত সিং-এর দলের সঙ্গে ব্রিটিশ বাহিনীর এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সতের শতকে মালকা বানু ও মনু মিয়ার বিয়ে এ অঞ্চলে স্মরণীয় হয়ে আছে। এ বিয়ের কাহিনী নিয়ে বহু লোকজ ছড়া, কবিতা ও পালা গান রচিত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে নাজিরহাট বাসস্টান্ড এলাকায় পাকবাহিনী ১১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। হাটহাজারী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, মদুনাঘাট পাওয়ার স্টেশন, নাজিরহাট বাসস্ট্যান্ড, কটিরহাট প্রভৃতি স্থানে অপারেশন পরিচালনা করে। উপজেলায় ১টি বধ্যভূমি ও ১টি গণকবরের (নাজিরহাট বাসস্ট্যান্ড) সন্ধান পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সম্মুখে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন হাটহাজারী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৪১০, মন্দির ৪০, মাযার ২০, প্যাগোডা ১৫, সেবাশ্রম ৫, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সুলতান নসরতশাহ মসজিদ, হেলাল শাহী মসজিদ (চতুর্দশ শতক), হাটহাজারী মসজিদ, মির্জাপুর জগন্নাথ আশ্রম, ভজন কুঠির, ব্রজধাম মন্দির, বিশ্বশান্তি প্যাগোডা।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৩.৫%; পুরুষ ৬৫.০%, মহিলা ৬২.০%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫৩, কিন্ডার গার্ডেন ১৯, এতিমখানা ২০, মাদ্রাসা ১৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৬), নাজিরহাট কলেজ (১৯৪৯), হাটহাজারী কলেজ (১৯৬৮), ফতেয়াবাদ কলেজ (১৯৭০), কুয়াইশ বুড়িশ্চর শেখ মোহাম্মদ সিটি কর্পোরেশন ডিগ্রি কলেজ (১৯৭৫), ফতেয়াবাদ আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৪), হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), ফতেয়াবাদ মহাকালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৩), নাজিরহাট কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যলয় (১৯৫৪), আকবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), ছিবাতলী গাউছিয়া মঈনীয়া আলীয়া মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: হাটহাজারী বার্তা, ছড়া পত্রিকা; মাসিক: হাটহাজারী কণ্ঠ; অবলুপ্ত: দৈনিক পূর্ব পাকিস্তান (১৯২১), যুগের আলো (১৯২৩), সৃজনশীল সাহিত্য (১৯৮৮)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান জাদুঘর ১, নাট্যমঞ্চ ১, নাট্যদল ১, সিনেমা হল ১, ক্লাব ১২২, মহিলা সংগঠন ২।

দর্শনীয় স্থান উদালিয়া চা বাগান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ১৬.৭৭%, অকৃষি শ্রমিক ২.৬৬%, শিল্প ০.৯৬%, ব্যবসা ১৭.৪৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.৫৪%, চাকরি ২৩.৮%, নির্মাণ ১.৯১%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১৪.০৫% অন্যান্য ১৬.৪২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৫.৯৩%, ভূমিহীন ৫৪.০৭%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, বেগুন, টমেটো, বাদাম, সরিষা, মিষ্টি আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  গম, ভূট্টা, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১, গবাদিপশু ২৭, হাঁস-মুরগি ১৩৭, গবাদিপশু প্রজনন কেন্দ্র ৩, হ্যাচারি ২০৬।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৩১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৪০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৪১ কিমি; রেলপথ ১৯ কিমি; নৌপথ ৩০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বিস্কুট ফ্যাক্টরি ১, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ১, পেপারমিল ১, পোশাক তৈরি কারখানা ২, ওয়েল্ডিং কারখানা ৩, ময়দাকল ২৭, বরফকল ১৮, ধানকল ৩২, করাতকল ২৫, মসলাকল ১৩, আচার শিল্প ৪।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠের কাজ, সেলাই কাজ, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪৪, মেলা ৮। হাটহাজারী বাজার, আমান বাজার, নাজির হাট, কাটির হাট, সরকার হাট, নন্দীর হাট, চৌধুরী হাট, লালিয়ার হাট ও নজুমিয়া হাট এবং মন্দাকিনী মেলা (ফরহাদাবাদ), মির্জাপুর বৈশাখী মেলা, চিকনন্দন্ডী সূর্যখোলা মেলা, রুদ্র মেলা, চৈত্র সংক্রান্তি মেলা, পৌষ সংক্রান্তি মেলা ও জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মেলা উল্লেখযোগ্য।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮৯.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ ঐতিহাসিক জালালাবাদ পাহাড়, রাজবাইজ্যা টিলা, নাচইন্যা টিলা।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭৪.০%, ট্যাপ ২০.৩% এবং অন্যান্য ৫.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮০.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৭.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ১.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমিউনিটি সেন্টার ৫, পরিবার  স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্র ৮, মাতৃকল্যাণ কেন্দ্র ১, ক্লিনিক ২৩।

এনজিও আশা, কেয়ার, অন্বেষা, উত্তরণ।  [সৈয়দ শাহজাহান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; হাটহাজারী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।